
বহিষ্কৃত যুবদল নেতা মাধবকে ঘিরে সিলেটে নানা আলোচনা। অপকর্ম করে গা ঢাকা দেয় সে। পালিয়ে যায় সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জে। তবু শেষ রক্ষা হলো না। সেখান থেকে পুলিশ রোববার সকালে মাধবকে গ্রেপ্তার করেছে। আর তার গ্রেপ্তারের পর নগরের জিন্দাবাজারে থাকা মাধবের সহযোগীরাও গা ঢাকা দিয়েছে। মাধব ছিল সিলেট জেলা যুবদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক। বাড়ি সিলেট নগরের প্রাণকেন্দ্র জিন্দাবাজারের পাশে দাড়িয়াপাড়ায়। আওয়ামী লীগের সময়ে জিন্দাবাজারে অপরাধ ঘটাতো আলোচিত ক্যাডার পীযূষ কান্তি দে’র বাহিনী। গত ৭ মাস ধরে জিন্দাবাজারে আধিপত্য খাটাচ্ছে জয়দ্বীপ চৌধুরী মাধব। সঙ্গে তার অপরাধ বাহিনীও। শুক্রবার রাতে হঠাৎ করে উত্তপ্ত সিলেট নগরের জিন্দাবাজার। হকাররা বিক্ষুব্ধ। সড়ক অবরোধ করে করছিলো বিক্ষোভ। তাদের মুখে কেবল একটি নামই উচ্চারিত হয়। নামটি হলো মাধব। তখন অনেকেরই কাছে মাধব নামটি ছিল অচেনা। কিন্তু হকারদের মুখে অপরাধের বর্ণনা শোনার পর মাধবকে ঘিরে কৌতূহল দেখা দেয় সিলেটে। ছাত্রদল থেকে যুবদলে মাধব। নগরের জিন্দাবাজারের অপরাধকেন্দ্রিক একটি গ্রুপের নেতা। এক সময় সে পুরানলেন গ্রুপের নেতা ছিল। সম্প্রতি সে গ্রুপ বদল করেছে। জিন্দাবাজারে আরেক নেতার শেল্টারে গিয়ে একের পর এক অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছিলো। এই অবস্থায় হকারদের জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় করা হতো।
শুক্রবার রাতে এক হকারকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনায় হকাররা সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ করেছে। মাধবকে গ্রেপ্তারে আল্টিমেটাম দিয়েছে। ঘটনায় মাধব আলোচিত হওয়ায় যুবদলের কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। পরে এ ঘটনায় থানায় মামলা করেন হকার কাজল মিয়া। মামলা দায়েরের পরপরই গ্রেপ্তার এড়াতে সিলেট ছেড়ে পালায় মাধব। গতকাল বিকালে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে মাধবকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছেন। পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়- শুক্রবার বেলা ২টার দিকে হকার কাজল মিয়াকে নগরের জেলা পরিষদের সামনে থেকে মাধব ও তার সহযোগীরা অপহরণ করে। একটি সিএনজি অটোরিকশাযোগে তারা হকার কাজলকে অপহরণ করে নিয়ে আসে নগরীর জিন্দাবাজারের সিতারা ম্যানশনে। সেখানে তাকে ছুরি দিয়ে ভয় দেখিয়ে হকার কাজল মিয়ার কাছ থেকে ১৬ হাজার ৫০০ টাকা আদায় করে।
একপর্যায়ে মুক্তিপণ হিসেবে আরও ৩০ হাজার টাকা দাবি করে। এই টাকা দিতে না পারায় হকার কাজলকে সন্ত্রাসী মাধব ও লোকজন ওই স্থানে বেধড়ক মারধর করেছে। এ ঘটনায় নগরের সুরমা মার্কেটের বাসিন্দা কাজল মিয়া বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মাধবসহ ৭/৮ জনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেন। পুলিশ জানায়- ঘটনার পর হকাররা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে মাধব সিলেট ছেড়ে পালায়। তবে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল সকালে সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জের দেবকোনা এলাকা থেকে মাধবকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে- গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মাধব চাঁদাবাজির কথা স্বীকার করেছে। একইসঙ্গে জিন্দাবাজারে তার অপরাধ সহযোগীদের নামও বলে দিয়েছে। সহযোগীদের দিয়েই মাধব জিন্দাবাজারে চাঁদাবাজি, ছিনতাই করতো। শুক্রবারের পর থেকে অপরাধীরা গা ঢাকা দেয়ায় জিন্দাবাজারে স্বস্তি বিরাজ করছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। নগরের কোর্ট পয়েন্ট, জিন্দাবাজার এলাকার হকাররা জানিয়েছেন- ৫ই আগস্টের পর যখন হকাররা ফুটপাথ ও সড়কে অবস্থান নেন তখন থেকেই চাঁদাবাজি শুরু করে মাধব ও তার সহযোগীরা। তারা হকারদের কাছ থেকে প্রতিদিন চাঁদাবাজি করে। মাঝে মধ্যে অনেক হকার চাঁদা দিতে পারে না। তখন তাদের ধরে নিয়ে এসে নির্যাতন করা হয়। গত এক মাসে অন্তত ১০-১২ জন হকারকে ডেকে এনে নির্যাতন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। নির্যাতনের পর হকারদের কাছ থেকে মুক্তিপণও আদায় করা হয়েছে।