
প্রশাসনে নানা রদবদল আর ওএসডির কারণে অন্যরকম পরিবেশ বিরাজ করছে সরকারের শীর্ষ প্রশাসনিক দপ্তর বাংলাদেশ সচিবালয়ে। এর রেশ পড়েছে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যেও। সব মিলিয়ে অস্বস্তিতে রয়েছেন মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় নানামুখী চাপ ও তদবিরে অনেকটা অতিষ্ঠ। অনেকেই মাঠ থেকে উঠে আসতে ব্যক্তিগত যোগাযোগও করছেন সিনিয়রদের সঙ্গে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সচিবালয় ও মাঠ প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিগত সরকারের সময়ে ডিসির দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তাদের কাউকে বাধ্যতামূলক অবসর আর অনেককে ওএসডি করায় নানা আতঙ্ক ছড়িয়েছে অন্য কর্মকর্তাদের মধেও। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে মাঠ প্রশাসনে নানামুখী তদবিরও বেড়েছে।
একটি সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ ও তাদের নেতা-কর্মীরা পলাতক থাকায় অন্য দলগুলোর অনুসারীরা ফায়দা নিতে সরকারি দপ্তরে ছুটছেন। বিভিন্ন স্থানে সমন্বয়ক পরিচয়েও নানা চাপ তৈরি করা হচ্ছে। রাজনৈতিক দল ও সমন্বয়ক পরিচয়ধারীদের চাপে অনেকটা অতিষ্ঠ মাঠে দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তারা। যদিও প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলছেন না। কিছু বললে যদি ওই কর্মকর্তার নামে আন্দোলন বা দোসরের ট্যাগ লাগানো হয় সে ভয়ে।
ময়মনসিংহ বিভাগে দায়িত্ব পালন করা কয়েকজন ইউএনও এবং এসিল্যান্ড বলেন, মাঠে কাজ করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। অনেকেই যাচ্ছেতাই আবদার নিয়ে আসেন। বুঝতে চান না, আইন এবং নিয়মের বাইরে কিছু করার নেই। আমাদের সমস্যাগুলো সিনিয়রদের নিয়মিত জানাচ্ছি। মাঠে কাজের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছি।
জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সুশাসনের কর্মী এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মাঠে সবসময় নানামুখী চাপ থাকে। কর্মকর্তাদের আতঙ্কিত ও অস্থির না হয়ে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। বিভিন্ন দল/ব্যক্তির খপ্পরে পড়ে দায়িত্ব পালন করা আগের কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাই সে দিকে না হেঁটে ন্যায়-নীতির পথে হাঁটতে কর্মকর্তাদের পরামর্শ দেন তিনি। তিনি আরও বলেন, কেউ অন্যায় আবদার করলে বিনয়ের সঙ্গে অপারগতা প্রকাশ করবেন। এর পরও যদি মাঠ থেকে ওই কর্মকর্তাকে উঠে আসতে হয়, তখন সম্মান নিয়ে আসতে পারবেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, প্রশাসনে যেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতিতে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) মামলা করা হবে। দুদক ব্যবস্থা নেবে। এনিয়ে ভিতরে ভিতরে নানারকম কাজও চলছে। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা আগের সময়কার কর্মকর্তাদের নানা বিষয় খতিয়ে দেখছে। আর দুদক খতিয়ে দেখছে অনেকের দুর্নীতির চিত্র। কর্মরত এবং ওএসডি থাকা কর্মকর্তারা নীরবে দিন পাড় করছেন। সহকর্মী ব্যাচমেটদের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন না।
বিভিন্ন অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোনোরকম রুটিন কাজ সামলে দিন পাড় করছেন বেশির ভাগ কর্মকর্তা। দায়িত্ব নিয়ে কেউ ভালো কিছুও করছেন না। অনেকে কাজেও মন বসাতে পারছেন না। বিশেষ করে, জেলা-উপজেলায় সরকারি পুকুর ইজারা, খাস জমি বন্দোবস্ত, ভূমিসংক্রান্ত তদবির নিয়ে যাচ্ছে কর্মকর্তাদের কাছে। ঢাকা বিভাগের এক ডিসি নাম প্রকাশ না করে বলেন, সমন্বয়ক যারা তাদের অনেকেই শিক্ষার্থী। তারা অনেক কিছু বোঝে না। আমরা বুঝিয়ে দিলে তখন শুনছে। এক দল গেলে আরেক দল আসে। রাজনৈতিক তদবির আছে। তবে আমরা অন্যায় কিছু করতে অপারগ। খুলনা বিভাগের একজন ডিসি বলেন, জেলায় অনেক কাজে নানারকম অনুরোধ আসে। একাধিক জেলায় কথা বলে জানা গেছে, ডিসিদের এলআর ফান্ড নিয়েও করুণ অবস্থা চলছে। এলআর ফান্ডের টাকা জেলার অনেক কল্যাণকর কাজে ব্যয় করা যায়। পরিস্থিতি খারাপ থাকায় ডিসিরা স্বপ্রণোদিত হয়ে সে কাজে ব্যয় করতে পারছেন না।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমান সরকার যারা ভোটের অনিয়মে জড়িত ছিলেন, এমন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন। তবে যারা কোনো অপরাধে জড়িত নন তাদের ভয়ের কিছু নেই। মাঠে প্রশাসন কার্যক্রম স্বাভাবিক চলছে জানিয়েছেন জনপ্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা।