Image description
বিভাগ ও জেলায় প্রাথমিক শিক্ষার নতুন টাস্কফোর্স কমিটি, উপজেলা শিক্ষা কমিটি পুনর্গঠনের নির্দেশ

বর্তমানে দেশে প্রাথমিক শিক্ষায় পাসের হার খুবই সন্তোষজনক। তার পরও শিক্ষার মান নিয়ে সমালোচনার শেষ নেই। ভর্তির হার ৯৮ ভাগ হলেও এই শিশুরা কতটা মানসম্মত শিক্ষা অর্জন করছে সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশ্বব্যাংকের এক জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশের ৬৫ ভাগ শিক্ষার্থী বাংলাই পড়তে পারে না। ইংরেজি ও গণিতে দুর্বলতা তার চেয়েও বেশি। দুর্বল শিক্ষার্থীদের কাছে পঠন প্রক্রিয়া সহজ করে তুলতে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কিন্তু বেশির ভাগ শিক্ষকের সেই প্রশিক্ষণ নিয়মিত হয় না। বাংলাদেশের ৫০ শতাংশ প্রাথমিক শিক্ষকের বছরের পর বছর কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ হয় না। বাংলাদেশে প্রশিক্ষিত শিক্ষকের এই হার এশিয়ায় মধ্যে সবচেয়ে কম। ইউনেস্কোর গবেষণায় এমন তথ্য জানা গেছে। এমন অবস্থার মধ্যে প্রাইমারির শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি দূরীকরণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রাথমিক শিক্ষার বিভাগ ও জেলার টাস্কফোর্স কমিটি সংশোধন করে পুনর্গঠনের নির্দেশনা এবং এর কার্যপরিধি পুনর্নির্ধারণ করে দিয়েছে মন্ত্রণালয়। বিভাগীয় কমিশনারকে সভাপতি ও প্রাথমিক শিক্ষার বিভাগীয়

উপপরিচালককে সদস্যসচিব করে বিভাগীয় টাস্কফোর্স এবং জেলা প্রশাসককে সভাপতি ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে সদস্যসচিব করে জেলা টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

শিক্ষা অধিদপ্তর ও ইউনিসেফের ‘ন্যাশনাল স্টুডেন্ট অ্যাসেসমেন্ট ২০২২’ জরিপে উঠে এসেছে, তৃতীয় শ্রেণির ৫১ শতাংশ ও পঞ্চম শ্রেণির ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী বাংলায় দুর্বল। তাদের মান তৃতীয় শ্রেণির উপযোগী নয়। এর পাশাপাশি তৃতীয় শ্রেণির প্রায় ৬১ শতাংশ ও পঞ্চম শ্রেণির ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী গণিতে দুর্বল। তাদের গণিতের দক্ষতা তৃতীয় শ্রেণির উপযোগী নয়।

গতকালের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বিভাগীয় পর্যায়ে সরকারি, বেসরকারি, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো কর্তৃক পরিচালিত লার্নিং সেন্টার ও শিশু কল্যাণ ট্রাস্ট কর্তৃক পরিচালিত সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার সার্বিক অবস্থা ও অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা করবে বিভাগীর টাস্কফোর্স। জেলার প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার মানোন্নয়নে ব্যবস্থা গ্রহণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জেলা টাস্কফোর্স কমিটিকে। বিভাগীয় বা মহানগরের প্রাথমিক শিক্ষা টাস্কফোর্স কমিটিতে সদস্য হিসেবে থাকবেন রেঞ্জ ডিআইজি, বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য), স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, এলজিইডির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের (সার্কেল) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, বিভাগভুক্ত সব জেলায় জেলা প্রশাসক এবং শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের (সার্কেল) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী। এই টাস্কফোর্স সরকারি, বেসরকারি, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো কর্তৃক পরিচালিত লার্নিং সেন্টার ও শিশু কল্যাণ ট্রাস্ট কর্তৃক পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন ও মনিটরিংয়ের জন্য বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে মনিটরিং টিম গঠন করবে। প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠাবে। বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সব উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের যথাযথ বাস্তবায়নের তদারকি করবে। প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নের জন্য নতুন নতুন ধারণা ও উদ্যোগ গ্রহণ এবং প্রয়োগ করবে। প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যায়ে সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়ে শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের সম্পৃক্ত ও উদ্বুদ্ধ করবে। বিদ্যালয়ে ঝরে পড়া রোধ, শিখন শেখানো কাজের উন্নয়ন, যথাযথ মনিটরিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিরূপণ ও দূরীকরণে কার্যক্রম গ্রহণ করবে। প্রাথমিক পর্যায়ের বেসরকারি বিদ্যালয় রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম তদারকি এবং প্রতি তিন মাসে একবার বিভাগীয় কমিটির সভা ডেকে প্রাথমিক শিক্ষার সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা করে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠাবে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষার নতুন অ্যাডহক কমিটি :এদিকে প্রাথমিকের উপজেলা শিক্ষা কমিটি সংশোধন করে পুনর্গঠনের নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে এ কমিটির কর্মপরিধিও নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী- উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) আহ্বায়ক ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে সদস্যসচিব করে ১২ সদস্যের অ্যাডহক কমিটি গঠন করতে হবে।