Image description

Tahmina Tamanna (তাহমিনা তামান্না)

আসসালামু আলাইকুম। আমি তাহমিনা আক্তার তামান্না। সেশন ২০২২-২৩, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
 
আজকে থেকে আমার সেমিস্টার ফাইনাল শুরু হয়েছে। আজকে পরীক্ষা শুরুর পর স্যার খাতা সাইন করার সময় আসছেন। আমাকে এটেন্ডেন্স শিটে সাইন করতে দিয়ে মুখ খুলতে বলছেন। আমি আসলে কীভাবে না করবো এটা বুঝতেছিলাম না। তাই দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে ছিলাম। স্যার বলছেন "বসো, বসে মুখ খুলো, চেক করতে হবে তো আমার।" আমি মাথা নিচু করেই ছিলাম। আমার হাত কাঁপতেছিল। স্যার পরে বললেন "কোনো সমস্যা?' আমি বলছি জি স্যার। পরে স্যার বলছেন "মুখ খুলবে না?" আমি আস্তে করে বলছি জি না স্যার। তখন স্যার আমার থেকে এটেন্ডেন্স শিটটা নিয়ে আমার খাতাটা সাইন না করে দিয়ে দেন। বলেন "ঠিক আছে রাখো তোমারটা একটু পর সাইন করতেছি।"
 
আমি আসলে বুঝতেছিলাম কিছু একটা ঝামেলা হবে। লিখতে পারতেছিলাম না। দেখলাম স্যাররা সামনে বসে আলোচনা করতেছে। আমি বুঝছি আমার কথাই বলতেছে। একটু পর চেয়ারম্যান স্যার ওঠে আসেন। আমার পিছন থেকে ম্যাম দাঁড়ান এসে। তারপর আমাকে ম্যাম বলেন যে "কী ব্যাপার কোনো সমস্যা? স্যারকে সাইন করাতে দাও নাই কেন? কোনো সমস্যা? মুখ দেখাবে না?" ম্যাম ভালো করেই জিজ্ঞেস করেছিলেন।
 
আমার সারা শরীর কাঁপতেছিল কারণ আমি ওতো সাহসী মানুষ না। মাথা নিচু করে ছিলাম। তখন ম্যাম বলেন ম্যামকে দেখাতে। আমি একপাশ ফিরে ম্যামকে দেখাই। পরে ম্যাম সাইন করেন। পাশাপাশি অনেক কিছু বলতেছিলেন। ম্যাম বললেন সবসময় তো মহিলা টিচার থাকবেন না। তখন চেয়ারম্যান স্যার বলেন: "ওকে জিজ্ঞেস করেন তো ও ভাইভাতে কী করবে?" তখন ম্যাম আমাকে বলেন "ভাইভাতে কী করবে? মুখ খুলবে না?" আমি মাথা নিচু করে না বলি। তখন ম্যাম বলেন যে ভাইভা বোর্ডে তো মহিলা টিচার নাও থাকতে পারেন তখন?
 
পরে চেয়ারম্যান স্যার বলেন: ওর জন্য কি অন্য টিচাররা সব ভাইভা বোর্ড থেকে বের হয়ে যাবে? ও মুখ খুলবেনা তাই চলে যাবে বের হয়ে? দেশটা যে কী হচ্ছে, নরক হয়ে গেছে দেশটা।" আরও কিছু হয়তো আস্তে বলছেন আমার মাথায় আর ঢুকতেছিল না।
 
আমার অলরেডি তখন চোখ দিয়ে পানি পড়তেছে। তখন। তখন ম্যাম আমাকে বুঝাতে থাকেন ভালো করে যে পরীক্ষার তো একটা নিয়ম আছে। তুমি সেকেন্ড ইয়ার না? নিয়ম জানো না?" তখন ম্যাম আবার বলেন যে: "আমিও স্টুডেন্ট লাইফে মুখ ঢেকে রাখতাম, কিন্তু পরীক্ষার হলে আমাকে বলতে হতো না। আমি খুলে রাখতাম। একটা নিয়ম তো আছে। চেক করতে হবে তো।"
 
পরে ম্যাম কতক্ষণ বুঝালেন। বললেন " আরে এ তো কান্নাকাটি শুরু করছে। নার্ভাস হইয়ো না। এই ঘটনার প্রভাব যেন পরীক্ষায় না পড়ে। এখন পরীক্ষা দাও, আমরা এ বিষয়ে পরীক্ষার পর কথা বলবো"
 
এরপর চলে যান। আমি পরীক্ষার পর আর ম্যামের সাথে দেখা করিনি। আমার বেশখানিকটা সময় ওই কাহিনিতে চলে গেছিল। উনারা চলে যাওয়ার পরও কান্না আসতেছিল। ভয় পেয়ে গেছিলাম। লিখতে পারতেছিলাম না। পরীক্ষা কেমন হইছে সেটা আর না বলি। সত্যি কথা বলতে আমি জানতাম ঝামেলা হবে। আমার আসলে টিচারদের নিয়ে কিছু বলার নেই। কারণ উনারা বারবারই নিয়মের কথা বলেন। আর এটা সত্যিই যে নিয়মের মধ্যেই আসল ঝামেলাটা। আমি চাই নিয়মটা চেইঞ্জ হোক। একটা বিষয় বলি আমার টিচারদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। আমি চাই সিস্টেমটা পরিবর্তন হোক। কোনো টিচারের কিছু হোক সেটা চাই না। কারণ টিচারের হাতে কিছু নেই। আমি চাই পরীক্ষার নিয়মটাই চেইঞ্জ করা হোক। নাহয় নেক্সট পরীক্ষায়ও এটা ফেইস করা লাগবে, ভাইভাতেও। টিচারদের বিরুদ্ধে না কথা বলা উচিৎ সিস্টেমটা নিয়ে।
 
আবারও বলছি আমি টিচারদের নিয়ে কিছু বলতে চাই না, উনাদের বিপক্ষে কিছু করতেও চাই না। শুধু চাই ভার্সিটির সকল ডিপার্টমেন্টে ক্লাসে, পরীক্ষা, ভাইভা, টিউটোরিয়ালে যারা হিজাব-নিকাব পরে তাদের কোনো সমস্যা যেন আর না হয়৷ চেক করার জন্য যেন অন্য কোনো ওয়ে রাখা হয় সেটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই। এটার একটা সমাধান হওয়া উচিৎ সেন্ট্রালি। আমি আমার বিভাগের দোষ দিব না। পরীক্ষার নিয়মটাই চেইঞ্জ হোক। হিজাব-নিকাব পরা আমারসহ প্রত্যেকটা মেয়ের স্বাধীনতা হোক।