Image description
 

গেল আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে করোনার ভুয়া সার্টিফিকেট কাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে সেসময় সারাদেশে আলোচনায় আসেন তৎকালীন রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহেদ।

সম্প্রতি সেই শাহেদ সেসময়ের বিস্তারিত ঘটনা নিয়ে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সাক্ষাৎকারে বিস্তারিত কথা বলেছেন।

উপস্থাপকের, এই যে আপনাকে নিয়ে আমরা মিডিয়াতে দেখলাম যে আমি যেটা বললাম শুরুতে একটা মিডিয়া ট্রায়াল; যেভাবে আপনার মুখ থেকে কোনও বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করা হয়নি। একাধারে বলে দেওয়া হয়েছিল যে আপনি এই রিজেন্ট কেলেঙ্কারির খলনায়ক আপনি। আপনি করোনা টিকার সার্টিফিকেট আপনি জাল করেছিলেন এবং আপনি একটা হাসপাতাল করেছিলেন সেই হাসপাতালের প্রকৃত লাইসেন্স ছিল না এবং আপনি আওয়ামী লীগের সাথে সংশ্লিষ্টতা কাজে লাগিয়ে অনেক ধরণের ধান্দা বাগিয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেল যে আওয়ামী সরকারও কিন্তু আপনাকে জেলে ভরতে বা আপনার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের মামলার রায় আপনার বিপক্ষে আনতে তারা কিন্তু একটুও কার্পণ্য করেনি। অর্থাৎ যে দলটির জন্য আপনি টকশোতে গিয়ে গলা ফাটালেন, যে দলটির জন্য আপনি দেশবাসীর কাছে বাটপার বা চিটার হিসাবে পরিচিত হলেন সেই দলটি কিন্তু বিপদের সময় আপনার পাশে দাঁড়ায়নি৷ বরং নানা ভাবে কিন্তু আপনাকে যখন কালিমালিপ্ত করা হচ্ছিল সেটাতে তারা এক ধরনের জোট করেছে রাষ্ট্রীয় ভাবে। আজকে আপনার কাছ থেকে আমি জানতে চাই যে এই যে আপনাকে নিয়ে যা কিছু হল আপনি প্রতারণার অভিযোগে অভিযুক্ত হলেন, আপনারা সাজা হল এত কিছু হয়ে গেল আপনাকে নিয়ে। এই সব কিছু কেন ঘটল? কীভাবে ঘটল ?আপনার দায় কতটুকু স্বীকার করবেন আপনি।

 

জবাবে শাহেদ বলেন, করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরুতেই আমার ধারনা,এপ্রিল মে থেকে আমাকে তৎকালীন স্বাস্থ্য সচিব আমাকে ফোন করেন। রাত আনুমানিক ১০ টা ৩০  থেকে ১১ টায় উনি ফোন করে আমাকে বললেন যে, বেসরকারি হাসপাতালে কেউ আগাই আসছে না আপনারতো ২টা হাসপাতাল আছে। এই হাসপাতাল ২ টা আপনাকে করোনার জন্য দিতে হবে।

এই মুহূর্তে আমি করোনার জন্য দিতে পারছি না উল্লেখ করে শাহেদ আরো বলেন, আমি বললাম যে দেখেন, আমার হাসপাতালগুলোতে এই মুহূর্তে আমি করোনার জন্য দিতে পারছি না। আমি এই মুহূর্তে দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব হবে না।

উনি (স্বাস্থ্য সচিব) বললেন যে না একপ্রকার জোর করলেন। জোর করে বললেন যে না আপনাকে দিতে হবে। তো রিজেন্ট হাসপাতালে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মালিক কিন্তু আমি একা নই। রিজেন্ট হাসপাতালে প্রকৃত মালিক কিন্তু আরও ৫/৭ জন আছে। আমি সবার সাথে কথা বললাম। কথা বলার পরে উনারা পরের দিন  1/2 জন ডাইরেক্টরের নেতৃত্বে ভিজিটে আসেন হসপিটাল ভিজিটে আসেন। ভিজিট করে গেলেন ওনারা।ভিজিটের পরে উনারা গিয়ে বললেন যে আমরা এই ২ টাকে নিয়ে শুরু করব।

তো পরবর্তী দিন আমাকে ডাকা হল স্বাস্থ্যের ডিজি অফিসে। আমি এর আগে কোনদিনও স্বাস্থ্যের ডিজি অফিসে যাইনি।তো আমি গিয়ে দেখলাম সাজেদা ফাউন্ডেশন এবং আমাকে এই দু জনকে ডাকা হয়েছে, যে বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারি করোনা হাসপাতাল হিসেবে ডেডিকেটেড কাজ করার জন্য।

আমাদেরকে একটা চুক্তিতে স্বাক্ষর করানো হল। আপনি চুক্তিতে দেখে থাকেন চুক্তিতে কোনও টার্ম এন্ড কন্ডিশন নেই। শুধু একটা কথা হল যে এটা ডেডিকেটেড হিসাবে কাজ করা হবে।আমরা দুজনেই স্বাক্ষর করলাম।

ওইখানে দেখানো হয়েছে অনেক সচিব মন্ত্রী ছিল। আসলে এখানে সচিব মন্ত্রী কেউ ছিল না এটা উনাদের একটা মিটিং ছিল। যেহেতু ডিজি রুমে আমাদের স্বাক্ষর হয়েছে।এখানেও উপস্থিত ছিলেন ওনারা ।আমাদের জন্য এসেছেন তা কিন্তু না অন্য কাজে এসেছিলেন। 

উনারা আমাদের এই সাজেদা ফাউন্ডেশন এবং আমার সাথে এই চুক্তির সময় আমার সাথে তারা ছিলেন। চুক্তিতে উল্লেখ হল যে ডাক্তার, নার্স সব প্রোভাইড করবে গভর্নমেন্ট এবং  এবং আরও একটা জিনিস চুক্তিতে বলা হল সেটা হচ্ছে যে, এই যত টেস্ট করবেন নিপসম থেকে।

যাই হোক এর পরে এসে দেখি আমার হাসপাতালে ভাঙচুর হয়ে গেছে। অলরেডি হাসপাতাল ভাঙচুর করে ফেলেছে এলাকার লোকজন। এখানে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল করতে দেবে না।

পরে এই অবস্থাতে  করোনা ডেডিকেটেড যখন হসপিটাল করতে দেবে না ভাঙচুর হয়ে গেছে দুটি হসপিটালে,তখন কিন্তু র‌্যাব গিয়ে ফার্স্ট প্রোটেকশন দিয়েছে। যে না এখানে হসপিটাল চলবে এবং আপনি জানবেন বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী কিন্তু আমাদের হসপিটাল রিসিভ করে। 

আমাদের ফ্রন্টলাইনে আট জন মারা গেছে উল্লেখ করে শাহেদ আরো বলেন, এই সব কিছু কিন্তু গভর্নমেন্ট এর কাছে রেকর্ড ছিল। ভালই চলছিল জুলাই ,আগস্ট, সেপ্টেম্বর। জুন পর্যন্ত সব ঠিক ছিল।

জুনের ২৫ তারিখ অথবা ২৬ তারিখ তৎকালীন সিএমএইচডির কাছে যাই।

সিএমএসডির ছিলেন তখন ব্রিগেডিয়ার শহিদুল্লাহ সাহেব। উনার বদলির অর্ডার হয়েছে তা আমি উনাকে জিজ্ঞেস করলাম কি বদলি কেন?

উনি বললেন যে দেখেন আমি আমাকে একটা টিকা কিনতে বলা হচ্ছে, অ্যাস্ট্রোজেনিকার টিকা।এই টিকাটা উনি আমাকে দেখালেন। কাগজ দেখালেন, ল্যাবের রিপোর্ট দেখালেন যে এই টিকাটা ইন্ডিয়া থেকে আনা হবে।

আমার ধারণা এটা যদি আমরা মানুষকে দেই মানুষ একটা অসুস্থতার মধ্যে পড়বে ভবিষ্যৎতে। আমার অন্যায় ছিল ওই ল্যাবের রিপোর্টটার ছবি আমি তুলেছিলাম ।রিপোর্টটা আমি ছবি তুলেছিলাম এবং ছবি তুলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের কিছু উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাকে আমি ছবিটা দিয়েছি।দিয়ে আমি নিচে লিখলাম, দেখেন এটা আমার মনে হয় আপনারা বিষয়টি দেখেন। এটি বাংলাদেশের মানুষের জন্য ক্ষতি হয়ে যাবে।তার পরে আমাকে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা থেকে বলা হয়, এই বিষয়ে আমি কোনও কথা বলবেন না এবং আমাকে বেক্সিমকোর থেকে একদম সরাসরি ফোন করা হয়। আমাকে যে আপনি এটা নিয়ে কেন কথা বলছেন?


আপনি দেখবেন আমি কিন্তু এই বিষয়টি নিয়ে গাজী টেলিভিশনের একটি টক শোতে আমি বলেছিলাম এবং ঐদিন রাত্রে বেলায় আমাকে একটি গোয়েন্দা সংস্থা থেকে বলা হয় যে আপনি কাজটা ভালো করছেন না।

পরের দিন অর্থাৎ পাঁচ তারিখে আমার হাসপাতাল থেকে সকল সরকারি ডাক্তার নার্স উইথ ড্র করে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সকল ডাক্তার নার্স যখন উইথ ড্র করে নিয়ে যাওয়া হয় আমি তখন বুঝতে পারছিলাম না কী করব। আমি তখন স্বাস্থ্যের ডিজির সঙ্গে কথা বললাম। যে কী হচ্ছে এটা ?

তখন উনি বললেন যে আমি বুঝতে পারছি না কী হচ্ছে৷ এটা আমার উপর আদেশ সকল ডাক্তার নার্স সরিয়ে নেওয়া। তখন আমাদের দুইটা  হাসপাতাল মিলিয়ে প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ জন রোগী ভর্তি এবং ৬ তারিখে আমাদের এখানে রেড করে। ওদের ডাক্তার-নার্স কিন্তু ওরা পাঁচ তারিখে উইথড্র করে নিয়েছে। ছয় তারিখে রেড দিয়ে পরে  এলিগেশন দেওয়া হল।

আমি দোষ ছিল আমি করোনার সার্টিফিকেট জালিয়াতির দিয়ে দিয়েছে।তারপরে আমার পরে আরেকটা দিক হলো আমার হসপিটালের লাইসেন্স নই।লাইসেন্স আমার না লাইসেন্স অনেক বেসরকারি হাসপাতালে ছিল না।

কারণ একটা ঐ যে রেসিডেন্সিয়াল এরিয়া তে হসপাতাল করলে লাইসেন্স দেওয়ার বাগ ছিল।পরবর্তীতে আমাদের এই ঘোষণা করার পর এই বাগ তুলে দেওয়া হয়৷ কিন্তু আমরা কিন্তু ,প্রতি বছর রিনিউ দিয়ে আসছিলাম এটা। কিন্তু তারা জানে যে সব করেছে।

সেসময় বসুন্ধরা গ্রুপও রেসিডেন্সিয়াল এরিয়াতে একটি হাসপাতাল করেছিল, কিন্তু তাদের নামে কিন্তু সেসময় কোন কিছু হয় নি।ধরা হলো আমাকে।

তাদের বিরুদ্ধে তো এ রকম কোনও অভিযোগ ছিল না যে তারা আপনার কি বলে এই লাইসেন্স ছাড়া হাসপাতাল করেছে বা করছে তাঁদের মধ্যে। কিন্তু এ রকম কোনও অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ আসলো আমার উপর। কারণ আমি সালমান এফ রহমানের টার্গেট হয়ে গিয়েছিলাম। সালমনের টার্গেট হয়ে গেলাম আমি একদম পুরোপুরি উনার টার্গেট হয়ে গেলাম আমি।এবং শুধু উনি না উনিসহ সংশ্লিষ্ট লোকজনের টার্গেট হয়ে গেলাম ।