Image description
নীতি-নৈতিকতার শিক্ষা ছাড়া ধর্ষণ কমবে না, করোনার মধ্যে সবচেয়ে বেশি নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটে, পর্ন সাইটগুলো বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে

দেশে ধর্ষণ বন্ধে সরকার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান করেছিল। কিন্তু ওই আইনেও কাজ না হওয়ায় ২০২০ সালে মৃত্যুদণ্ডের বিধান তৈরি করে সরকার। তাতেও কাজ হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইন্টারনেটের পর্ন সাইটগুলো বন্ধ করা এবং নীতি-নৈতিকতার শিক্ষা দেওয়া ছাড়া ধর্ষণের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না।

২০২০ সালে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সারা দেশে লকডাউন চলছিল। ছিল কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা। এ অবস্থায়ও কমেনি ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন। বরং পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী গত পাঁচ বছরের মধ্যে করোনার সময় ২০২০ সালে সবচেয়ে বেশি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটে।

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী ২০১৯ সালে   দেশে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটে ২১ হাজার ৭৬৪টি, ২০ সালে ২২ হাজার ৫১৭, ২১ সালে ২২ হাজার ১৩৬, ২২ সালে ২১ হাজার ৭৬৬, ২৩ সালে ১৮ হাজার ৯৪১টি সর্বশেষ গত বছর ঘটে ১৭ হাজার ৫৭১টি।

পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে, বাংলাদেশ যেন ধর্ষকের এক অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। শহরে, গ্রামে, পাহাড়ে, সমতলে, ঘমর-বাইরে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নৃশংস নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন নারী। সেই নারী যে পরিচয়েরই হোক না কেন, ধর্ষকের নোংরা হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না তাঁরা।

চলতি মাসের গত আট দিনে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ধর্ষণের খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার মাগুরায় বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে আট বছরের শিশু ধর্ষণের ঘটনাটি সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে। সেই শিশু এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে সিএমএইচে। এ ছাড়া গতকাল শনিবার চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে সমুদ্রসৈকতে বেড়াতে গিয়ে গণধর্ষণের শিকার হয়েছে এক কলেজ শিক্ষার্থী। শনিবার দুপুর ১টার দিকে মুরাদপুর ইউনিয়নের গুলিয়াখালী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

পরে স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে সীতাকুণ্ড থানায় খবর দেয়। গত শুক্রবার মুন্সীগঞ্জে মুক্তারপুর এলাকায় ৮ ও ১০ বছর বয়সী দুই শিশুকে খাবার ও বেলুন কিনে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঢাকার আশুলিয়ায় বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে এক নারীকে ধর্ষণ এবং পাঁচ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে নূরুল আমিন নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে রাকিব হোসেনের বিরুদ্ধে প্রেমিকাকে (১৬) ঘরে একা পেয়ে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে।

ফেব্রুয়ারি মাসেও ধর্ষণের অনেক খবর পাওয়া যায়। এর মধ্যে ২৪ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে নানার বাড়ি বেড়াতে এসে দ্বিতীয় শ্রেণির মাদরাসা শিক্ষার্থী ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ ছাড়া পটুয়াখালীর বাউফলে এসএসসি পরীক্ষার্থীকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া যায়। কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার শ্রীনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়। টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে শিক্ষাসফরের চারটি সু্কলবাসে ডাকাতির পাশাপাশি তিনজন ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ রয়েছে। শেরপুরের নকলায় এক কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় থানা ঘেরাও ও নকলা-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ হয়েছে। ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী ইউনিক রোড রয়েলস নামের চলন্ত বাসে ডাকাতি ও নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটেছে। রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলায় মহান শহীদ দিবসে শ্রদ্ধা জানাতে ফুল সংগ্রহ করতে যাওয়া এক সু্কলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. আমিনুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, আমাদের সমাজে, পরিবারে, স্কুল-কলেজে এখন নীতি-নৈতিকতার শিক্ষা দেওয়া উঠে গেছে। আইন করে ধর্ষণের মতো অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। ধর্ষণ কমাতে নীতি-নৈতিকতার শিক্ষার বিকল্প নেই।

এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, সবার হাতেই মোবাইল ফোন থাকায় পর্নোগ্রাফি দেখা সহজ হয়ে উঠেছে। ধর্ষণ প্রবণতার জন্য এই পর্নোগ্রাফি দায়ী। অভিভাবকদের উচিত তাঁর সন্তান মোবাইল ফোনে কী দেখছে তা খেয়াল রাখা। তা না হলে নিজের সন্তানকে অপরাধ থেকে দূরে রাখা কঠিন হবে।

কঠোর আইন করা হয় : ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে একজন গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর শুরু হয় আন্দোলন। বিভিন্ন সমাবেশে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান প্রচলনের দাবি তোলা হয়। এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর মন্ত্রিসভার বৈঠকে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে আইনটির সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। এই সংশোধনীর কারণে বাংলাদেশে ধর্ষণের হার কমবে বলে আশা করেছিলেন ওই সময়ের মন্ত্রীরা।