Image description

বৈধ হওয়ার সুযোগ দেওয়ার পরও সরকারের নির্দেশ অমান্য করে যেসব বিদেশি নাগরিক অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন তাঁদের খুঁজে বের করতে শুরু করেছেন গোয়েন্দা সদস্যরা। এ নিয়ে দেশের তিনটি গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। আইন আমান্যকারী বিদেশিদের চিহ্নিত করে তালিকা করা হচ্ছে। আগামী টাস্কফোর্সের বৈঠকে এই তালিকা নিয়ে আলোচনা হবে। ওই বৈঠকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে এই অবৈধ বিদেশি নাগরিকদের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

গত ৩ ফেব্রুয়ারি অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকদের বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে একটি টাস্কফোর্স গঠন করে সরকার। মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষাসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে (নিরাপত্তা ও বহিরাগমন) আহ্বায়ক করে ১১ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। এতে সুরক্ষা সেবা বিভাগের যুগ্ম সচিবকে (বহিরাগমন-২ অধিশাখা) সদস্যসচিব করা হয়েছে। টাস্কফোর্সের সদস্য হিসেবে রয়েছেন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা অধিদপ্তর এবং প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের পরিচালকরা।

জানা গেছে, এরই মধ্যে এই তিনটি গোয়েন্দা সংস্থা থেকে বাংলাদেশে অবস্থান করা অবৈধ বিদেশিদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দুই দফায় বিজ্ঞপ্তি জারি করে অবৈধ বিদেশিদের বৈধ হওয়ার অহ্বান জানানো হয়।

প্রথমে গত বছর ৮ ডিসেম্বর বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি জারি করে অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থানরত বা কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের বৈধতা অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদন করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। পাশাপাশি যেসব দপ্তর বা প্রতিষ্ঠানে বিদেশি নাগরিকরা কর্মরত রয়েছেন, সেসব প্রতিষ্ঠানকেও বিদেশি নাগরিকদের সহযোগিতা করতে পরামর্শ দেওয়া হয়। সর্বশেষ গত বছর ২৬ ডিসেম্বর দ্বিতীয় দফায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করে চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত বৈধ হওয়ার সময় বেঁধে দেওয়া হয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, ২০২৪ সালের ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত দেশে অবৈধ বিদেশি নাগরিক ছিলেন ৪৯ হাজার ২৬৬ জন। এর মধ্যে  গত ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৫ হাজার ৬১৮ জন বৈধ হয়েছেন। গত ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত ১০ কোটি ৫৩ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। ৩৩ হাজার ৬৪৮ জন বাকি ছিলেন। পরবর্তী ১৭ দিনে আরো কয়েক হাজার বৈধ হয়েছেন। তবে বাকি আরো কয়েক হাজার বিদেশি নাগরিক সরকারের নির্দেশ অমান্য করে অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। এবার তাঁদেরই চিহ্নিত করে তালিকা করছে গোয়েন্দা সংস্থা। ওই তালিকা করার বিষয়ে একটি গোয়েন্দা সংস্থা থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখাকে অবহিত করা হয়েছে।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের উপসচিব আলীমুন রাজীব গত সোমবার কালের কণ্ঠকে বলেন, টাস্কফোর্সের মিটিংয়ে বিষয়গুলো আলোচিত হতে পারে। তিনি জানান, শিগগিরই টাস্কফোর্সের বৈঠক হবে।

অন্যদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, অবৈধ বিদেশি নাগরিকদের বৈধ হতে বিজ্ঞপ্তি জারির পর ১২ হাজারের মতো বিদেশি নাগরিক জরিমানা দিয়ে নিজ নিজ দেশে ফিরে গেছেন। এর মধ্যে ভারত ও চীনের নাগরিকের সংখ্যা বেশি। গত বছর ৮ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছর ৩১ জানুয়ারির মধ্যে তাঁরা নিজ নিজ দেশে ফিরে গেছেন।

সূত্র মতে, অবৈধভাবে অবস্থান করা বিদেশিদের অনেকে নানা অপরাধে জড়াচ্ছেন। বিভিন্ন অপরাধে জড়ানোর অভিযোগে গ্রেপ্তারের পর ৪৭২ জন বিদেশি কারাগারে আছেন। ১৬৯টি দেশের কয়েক হাজার মানুষ অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। যাঁদের পাসপোর্ট ও ভিসার মেয়াদ অনেক আগেই উত্তীর্ণ হয়েছে। এর মধ্যে ভারত ও চীনের নাগরিক বেশি। পাকিস্তানের নগরিকও রয়েছেন বেশ কিছু। উন্নত রাষ্ট্র কানাডা, আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, রাশিয়া ও থাইল্যান্ডের নাগরিকরাও অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।

বিদেশিদের বড় অংশ ব্যবসা, ভ্রমণ, শিক্ষার্থী ও খেলোয়াড় ভিসায় বাংলাদেশে আসছেন। এ ছাড়া অন অ্যারাইভাল বা পোর্ট অ্যান্ট্রি ভিসায় (বিমানবন্দরে নামার পর ভিসা নেন) এসেছেন কয়েক হাজার।  অবৈধভাবে অবস্থানকারীদের একটা বড় অংশ বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন বলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কাছে তথ্য রয়েছে।