Image description

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম এক ভয়াবহ নির্যাতনকেন্দ্র ‘আয়নাঘর’ সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছেন। সম্প্রতি এক বক্তব্যে তিনি জানান, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় এমন নির্যাতন সেলের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে, যেখানে বন্দিদের অকথ্য নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে।

তিনি উল্লেখ করেন, ঢাকার একটি নির্দিষ্ট টিএফআই সেলে একজন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও ব্যারিস্টারকে টানা সাড়ে আট বছর বন্দি রাখা হয়েছিল। একটি ছোট, বাতাসহীন, আলোবিহীন কক্ষে তাকে দিনের বেলা সামনে হাতকড়া পরিয়ে ও রাতের বেলা পেছনে হাতকড়া দিয়ে শৃঙ্খলিত রাখা হতো। পরে শুধুমাত্র তাকে নজরদারি করার জন্য একটি ছোট্ট ছিদ্রের মাধ্যমে আলোর ব্যবস্থা করা হয়।

চিফ প্রসিকিউটর আরও জানান, ওই বন্দি দীর্ঘদিন শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং তাকে সেই কক্ষেই অস্ত্রোপচার করানো হয়। পাশের কক্ষগুলোতে ছিল টর্চার সেল, যেখানে বন্দিদের ওপর অমানবিক অত্যাচার চালানো হতো। তাদের পা ও হাত বেঁধে উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখা হতো, যৌনাঙ্গে ইলেকট্রিক শক দেওয়া হতো এবং দেওয়ালে বিভৎস ছবি টানিয়ে দেখানো হতো, যাতে তারা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে।

তিনি আরও জানান, এক বন্দিকে এতটাই নির্যাতন করা হয়েছিল যে তার শরীর পচে দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করে। ওই দুর্গন্ধ আড়াল করতে বারবার এয়ার ফ্রেশনার ব্যবহার করা হতো। পরবর্তীতে সেই বন্দি মারা যান। চিফ প্রসিকিউটর বলেন, পাশের সেলের বন্দিদের দিয়ে মৃতদেহের ওপর হাঁটিয়ে বলা হতো, ‘তোর অবস্থাও এমনই হবে, যা বলছি তা কর।’

এই ভয়াবহ নির্যাতনকেন্দ্রের বাস্তবতা উপলব্ধি করানোর জন্য তিনি ব্রিটিশ গণমাধ্যম স্কাই নিউজের এক সাংবাদিককে সেই নির্জন কক্ষে প্রবেশ করান। সাংবাদিক মাত্র এক মিনিটের মাথায় দম বন্ধ হয়ে বেরিয়ে এসে জানান, সেখানে থাকা ‘অভাবনীয়’ এবং ‘অসম্ভব’!

চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, ১৫ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশকে এক পৈশাচিক নির্যাতনকেন্দ্রে পরিণত করা হয়েছিল। বাংলাদেশকে আর কখনো সেই নৃশংস অতীতে ফিরতে দেওয়া যাবে না।

তিনি জানান, জাতির শহীদ সন্তানদের আত্মত্যাগের সঙ্গে বেইমানি না করেই বাংলাদেশকে একটি নিরাপদ ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিতে হবে, যেখানে মেধাবীরা দেশ ছেড়ে বিদেশে যেতে বাধ্য হবে না বরং তারা নিজ দেশেই যোগ্যতার মূল্যায়ন পাবে।