
শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক পদ থেকে ড. সৈয়দ জামিল আহমেদের পদত্যাগ ইস্যু নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। পদত্যাগপত্রে কোনো কারণ উল্লেখ না করলেও পরবর্তীতে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জামিল আহমেদ ‘অসত্য ও মনগড়া তথ্য’ দিয়েছেন বলে দাবি করেছে মন্ত্রণালয়। রোববার (২ মার্চ) রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক বক্তব্যে এ দাবি করা হয়েছে।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দাবি, প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ড. সৈয়দ জামিল আহমেদের উল্লেখিত কারণসমূহের মধ্যে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও অর্থ বিভাগের প্রতি কিছু অসত্য, বিভ্রান্তিকর তথ্য ব্যবহৃত হয়েছে। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার বিষয়েও অসত্য, মনগড়া ও ব্যক্তিগত আক্রমণাত্মক বক্তব্য রয়েছে।
মন্ত্রণালয় জানায়, জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের বহুত্ববাদী ও ঐক্যবদ্ধ সাংস্কৃতিক বয়ান রচনা ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসনমুক্ত নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় নিয়মিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ কর্তৃক উত্থাপিত অসত্য অভিযোগের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে প্রকৃত সত্য তুলে ধরা প্রয়োজন মর্মে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় মনে করে। একটি ভিডিও নির্মাণের বিষয়ে চিঠিপত্র ছাড়া টাকা প্রদানের জন্য চাপ প্রয়োগ বিষয়ে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের অভিযোগ সম্পূর্ণ অসত্য ও বানানো।
‘গত ২০-২১ ফেব্রুয়ারি প্যারিসস্থ ইউনেস্কো সদর দফতরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ২৫ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে বিশেষ আমন্ত্রিত হয়ে বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ের একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি দল অংশগ্রহণ করে। অনুষ্ঠানে মাতৃভাষা দিবসের ইতিহাস সংরক্ষণে বাংলাদেশের অবদান তুলে ধরে বিশেষভাবে নির্মিত একটি ১৫ মিনিটের ভিডিও এবং একটি লাইভ প্রোগ্রাম উপস্থাপন করা হয়। ভিডিওটি নির্মাণের জন্য গত ২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে একটি চিঠি পাঠানো হয়। চিঠির ২ নং অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে মন্ত্রণালয়ের ৩৮ কোডের ‘সাংস্কৃতিক মঞ্জুরি- ৩৮২১১১৫’ খাত থেকে বর্ণিত খরচের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করা হবে। উন্নত কারিগরি সহায়তা এবং সুষ্ঠু সমন্বয়ের মাধ্যমে ভিডিওটি নির্মাণের জন্য নিয়ম অনুযায়ী অগ্রিম কিছু অর্থ নির্মাতাকে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক সম্পূর্ণ অসৌজন্যমূলক আচরণ করে বাজেট বরাদ্দ না দিলে অর্থ দেওয়া হবে না মর্মে মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মহোদয়ের অনুরোধকে নাকচ করেন। অথচ মহাপরিচালক মহোদয়ের পূর্বে সাধু মেলা আয়োজনের জন্য শুধু উপদেষ্টার মৌখিক কথায় প্রায় ৩৩ লাখ টাকার প্রোগ্রাম বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেন। পরবর্তীতে এই বিষয়ে চিঠি পাঠানো হয়। সাধারণত জরুরি বিবেচনায় মন্ত্রণালয় তার দপ্তর সংস্থাগুলোর এরকমভাবে কাজ এগিয়ে নেয়। ’
মন্ত্রণালয়ের বক্তব্যে আরও বলা হয়, এবার পূর্বেই চিঠি পাঠানো হয়েছিল। শুধু তাই নয়, ইউনেস্কোর প্রোগ্রাম সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন ও সমন্বয়ের জন্য উপদেষ্টা, ইউনেস্কো সদর দফতর, বাংলাদেশ দূতাবাস, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ভিডিও নির্মাতা, শিল্পকলা একাডেমিকে সংযুক্ত করে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খোলা হয়। কিন্তু শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক অসৌজন্যমূলকভাবে ওই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে বেরিয়ে যান। পূর্বে এ ভিডিও নির্মাণের জন্য যথোপযুক্ত চিঠি পাঠানো হলেও শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের প্রতি সম্মান ও তার একগুঁয়েমির জন্য গত ১০ ফেব্রুয়ারি পুনরায় বাজেট বরাদ্দের বিষয় উল্লেখপূর্বক করে চিঠি পাঠানো হয়। প্যারিসস্থ ইউনেস্কো সদর দফতরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ২৫ বছর পূর্তির অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রায় ২০ দিন পূর্বে মন্ত্রণালয় হতে চিঠি পাঠানো এবং ১০ দিন পূর্বে বাজেট বরাদ্দ প্রদান সংক্রান্ত চিঠি দেওয়ার পরও চিঠি ছাড়া টাকা দেওয়ার বিষয়ে মন্ত্রণালয় হতে চাপ দেওয়ার বক্তব্য শুধু অসত্যই নয়, ব্যক্তিগত আক্রোশের বহিঃপ্রকাশ বলে প্রতীয়মান হয়। শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক এমনভাবে বিষয়টির অবতারণা করেছেন যে, প্রাথমিকভাবে মনে হতে পারে উপদেষ্টা তার ব্যক্তিগত কাজের জন্য কোনো অনৈতিক টাকা দাবি করেছেন। বাংলাদেশের সম্মান বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার জন্য ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের কথা, শত শত শহীদদের কথা ইউনেস্কো সদর দফতরে উপস্থাপন করার জন্য যেখানে শিল্পকলা একাডেমির আরও ঘনিষ্ঠ থেকে সাহায্য করার কথা সেখানে শিল্পকলার মহাপরিচালক এমন অসৌজন্যমূলক আচরণ ও মিথ্যাচার জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের প্রতি অসম্মান প্রদর্শনের শামিল।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় শিল্পকলা একাডেমির কোনো কাজে হস্তক্ষেপ করেনি বলে জানানো হয়েছে বক্তব্যে।
এতে বলা হয়, মন্ত্রণালয় একাডেমির কোনো কাজ বন্ধ করতে বলেছে এরকম কোনো নজির নেই। বরং সবসময় শিল্পকলার কাজকে উৎসাহিত করা হয়েছে। বাংলাদেশের কোনো কোনো জায়গায় যখন বাউলদের প্রোগ্রাম নিয়ে কিছু সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল, তখন মন্ত্রণালয় শিল্পকলা একাডেমিকে বাউলদের জন্য শিডিউলকৃত সাধুমেলার সংখ্যা দ্বিগুণ করতে পরামর্শ দেয়। এবং এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। এছাড়া ‘রিমেম্বারিং জুলাই রেভ্যুলেশন’ নামে ৮ বিভাগে প্রোডাকশন ওরিয়েন্টেড ফিল্ম মেকিং ওয়ার্কশপ পরিচালনা করার জন্য শিল্পকলা একাডেমিকে বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে একদল বেসরকারি বিশেষজ্ঞ টিম এজন্য কাজ করছে। এসব কাজে মন্ত্রণালয় সার্বিকভাবে সহযোগিতা ও সমন্বয় করছে। পাশাপাশি জুলাই বিপ্লবকে কেন্দ্র করে ৮টি নতুন থিয়েটার ও একটি গেরিলা/ ইনভিজিবল থিয়েটার নির্মাণের বিষয়েও মন্ত্রণালয় হতে শিল্পকলা একাডেমিকে বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন কর্মসূচিতে শিল্পকলা একাডেমির অনুরোধে মন্ত্রণালয় হতে সাধারণ বাজেটের বাইরেও বিশেষ বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। সুতরাং শিল্পকলা একাডেমিকে আন্তরিক সহযোগিতা প্রদান ছাড়া কোনোরকম হস্তক্ষেপের কোনো নজির নেই। তাই যা তিনি বলেছেন তা অসত্য, তার মনগড়া।