Image description

বৈশাখী রানী। ১৭তম বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (বিজেএস) নিয়োগ পরীক্ষায় সুপারিশপ্রাপ্ত সহকারী জজ। তার বাবা বাগেরহাট জেলা জজ কোর্টের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী (সাঁটলিপিকার)। বাবার অনুপ্রেরণায় মেধাতালিকায় অষ্টম স্থান অধিকার করেছেন তিনি।

সহকারী জজ হওয়ার অভিজ্ঞতা জানিয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বৈশাখী বলেন, ‘আমার বাবা বাগেরহাট জেলা জজ কোর্টের জেলা জজের সাঁটলিপিকার। বাবা যেহেতু জজ কোর্টের কর্মচারী ছিলেন, জজদের প্রতি বাবার অন্যরকম সম্মান, শ্রদ্ধা, অনুভূতি কাজ করতো। বাবা সবসময় চাইতেন তার সন্তান হিসেবে আমি যেন জজ হই। এজন্য বাবা আমাকে ছোটবেলা থেকে অফিসে নিয়ে যেতেন। আমি এজলাসে জজের চেয়ারে উঠতে চাইতাম। কিন্তু বাবা আমাকে কোনো দিন এই চেয়ারে বসতে দেননি। বাবার এক কথা, যেদিন এই চেয়ারের যোগ্য হবে, সেদিন এই চেয়ারে বসবে। বাবার ইচ্ছা, অনুভূতিকে সম্মান জানিয়ে ছোট বেলাতেই লক্ষ্য স্থির করি জজ হব।’

তিনি আরও বলেন, ‘জেএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ+ পাওয়ায়, নবম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার সময় সবাই বললো সায়েন্স বা কমার্সে ভর্তি হতে। কিন্তু আমার এক কথা, আমি পড়লে আর্টসেই পড়ব। আমি জজ হব ৷ তখন জানতাম না যে, গ্রুপ চেঞ্জ করেও ‘আইন’ পড়া যায়। এদিকে আমাদের স্কুলেও আর্টস ছিল না। আমি খুব জেদ করায় মাত্র ১৩ জন নিয়ে স্কুলে মানবিক বিভাগ  খোলা হয়। তবে স্কুলের অসীম দাস স্যার শর্ত দিলেন, ‘তোকে কিন্তু জজ হয়ে আমাদের দেখাতে হবে।’

বৈশাখীর ভাষ্য, ‘ভর্তি পরীক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ৩১৪তম স্থান অর্জন করি। কিন্তু আমাকে ঢাবি ছাড়তে হয় কারণ সেখানে 'আইন' পাইনি। শুধু আইন পড়বো বলে ঢাবি ছেড়ে জবিতে ভর্তি হই।  অ্যাকাডেমিক লাইফে এলএলবি এবং এলএলএম উভয় পরীক্ষাতেই ২য় ছিলাম।’

পরীক্ষার প্রস্তুতি কীভাবে নিয়েছেন জানতে চাইলে বৈশাখী বলেন, ‘মাস্টার্সের পর থেকেই মূলত জুডিশিয়ারির পড়াশোনা শুরু করি। টানা ১ বছর পড়ালেখা করি। কোনো ধরনের সোশ্যাল মিডিয়াতে অ্যাক্টিভ ছিলাম না। প্রতিদিন সময়কে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতাম যে, এই সময়ের মধ্যে এটা করতে না পারলে আমি জজ হতে পারবো না।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রিলির আগে প্রতিদিন ৬ ঘণ্টা ঘুমাতাম।  ভোর ৪টায় উঠে রাত ১০টায় ঘুমাতে যেতাম। সবসময় মনে হত, ফাঁকি দেওয়া যাবে না। যতটুকু পড়বো, এবসোলিউট পড়বো। আমার ব্যাকগ্রাউন্ড যেহেতু আর্টস ছিল, তাই রেগুলার অঙ্ক, বিজ্ঞান পড়তাম। লিখিত আর ভাইভার জন্য আলাদাভাবে কখনো পড়া হয়নি। আমি প্রিলির আগে সব গুছানোর চেষ্টা করেছি। এরপর জাস্ট রিভাইস করেছি আর মোডিফাই করেছি।’ 

প্রস্তুতির সময় মানসিক চাপ সামলানো এবং মোটিভেশন ধরে রাখার বিষয়ে বৈশাখী বলেন, ‘বাবা আমাকে সবসময় সাহস দিয়েছেন। আমার পরিবার ভীষণ রকম সাপোর্টিভ। যে কোনো ঝড় ঝাপটার আঁচ কখনো আমার গায়ে লাগতে দেয়নি। বাবা ভালো গান ও কবিতা আবৃত্তি করেন। যখন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকতাম, বাবা ফোন করে গান বা কবিতা শোনাত। বাসার কোনো ঝামেলার কথা আমাকে জানানো নিষেধ ছিল। আমার প্রিলি পরীক্ষার আগের দিন আমার মা এর পা ভেঙে যায়। কিন্তু আমাকে জানানো হয়নি। মা খুব স্বাভাবিকভাবে কথা বলেছেন। এক মাস পড় যখন মা সুস্থ হয়, তখন জানতে পারি পা ভাঙার কথা।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার বাবার একটা কথা আমাকে ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত করত। একদিন বাবা আমাকে বলেছিলেন, ‘মা, তোমার থেকে কিছু চাই না, যেদিন আমাকে সবাই বলবেন, আপনি তো জজের বাবা, সেদিন হবে আমার জীবনের সেরা গিফট'। যখনই মানসিকভাবে ভেঙে পড়তাম, বাবার বলা এই কথা টা সবসময় মাথায় ঘুরপাক খেত। তাই পিছু হটার চিন্তা কখনো মাথায় আসেনি।’     

ভবিষ্যতে যারা বিচারক হতে চায়, তাদের প্রতি আপনার পরামর্শ কী থাকবে জানতে চাইলে এই সহকারী জজ বলেন, ‘যারা বিচারক হতে চান তাদের বলবো, নিজের মতো করে প্ল্যান করে পড়েন।  বেশি পড়ার থেকে, যতটুকু পড়বেন সেটা ভালো করে পড়বেন। খাতার প্রেজেন্টেশনের দিকে নজর রাখতে হবে। বাংলা না কি ইংরেজিতে পরীক্ষা দিবেন, সেটা কোনো বিষয় না। আমি নিজেই সবগুলো পরীক্ষা বাংলায় দিয়েছি। কে কি বলল, তাতে কান না দিয়ে, একনিষ্ঠভাবে সৃষ্টিকর্তার নাম নিয়ে পড়াশোনা করুন। সৃষ্টিকর্তা উত্তম পরিকল্পনাকারী। ব্যর্থতাকে শক্তি হিসেবে নিয়ে, সময় নষ্ট না করে এগিয়ে যাওয়া উচিত ‘