Image description
 

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন দল গঠনের পর থেকে চলছে নানান আলোচনা। জনগণের প্রত্যাশা, কৌশলগত পরিকল্পনা ও বাস্তবতা কতটুকু মিলছে, এ নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন রুমিন ফারহানা। এক টকশোতে তিনি বলেন, "রাজনৈতিক যে নতুন দলটি গঠিত হয়েছে, তারা এখন কৌশলের দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে।"

রুমিন ফারহানা স্পষ্ট করেন, "বাংলাদেশের আপামর সাধারণ জনগণ কিন্তু নতুন দলটির উপর অনেকখানি আস্থা এবং বিশ্বাস রাখতে চেয়েছিল।" তিনি আরও বলেন, "তারা সত্যিকার অর্থে বিশ্বাস করতে চেয়েছিল যে বাংলাদেশে একটি নতুন ধারার রাজনীতি সূচিত হতে যাচ্ছে।" কিন্তু ছয় মাস পর্যবেক্ষণের পর তার প্রশ্ন, "তারা যা বলছে এবং তারা যা করছে, এই দুটোর মধ্যে মিল কতটুকু, অমিল কতটুকু?"

রুমিন ফারহানা উল্লেখ করেন, "তারা এখন কৌশলের দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। তারা তিন ধরনের কমিটি করতে চাইছে।" প্রথমত, "একটি কমিটি হচ্ছে তাদেরকে নিয়ে যারা নির্বাচন করবে এবং তারা তাদের এলাকায় চলে যাবে এবং এলাকা গোছানোর কাজ করবে।" 

 

দ্বিতীয়ত, "সেকেন্ড কমিটি যেটা হবে, সেটা দলকে এবং সংগঠনকে আরো বেশি শক্তিশালী করার জন্য কাজ করবে।" তৃতীয়ত, "থার্ড যে কমিটি হবে, সেটা ন্যাশনাল পলিটিক্স নিয়ে কাজ করবে।" তিনি বলেন, "এই যে তিনটা কমিটি করা এবং বিষয়গুলোকে গুছিয়ে আনা, এজন্য সময়ের প্রয়োজন। ৩০০টি আসনে প্রার্থী ঠিক করা, সেই প্রার্থীদের একটা শক্ত বেইজ তৈরি করা,এই সকল কিছুর জন্য সময়ের প্রয়োজন।"

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, "সেপ্টেম্বর মাসে তারা বিভিন্ন জেলায় জনসমাবেশ করেছিল। তখন সরকারের তরফ থেকে একটা সার্কুলার জারি হয়েছিল যে তাদেরকে যেন ডিসিএসপিরা প্রোটোকল দেয়, নিরাপত্তা বিধান করে।
রুমিন ফারহানার প্রশ্ন, এই ধরনের সংস্কৃতিকে আমরা অতীতে দেখেছি না?" তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, "গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ যখন সভা-সমাবেশ করতো, তখন তারা রাষ্ট্রীয় আনুকূল্য নিয়ে যেত, রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করতো।" নতুন দলও কি একই পথে হাঁটছে?

চাঁদাবাজির অভিযোগের প্রসঙ্গে বলেন, "একটা কল রেকর্ড সম্প্রতি ফাঁস হয়েছে... সেখানে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এক লাখ টাকা দাবি করেছেন।" তার প্রশ্ন, "এই কার্যকলাপগুলো কি আমাদের আগের রাজনীতিকেই মনে করিয়ে দেয় না?"

রুমিন ফারহানা বলেন, "এক্সিস্টিং যে সংবিধানটা আছে, সেখানে কি ভোটের অধিকারের কথা বলা নাই? সেখানে কি বাকস্বাধীনতার কথা বলা নাই? সেখানে চিন্তার স্বাধীনতার কথা বলা আছে, সেখানে কোন রকম মানবাধিকার লঙ্ঘন যাতে না হয় সেই ব্যাপারে গ্যারান্টি দেয়া আছে, সেখানে দেশের মালিকানা জনগণের কাছে সেটাও বলা আছে।" তাহলে পরিবর্তন কোথায় দরকার? তিনি যুক্তি দেন, "যেই কথাগুলো এতদিন কেতাবে ছিল, কিন্তু কাজে ছিল না, সেগুলোকে তারা কাজে পরিণত করতে চাইছেন।"


তিনি বলেন, "মানুষ কিন্তু সত্যি সেকেন্ড রিপাবলিক, প্রেসিডেন্ট আর প্রাইম মিনিস্টারের ক্ষমতার ভারসাম্য, আর্টিকেল ৭০—এগুলো নিয়ে একেবারেই চিন্তিত না।" বরং জনগণের মূল উদ্বেগ হলো, "তারা জিনিসপত্র ঠিকমতো ন্যায্যমূল্যে পাচ্ছে কিনা, রমজান মাসে তাদের পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের জন্য একটা করে ডিম দিতে পারছে কিনা, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন আছে।"

তিনি স্পষ্ট করে বলেন, "৯০ শতাংশ মানুষের কনসার্ন এগুলো, তাদের জন্য বাংলাদেশে সেকেন্ড রিপাবলিক হচ্ছে না, থার্ড রিপাবলিক হচ্ছে না, অন্য রিপাবলিক হচ্ছে কিনা তাতে তাদের কিচ্ছু যায় আসে না।"

নতুন রাজনৈতিক দল নতুন কিছু নিয়ে এসেছে, নাকি পুরনো ধারার পুনরাবৃত্তি ঘটাচ্ছে, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। রুমিন ফারহানা মনে করেন, "যদি তারা বাস্তবিক অর্থে সংবিধান অনুযায়ী কাজ করে, জনগণের স্বার্থকে সবার ওপরে রাখে, তাহলে মানুষের ভোট এবং সমর্থন অটোমেটিক্যালি তাদের কাছে যাবে।" এখন দেখার বিষয়, তারা সত্যিকার অর্থে কী করতে চায়।