
ডিসেম্বরের শুরুতেই হতে পারে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই সময়ে নির্বাচন আয়োজন করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে সরকার। এই লক্ষ্য ধরে কিছুদিনের মধ্যেই নির্বাচনী রোডম্যাপ প্রকাশ করতে পারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সরকারি সূত্র মানবজমিনকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। ৫ই আগস্টে বিরল জন-অভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইতিমধ্যে সাত মাস পার করেছে। শুরুতে সংস্কারে গুরুত্ব দেয়ায় এখন পর্যন্ত নির্বাচনী রোডম্যাপ প্রকাশ করতে পারেনি সরকার। এ বছরের মধ্যেই নির্বাচন দিতে এবং সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রকাশ করতে সরকারের প্রতি বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল চাপ দিয়ে আসছে। নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা হচ্ছে এমন অভিযোগও করছে কোনো কোনো রাজনৈতিক দল। দলগুলোর এমন দাবি আর অভিযোগের কারণে সরকারে কিছুটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও একাধিক বৈঠক এবং বক্তৃতায় ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের আশ্বাস দিয়েছেন। অতি প্রয়োজনীয় এবং জরুরি সংস্কারগুলোর ক্ষেত্রে জাতীয় ঐকমত্য তৈরি হলে এই সময়ের মধ্যেই নির্বাচন হতে পারে বলে সরকারপ্রধান উল্লেখ করেছেন। আরও কিছু সংস্কার কাজ করতে হলে আগামী বছরের মার্চে গড়াতে পারে নির্বাচন সরকারের তরফে এমন ইঙ্গিতও দেয়া হয়েছে। সরকারের একাধিক উপদেষ্টা ও প্রেস সচিব শফিকুল আলমও নির্বাচনের দিনক্ষণ বিষয়ে এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন। সম্প্রতি রাওয়া আয়োজিত অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানও ডিসেম্বরে নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে আগের দেয়া বক্তব্য পুনরায় তুলে ধরেন।
সরকারি সূত্র জানিয়ে, নানা পক্ষের দাবির কারণে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন আয়োজনে সর্বোচ্চ জোর দেয়া হচ্ছে। নির্বাচন আয়োজন বিলম্বিত হলে পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে, রাজনৈতিক দল এবং সাধারণ মানুষের মাঝেও অসন্তোষ তৈরি হতে পারে এমনটাও মনে করছেন সরকার সংশ্লিষ্ট কেউ কেউ। এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস কোনো ধরনের বিতর্কের মধ্যে যেতে চাইছেন না। তিনি দলগুলোর চাওয়াকেই গুরুত্ব দিতে চান। জাতীয় ঐকমত্য গঠনে আয়োজিত দলগুলোর বৈঠকেও তিনি এমন বার্তা দিয়েছেন।
ডিসেম্বরেই নির্বাচন হতে পারে এমনটা ধরে নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও প্রস্তুতি শুরু করেছে। বিএনপি বর্ধিত সভা করে সারা দেশের নেতাকর্মীদের নির্বাচনী বার্তা দিয়েছে। জামায়াতের পক্ষ থেকে দেশের বেশির ভাগ আসনে নিজেদের প্রাথমিক প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। সদ্য প্রকাশিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি দ্রুত নির্বাচন প্রস্তুতির দিকে যাচ্ছে। আলোচনা আছে চলতি রমজানের মধ্যেই দলটি তাদের নিবন্ধন ও প্রতীক বরাদ্দ নিশ্চিত করতে চেষ্টা চালাচ্ছে। এ ছাড়া সমমনা আরও কয়েকটি দলের সঙ্গে নির্বাচনী জোট করার বিষয়েও আলোচনা করছে নতুন দল।
ওদিকে নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশনও কাজ শুরু করেছে। হালনাগাদ ভোটার তথ্য গতকাল প্রকাশ করা হয়েছে। একটি সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে গতকাল প্রধান নির্বাচন কমিশনার নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের শপথ পাঠ করিয়েছেন। সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে সব দলের ঐকমত্য এবং সহযোগিতা বিষয়টিও তিনি তুলে ধরেছেন।