Image description

উচ্চ কর হার ও নীতি সহায়তা না থাকায় বৈশ্বিক টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ হারাচ্ছে। অথচ সরকারের সহযোগিতা পেলে এখানে বিপুল পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগ আসার সুযোগ রয়েছে। বিশ্বব্যাপী মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিত্বকারী একটি অলাভজনক সংস্থা জিএসএম-র এক প্রতিবেদনে এমন কথা বলা হয়েছে।

গত সোমবার স্পেনের বার্সেলোনায় চার দিনব্যাপী বৈশ্বিক মোবাইল সম্মেলনে শুরু হয়েছে। সম্মেলনে বিশ্বের ২০০টি দেশ থেকে ১ লাখ ২৬ হাজারেরও বেশি মানুষ অংশ নিচ্ছেন। এই সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মোবাইল সেক্টরের চিত্র তুলে ধরে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশ বিষয়ে প্রতিবেদন বলা হয়েছে, নেপাল ইন্টারনেটের উপর ২৬ শতাংশ, শ্রীলঙ্কা ২৩ শতাংশ, ভারত ১৮ শতাংশ, ফিলিপাইন ১২ শতাংশ এবং ইন্দোনেশিয়া ১১ শতাংশ কর রয়েছে। অথচ বাংলাদেশে ৩৯ শতাংশ। এর মধ্যে ২১ শতাংশ সেক্টর-নির্দিষ্ট করের এবং ১৮ শতাংশ ভ্যাটের অন্তর্ভুক্ত, যা ডিজিটাল বৈষম্যকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে। বাংলাদেশে মোবাইল খাতের বিকাশে নীতি সংস্কারবিষয়ক ঐ প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশের টেলিকম সেক্টর অতিরিক্ত আর্থিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে অন্যান্য শিল্পের তুলনায় উচ্চ করপোরেট আয়কর হার অন্তর্ভুক্ত। প্রকাশ্যে ব্যবসা করা টেলিকম কোম্পানিগুলোকে ৪০ শতাংশ হারে কর দিতে হয়, যেখানে অ-সরকারিভাবে ব্যবসা করা কোম্পানিগুলোকে ৪৫ শতাংশ হারে কর দিতে হয়। এতে আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতকে বিনিয়োগের জন্য আকর্ষণীয় করে তুলতে নির্দিষ্ট নীতিমালার সংস্কার প্রয়োজন। পরিচালন ব্যয় বৃদ্ধির কারণে সেবার খরচ বেড়েছে এবং গ্রাহক কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না।

ভিওনের গ্রুপ সিইও কান তেরজিওগ্লো ইত্তেফাককে বলেন, ‘সিম ট্যাক্সের কথাই ধরুন, এটা অন্য কোথাও নেই। আমরা কেন ইন্টারনেট সংযোগকে আরো কঠিন ও ব্যয়বহুল করে তুলব! সরকার বিভিন্নভাবে আমাদের কাছ থেকে ৭০ শতাংশ কর আদায় করে। এরকম পরিস্থিতি বিশ্বের আর কোথাও নেই। সরকারের উচিত করের হার কমানো এবং সেই অনুযায়ী সেবা নিশ্চিত করা।’  স্টারলিংক বাংলাদেশে আসছে, এর সঙ্গে ভিওনের অংশীদারিত্বের কথা শোনা যাচ্ছে, বিষয়টি আসলে কী? জানতে চাইলে কান তেরজিওগ্লো ইত্তেফাককে বলেন, ‘ইউক্রেনে স্পেসএক্স ও স্টারলিংকের সঙ্গে আমাদের অংশীদারিত্ব রয়েছে। সেখানে স্যাটেলাইট থেকে সরাসরি ডিভাইসে এলটিই সিগন্যাল গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। এখানে কানেক্টিভিটি সরাসরি ডিভাইসের সঙ্গে সম্পর্কিত। আমরা এধরনের চুক্তি ইউক্রেনের ক্ষেত্রে করেছি। চাইলে এটা অন্যান্য দেশেও করা সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে আমাদের ৫ মেগাহার্টজের স্পেকট্রাম প্রয়োজন, যেটা ইউক্রেনে সাশ্রয়ী। কিন্তু এখানে আমাকে এটার জন্য ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করতে হবে। ফলে, বাংলাদেশে সরকার আমাদের জরুরিসেবার ব্যবহারের জন্য ৫ মেগাহার্টজ না দেওয়া পর্যন্ত আমাদের পক্ষে এই সেবা চালু করা সম্ভব হবে না।’

বৈশ্বিক মোবাইল সম্মেলনে যোগ দিতে আসা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারী বার্সেলোনায় ইত্তেফাককে বলেন, ‘আমরা পলিসিগুলো সংস্কার করছি। বৈশ্বিক মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনা চলছে। তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে আহ্বান জানানো হয়েছে।’