
আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে বিগত তিন জাতীয় নির্বাচন ও সবশেষ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দমনে বিতর্কিত ভূমিকা রাখা পুলিশ কর্মকর্তারা চাকরি হারানোর আতঙ্কে আছেন। পতিত সরকারের আস্থাভাজন ও সুবিধাভোগী হিসেবে পরিচিত কর্মকর্তাদের মধ্যে ১৩৩ জনকে ইতোমধ্যে বাধ্যতামূলক অবসর এবং ওএসডি করা হয়েছে। কিছু কর্মকর্তা সরাসরি চাকরিচ্যুত হয়েছেন। বাধ্যতামূলক অবসর এবং ওএসডির তালিকায় আছেন আরও দুই শতাধিক পুলিশ কর্মকর্তা। এদের মধ্যে পুলিশ সুপার (এসপি) থেকে ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদমর্যাদার কর্মকর্তাই বেশি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশ সদর দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার পর আওয়ামী লীগের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিতি এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গণহত্যায় নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগে মামলার আসামি হয়েছেন এমন ১৪৬ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে সংযুক্ত করা হয়। পাশাপাশি অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি পদমর্যাদার বেশকিছু চিহ্নিত কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।
৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর থেকে গত ছয় মাসে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো কর্মকর্তার সংখ্যা ৫১ জনের মতো। এরপর গত ২৫ ফেব্রুয়ারি একযোগে ওএসডি করা হয় ৮২ পুলিশ কর্মকর্তাকে। সব মিলিয়ে বাধ্যতামূলক অবসর এবং ওএসডি করা পুলিশ কর্মকর্তার সংখ্যা ১৩৩ জন। এসব কর্মকর্তার অনেকেই বিতর্কিত দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন জেলার এসপি, রেঞ্জ ডিআইজি ও মেট্রোপলিটন কমিশনার ছিলেন।
বিতর্কিত নির্বাচনগুলোতে আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করা পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে যারা ইতোমধ্যে স্বাভাবিকভাবে অবসরে গেছেন তাদেরও অনিয়ম-দুর্নীতির অনুসন্ধান করা হচ্ছে। তাদের বিষয়ে অনুসন্ধান করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) চিঠি দেওয়া হয়েছে।
এদিকে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি পৃথক আদেশে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি পদপর্যাদার ৮২ পুলিশ কর্মকর্তাকে ওএসডি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যুক্ত করা হয়। তাদের বড় অংশই বিতর্কিত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে বিভিন্ন জেলায় এসপি ছিলেন। এ ছাড়া আওয়ামী শাসনামলে তারা নানা অনিয়ম-দুর্নীতির পাশাপাশি রাজপথে থাকা বিরোধী নেতাকর্মীদের নির্যাতন, হয়রানি এবং সরকারবিরোধী রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বিতর্কিত কাজ করেছেন এমন কর্মকর্তাও রয়েছেন।
তবে পুলিশের মাঠ পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আস্থাভাজন হয়ে কাজ করার অভিযোগে যাদের বরখাস্ত ও বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে তাদের মধ্যে এমন কর্মকর্তাও আছেন, যারা চাকরিজীবনে বরাবরই পেশাদারত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। সরকারের আজ্ঞাবহ বা অতিউৎসাহী হয়ে কিছু করেননি। বরং পুলিশে সিন্ডিকেট তৈরি করে পদায়ন-পদোন্নতিতে নানা অনিয়মে তারা প্রতিবাদ করেছিলেন। তাদেরকে কী কারণে এএসডি করা হয়েছে তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তী সরকারের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ৫১ পুলিশ কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। তাদের মধ্যে অতিরিক্ত আইজিপি ১৯, ডিআইজি ৯, অতিরিক্ত ডিআইজি ২, পুলিশ সুপার ১, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এক এবং সহকারী পুলিশ সুপার একজন রয়েছেন। অন্যদিকে ৮২ জন পুলিশ কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছে।
এর আগে বিভিন্ন পদবির ১৬৩ জন কর্মকর্তাকে ৫ আগস্টের পর সংযুক্ত করা হয়েছিল। সংযুক্ত হওয়া কর্মকর্তাদের অধিকাংশ ওএসডি হয়েছেন। সব মিলিয়ে ১৩৩ জন পুলিশ বাধ্যতামূলক অবসর এবং ওএসডি করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এমন তালিকায় এখনও দুই শতাধিক পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই ৫ আগস্টের পর থেকে বিভিন্ন ইউনিটে সংযুক্ত রয়েছেন। ২০২৪ সালের নির্বাচনে বিভিন্ন জেলার এসপি, রেঞ্জ ডিআইজি, মেট্রোপলিটন কমিশনার ছিলেন এমন কর্মকর্তাদের একটি বড় অংশ ওই তালিকায় আছেন। এই তালিকায় থাকা কর্মকর্তাদের মধ্যে যাদের ২৫ বছর চাকরির মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে তাদের বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আর যাদের এখনও ২৫ বছর পূর্ণ হয়নি তাদের ওএসডি করার কার্যক্রম চলছে।
ইতোমধ্যে ওএসডি ও বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো পুলিশ কর্মকর্তাদের অনেকেই ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় জেলার পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। যেমন ঢাকা রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম দুই নির্বাচনে দুই জেলায় এসপি ছিলেন। এমন কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন ওএসডি হওয়া অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আলমগীর কবির, রংপুর আরআরএফের কমান্ড্যান্ট মেহেদুল করিম, সারদায় সংযুক্ত থাকা ডিআইজি নুরে আলম মিনাসহ অনেকে।
সরকারবিরোধী যত আন্দোলন হয়েছে সেসবে বিরোধী নেতাকর্মীদের দমন-পীড়নে সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন পুলিশের আওয়ামীপন্থি কর্মকর্তারা। আর আনুগত্যের পুরস্কার হিসেবে সরকার থেকে বাগিয়ে নিয়েছেন পদোন্নতি ও পছন্দের জায়গায় পদায়ন। পাশাপাশি ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অনেকে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, পুলিশের সিন্ডিকেট তিনটি গ্রুপে নিয়ন্ত্রণ হতো। সিন্ডিকেটই মূলত অযোগ্য কর্মকর্তাদের পদোন্নতি ও পদায়ন করত। তৎকালীন আওয়ামী সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে প্রতিটি পদোন্নতি ও পদায়নে মোটা অঙ্কের টাকা দিত এই সিন্ডিকেট।
এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে ছিলেন সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, এসবির সাবেক প্রধান মনিরুল ইসলাম, ঢাকা রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি সৈয়দ নুরুল হক, ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ, যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, চট্টগ্রামের সাবেক কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়, অবসরে যাওয়া সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, জাবেদ পাটোয়ারী, শহিদুল হক, ডিএমপির সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, ডিআইজি প্রলয় কুমার জোয়াদ্দার প্রমুখ।
ওএসডি ও বরখাস্তদের অধিকাংশই নির্বাচনকালীন এসপি ছিলেন
পুলিশ সদর দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী ওএসডি ও বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো ১৩৩ কর্মকর্তার মধ্যে তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় এসপি অথবা রেঞ্জ ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও মেট্রোপলিটন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের বাইরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নির্বিচারে গুলি চালানো এবং দমন-পীড়নে নেতৃত্ব দেওয়া পুলিশ কর্মকর্তাও রয়েছেন।
ওএসডি হওয়া পুলিশের ৮২ কর্মকর্তার মধ্যে ৫০ জনের বেশি ২০১৮ সালে সবচেয়ে বিতর্কিত রাতের ভোটের কারিগর ছিলেন। ওই সময় তারা বিভিন্ন জেলার এসপি ছিলেন। ওই নির্বাচনে তারা ভোটের আগের রাতে ব্যালটে সিল মেরে বাক্স ভর্তি করেন আওয়ামী লীগকে জয়ী করতে।
বরখাস্ত ও অবসরে যাওয়া অন্য কর্মকর্তাদের কেউ কেউ ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিতর্কিত ভূমিকা পালন করেন। আবার কেউ কেউ আছেন যারা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় গণহত্যাসহ দমন-পীড়নে ভূমিকা রাখেন।
এসব কর্মকর্তার মধ্যে ২০তম ব্যাচের শেখ রফিকুল আলম ২০১৪ ও ২০১৮ সালের রাতের ভোটের নির্বাচনকালে পাবনার এসপি ছিলেন। সে সময় একই ব্যাচের জকির হোসেন খান ও মেহেদুল করিম অন্য দুই জেলার এসপি ছিলেন। একই ব্যাচের মঈনুল হক ২০১৪ সালে ময়মনসিংহ ও ২০১৮ সালে যশোরে এসপির দায়িত্বে ছিলেন। এই চার কর্মকর্তাই ওএসডি হয়েছেন।
ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার ২০১৪ সালে চট্টগ্রাম জেলার এসপি ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে আওয়ামী লীগ সরকারের দমন-পীড়নে তার সক্রিয় ভূমিকা ছিল। ইতোমধ্যে তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।
১৮তম ব্যাচের কর্মকর্তা আজাদ মিয়া এখন ডিআইজি হিসেবে ওএসডি হয়ে আছেন। তিনি ২০১৪ সালের নির্বাচনে কক্সবাজার জেলার এসপি ছিলেন। বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি দেবদাস ভট্টাচার্য ২০১৪ সালে বান্দরবান জেলার এসপি ছিলেন। তিনটি বিতর্কিত জাতীয় নির্বাচনে তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের হয়ে ভূমিকা রাখার অভিযোগ রয়েছে।
বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তারা নির্বাচনকালে যেখানে ছিলেন
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০১৪ সালের নির্বাচনে ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান ঢাকা জেলার এসপি ছিলেন। একাধিক হত্যা মামলার আসামি হয়ে তিনি এখন পলাতক। ইতোমধ্যে তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে সরকার। এ ছাড়া রংপুর রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি আব্দুল বাতেন ছিলেন গাজীপুর জেলার এসপি। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে প্রথম হত্যার ঘটনা ঘটে রংপুরে। শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে গুলি করার ঘটনায় বরখাস্ত হওয়ার পর পালিয়ে যান আব্দুল বাতেন। তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। সৈয়দ নুরুল ইসলামকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। বিধান ত্রিপুরা বর্তমানে ট্যুরিস্ট পুলিশে আছেন। তিনি ২০১৪ সালে মানিকগঞ্জ ও ২০১৮ সালে রাতের ভোট ডাকাতির নির্বাচনকালে হবিগঞ্জ জেলার এসপি ছিলেন। ওই নির্বাচনে নরসিংদী জেলার এসপির দায়িত্বে থাকা খন্দকার মহিদ উদ্দিনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। তিনি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অপারেশনস ও ক্রাইম) ছিলেন।
২০১৪ সালের নির্বাচনের সময় কিশোরগঞ্জ জেলার এসপি ছিলেন পুলিশের ২০ ব্যাচের কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন খান। তিনি এখন অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে চট্টগ্রাম আরআরএফ-এ সংযুক্ত আছেন। ফরিদপুরের এসপি থাকা একই ব্যাচের জামিল হাসান এখন সংযুক্ত আছেন ঢাকায় অ্যান্টি-টেরোরিজম ইউনিটে।
গোপালগঞ্জ জেলার এসপি পদে থাকা ১৮ ব্যাচের কর্মকর্তা মিজানুর রহমান এখন ট্যুরিস্ট পুলিশের ডিআইজি। একই ব্যাচের মো. রেজাউল হক ২০১৪ সালের নির্বাচনে রাজবাড়ী জেলার এসপি ছিলেন। তিনি ৫ আগস্টের পর খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হিসেবে বদলি হলেও বর্তমান অবস্থান অজানা।
২০১৪ সালে নোয়াখালীতে এসপির দায়িত্বে থাকা ২০ ব্যাচের আনিসুর রহমান ডিআইজি হিসেবে ওএসডি হয়ে আছেন ৫ আগস্টের পর থেকেই। ১৮ ব্যাচের আমেনা বেগম রাঙামাটির এসপি ছিলেন। তিনি এখন ডিআইজি হিসেবে ওএসডি হয়ে আছেন। লক্ষ্মীপুর জেলায় এসপির দায়িত্বে থাকা আবুল ফয়েজ এখন ডিআইজি হিসেবে ওএসডি। ফেনীর এসপি থাকা ১৮ ব্যাচের পরিতোষ ঘোষ এপিবিএনে ডিআইজি হিসেবে ছিলেন। বর্তমান অবস্থান অজানা।
সূত্র বলছে, ২০১৪ সালে সুনামগঞ্জ জেলার এসপি থাকা হারুন অর রশীদ এখন ডিআইজি হিসেবে আছেন। অতিরিক্ত ডিআইজি কামরুল আমিন, মৌলভীবাজারে এসপি থাকা তোফায়েল আহমেদ, ১৮ ব্যাচের রফিকুল হাসান গনি, ঝালকাঠির এসপি থাকা মজিদ আলী, পিরোজপুরের এসপি থাকা আক্তারুজ্জামান, বরিশাল জেলার এসপি থাকা এহসান উল্লাহ, বাগেরহাটের এসপি থাকা নিজামুল হক, মেহেরপুরের এসপি থাকা নাজিদুল ইসলামসহ পতিত সরকারের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত অনেকেই এখনও চাকরিতে আছেন।
তবে আওয়ামী লীগের সময় ডিআইজি হিসেবে ছিলেন এমন অনেক কর্মকর্তাকে ইতোমধ্যে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।
‘ডামি ভোটের’ এসপিরা চাকরি হারানোর আতঙ্কে
২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ‘ডামি নির্বাচন’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ ছিল মূলত আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। কেননা বিএনপি, জামায়াতসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল এতে অংশ নেয়নি। এ নির্বাচনে অধিকাংশ জেলায় পুলিশ নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের পক্ষে ভূমিকা পালন করে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও ওই নির্বাচনে বিতর্কিত ভূমিকা রাখা অনেক পুলিশ কর্মকর্তাই চাকরিতে বহাল আছেন।
অবশ্য দ্বাদশ নির্বাচনে বিভিন্ন জেলায় এসপির দায়িত্বে থাকা একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, আগের দুটি নির্বাচনের মতো ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এসপিদের সবাই আওয়ামী লীগের আস্থাভাজন হিসেবে কাজ করেননি। ফলে অর্ধশতাধিক আসনে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থীরা পরাজিত হন। তবে কোনো কোনো জেলার এসপিরা অতিউৎসাহী ছিলেন।
দ্বাদশ নির্বাচনের সময় বিভিন্ন জেলায় যারা এসপির দায়িত্বে ছিলেন তাদের মধ্যে রয়েছেনÑ পঞ্চগড়ে এসএম সিরাজুল হুদা, ঠাকুরগাঁওয়ে উত্তম প্রসাদ পাঠক, দিনাজপুরে শাহ ইফতেখার আহমেদ, নীলফামারীতে মোহাম্মদ গোলাম সবুর, লালমনিরহাটে মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, রংপুরে মো. ফেরদৌস আলী চৌধুরী, গাইবান্ধায় মো. কামাল হোসেন, জয়পুরহাটে মোহাম্মদ নূরে আলম, বগুড়ায় সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, চাঁপাইনবাবগঞ্জে মো. ছাইদুল হাসান, নওগাঁয় মুহাম্মদ রাশিদুল হক, রাজশাহীতে মো. সাইফুর রহমান, নাটোরে মো. তারিকুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জে মো. আরিফুর রহমান, পাবনায় মো. আকবর আলী মুনসী, মেহেরপুরে মো. রফিকুল আলম, কুষ্টিয়ায় এএইচএম আবদুর রকিব, চুয়াডাঙ্গায় আব্দুল্লাহ আল মামুন, ঝিনাইদহে মো. আজিম-উল-আহসান, নড়াইলে মোসা. সাদিরা খাতুন, বাগেরহাটে আবুল হাসনাত খান, খুলনায় মোহাম্মদ সাঈদুর রহমান, সাতক্ষীরায় কাজী মনিরুজ্জামান, বরগুনায় মো. আবদুস ছালাম, পটুয়াখালীতে মো. সাইদুল ইসলাম, বরিশালে ওয়াহিদুল ইসলাম, ঝালকাঠিতে মোহাম্মদ আফরুজুল হক টুটুল, পিরোজপুরে মোহাম্মদ শফিউর রহমান, গোপালগঞ্জে আল-বেলী আফিফা, মাদারীপুরে মো. মাসুদ আলম, শরীয়তপুরে মো. মাহবুবুল আলম, ফরিদপুরে মো. শাহজাহান, রাজবাড়ীতে জিএম আবুল কালাম আজাদ, মানিকগঞ্জে মোহাম্মদ গোলাম আজাদ খান, মুন্সীগঞ্জে মোহাম্মদ আসলাম খান, নরসিংদীতে মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান।
অন্য এসপিদের মধ্যে রয়েছেনÑ নারায়ণগঞ্জে গোলাম মোস্তফা রাসেল, ঢাকা জেলায় মো. আসাদুজ্জামান, গাজীপুরে কাজী শফিকুল আলম, টাঙ্গাইলে সরকার মোহাম্মদ কায়সার, জামালপুরে মো. কামরুজ্জামান, শেরপুরে মোনালিসা বেগম, নেত্রকোণায় মো. ফয়েজ আহমেদ, কিশোরগঞ্জে মোহাম্মদ রাসেল শেখ, সুনামগঞ্জে মোহাম্মদ এহসান শাহ, সিলেটে মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন, মৌলভীবাজারে মো. মনজুর রহমান, হবিগঞ্জে এসএম মুরাদ আলী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন, কুমিল্লায় আব্দুল মান্নান, ফেনীতে জাকির হোসেন, নোয়াখালীতে মো. শহীদুল ইসলাম, লক্ষ্মীপুরে মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ, চট্টগ্রামে এসএম শফিউল্লাহ, কক্সবাজারে মো. মাহফুজুল ইসলাম, রাঙামাটিতে মীর আবু তৌহিদ ও বান্দরবানে সৈকত শাহীন।
পুলিশের এসব কর্মকর্তার মধ্যে অধিকাংশের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে মামলা হয়েছে। কয়েকজন কর্মকর্তা বিভিন্ন দপ্তরে সংযুক্ত রয়েছেন। আর ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নির্বিচার দমন-পীড়নে সংশ্লিষ্টতার ঘটনায় অনেককে ওএসডি করা হয়েছে।