Image description

Mohammad Arath Hossain Rone -(মোহাম্মদ আরত হোসেন রনি)

বিএনপির মহাসচিব কে হবেন এই নিয়ে এক বড় ভাইয়ের সাথে আলোচনা চলছিল। সঙ্গত কারনে বলে রাখা ভালো যে বড় ভাই আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের বেশ কাছের। এবং যে মুহূর্তে আমাদের আলোচনা চলছিল তখন বর্তমান মহাসচিব জনাব মির্জা ফখরুল লন্ডন সফর করছিলেন। এবং যে অল্প কয়েকজন ব‍্যক্তি জনাব ফখরুল সাহেবের কট্টর সমালোচক ছিলেন আমি সেই দলেরই একজন। 
যাই হোক মূল ঘটনায় ফিরে আসি। ভাইয়া আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন পরবর্তী মহাসচিব কে নির্বাচিত হতে পারেন সে বিষয়ে। এবং আলোচনায় থাকা নেতাদের কে কেমন আমার দৃষ্টিতে সে প্রসঙ্গে। বলে রাখা ভালো, যেহেতু আমি দলের স্বার্থে কট্টর সমালোচক, তাই সেই বড় ভাইয়ের দৃষ্টিতে আমাকে রাজনৈতিকভাবে সন্তুষ্ট করাটা একটি দুরূহ কাজ। 
আলোচনায় অন‍্য যে নামগুলো বা আলোচনা কি হয়েছে সে দিকে না যাই। আজকের প্রসঙ্গ জনাব সালাহউদ্দিন আহমেদ। 

সালাহউদ্দিন আহমেদ একজন স্ট্রং পার্সোনালিটি সম্পন্ন নেতা। অত্যন্ত মেধাবী, চৌকস ও প্রখর দৃষ্টির অধিকারী বলেই আমার ধারণা। তাঁর রয়েছে সরকারের ভিতরে ও বাহিরে কাজ করার ব‍্যাপক অভিজ্ঞতা। সাত পাঁচ মিলিয়ে আমার সমর্থন ছিল জনাব সালাহউদ্দিন আহমেদের প্রতি। 
তবে আমার ছোট্ট একটা দাবি ছিল। আমার দাবি ছিল তাকে মহাসচিব যদি করা হয় তবে তার পূর্বে তাঁর সারা শরীর জুড়ে এক্সরে করতে হবে এবং পরীক্ষা করে দেখতে হবে যে ভার*তে থাকাকালীন সময়ে তাঁর শরীরে কোন ডিভাইস প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হয়েছে কি না। 

গত ৮-১০ দিন ধরে বিএনপির আকাশে বাতাসে এস আলমকে নিয়ে গুঞ্জন চলছে। এই এস আলম শেখ পরিবারের সাথে মিলেমিশে গত ১৬ বছরে কয়েক লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। দেশের কয়েকটি ব‍্যাংককে খালি করে দিয়েছেন। এবং এর একটি মোটা অংশের ভাগ দিতেন শেখ রেহানা ও পাশের দেশের গোয়েন্দা সংস্থাকে। 

ব‍্যবসা খাত ও ব‍্যাংক খাতকে নিজের বগলদাবা করতে অনেক অপকর্ম করেছেন। নিজের ব‍্যবসা প্রতিষ্ঠান আগুনে পুড়িয়ে দিয়ে ইন্সুরেন্স খাত থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এতে তার কোন ক্ষতি না হলেও দেশ ও জনগণের লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার অপূরণীয় ক্ষতির কারন এই এস আলম। 

এস আলম লন্ডনে এসেছেন এটা খবর পেয়েছিলাম আগেই, এবং নেতার সাথে দেখা করতে বিভিন্ন মহলে তদবির চালিয়ে যাচ্ছিলেন সে খবরও এসেছিল। কিন্তু ভাগ‍্যের নির্মম পরিহাস টাকার কাছে কিছু মানুষ বিক্রি হয়ে আকস্মিকভাবে নেতার সামনে হাজির করা হয় তাকে। আর এই অপকর্মটি সাধন করা হয়েছে তারেক রহমানের গৃহকর্মী মতান্তরে বিশেষ সহকারী সানি সাহেবের মাধ্যমে। টাকা পেলে সানি ও সানির পরিবার এই দলকে কিভাবে বিক্রি করে তা কমবেশি অনেকেরই জানা। 

কিন্তু এস আলমের মত একজন দাগি আসামি ও দেশদ্রোহীকে এভাবে তারেক রহমানের সাথে বসিয়ে দেওয়াটা বিএনপির ইমেজের জন‍্য ক্ষতিকর এবং দল ও দেশের জন‍্য হুমকি। শুধু এই এস আলম নয় হাসিনার আমলের সকল ব‍্যবসায়িদের টাকার লোভ কোন না কোন নেতার আছে। সেটা নিয়ে অন্য কোন একদিন লিখব ইনশাআল্লাহ। 
ফিরে আসি সালাহউদ্দিন আহমেদ প্রসঙ্গে। ২০১৫ সালের ১০ই মার্চ উত্তরার একটি বাসা থেকে তুলে নেওয়া হয় তাঁকে। ৬১ দিন আয়নাঘরে রাখা হয়েছিল তাকে। এরপর তাকে ভারতে পাঠিয়ে সেখানে অবৈধ অনুপ্রবেশ দেখানো হয়। গল্পটা শুধুই এমন হলে পারত। হাসিনার নির্দেশ ছিল খুন করে ফেলানোর। কিন্তু কিভাবে তাকে ভারত গেলেন? কে তাঁকে হাসিনার হাত থেকে বাঁচিয়ে ভারত পাঠালেন??? ব‍্যক্তিটির নাম এস আলম। অনেকে বলতে পারেন তাহলে তো এস আলম অনেক মহান ব‍্যক্তি!!!

হ‍্যা অবশ্যই তিনি মহান। এবং তিনি শুধু এত অল্প মহান নন, এতদিন ভারতে সালাহউদ্দিন আহমেদের থাকা খাওয়া সহ সকল বন্দোবস্তের ব্যবস্থা করেছিলেন ও দেখভাল করেছিলেন এস আলম। এতে প্রমাণিত হয় যে আলম সাহেব মহানের উপর মহান!!! আর এই চক্রের শেষ ধাপ ছিল সালাহউদ্দিন আহমেদের দেশে ফিরে এস আলমের গাড়িতে উঠে বসা। যদিও তখন আমরা ন‍্যারেটিভ বানিয়েছিলাম ট্রাফিকের কারনে গাড়ি মুভ করছিল না, তাই হেঁটে গিয়ে না জেনে ঐ গাড়িতে গিয়ে উঠেছিলেন। 
কিন্তু সম্প্রতি এস আলম সাহেব এক আলাপ চারিতায় সালাহউদ্দিন আহমেদকে নতুন বাংলাদেশে তুরুপের তাস হিসেবে উপস্থাপন করেন। এবং সালাহউদ্দিন আহমেদের পিঠে সওয়ার হয়ে নতুন বাংলাদেশে ফিরে আসার স্বপ্ন প্রকাশ পায়। একজন ব‍্যবসায়ি যার সাথে শেখ পরিবার ও র এর খুব ক্লোজ কানেকশন তার এমন পরীকল্পনা দেশ ও দলের জন‍্য এক বিশাল হুমকি বলে আমি মনে করি। 

সালাহউদ্দিন আহমেদের একজন মহাসচিব হওয়ার মত সকল যোগ্যতা রয়েছে বলে আমি আগেও মনে করতাম এবং এখনো মনে করছি। কিন্তু কেউ যদি এটিকে একটি লাভজনক বিনিয়োগ হিসেবে মনে করেন তবে দেশ ও দলের স্বার্থে সে সিদ্ধান্তকে আমি চ্যালেঞ্জ করছি। এবং দলকে গভীর উদ্বেগের সাথে বিষয়টিকে বিবেচনা করার দাবি জানাচ্ছি।