
ফেনীতে যৌন হয়রানির শিকার এক মাদ্রাসাছাত্রীর বক্তব্যের ভিডিও ধারণ করে ইন্টারনেটে ছড়ানোর মামলায় আট বছরের সাজাপ্রাপ্ত সোনাগাজী মডেল থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেন ওই মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন। তিনি মামলাটিকে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক উল্লেখ করে সম্প্রতি ঢাকার জেলা প্রশাসকের কাছে এই আবেদন করেন।
২০১৯ সালের এপ্রিলে ওই ছাত্রীর বক্তব্যের ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা সারা দেশে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছিল। এ ঘটনায় করা মামলার রায় হয় ২০১৯ সালের ২৮ নভেম্বর। ঢাকার সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল রায়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৬ ধারায় (অনুমতি ছাড়া ভিডিও ধারণ) মোয়াজ্জেম হোসেনকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২৯ ধারায় (ওই ভিডিও প্রচার) তিন বছরের কারাদণ্ড দেন। একই সঙ্গে তাঁকে প্রতিটি ধারায় ৫ লাখ করে মোট ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেন ট্রাইব্যুনাল। জরিমানার অর্থ ওই ছাত্রীর পরিবারকে দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। জরিমানা দিতে ব্যর্থ হলে মোয়াজ্জেমকে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।
ওসি মোয়াজ্জেম পরে হাইকোর্ট থেকে জামিনে কারাগার থেকে মুক্তি পান। তিনি এখনো জামিনে আছেন।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ওই মাদ্রাসাছাত্রী সোনাগাজী থানায় গিয়েছিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষের যৌন হয়রানির প্রতিকার চাইতে। কিন্তু তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন প্রতিকারের বদলে একই ধরনের হয়রানি করেছেন বলে প্রমাণিত হয়েছে। তাকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়। সাক্ষীরা বিশেষ করে ওই ছাত্রীর দুই বান্ধবী সাক্ষ্যে বলেছে, তার মুখ থেকে বারবার হিজাব সরিয়ে দিয়েছেন মোয়াজ্জেম। তাকে বিভিন্ন ধরনের বিরক্তিকর প্রশ্ন করা হয়েছে। এসব ভিডিও করা হয়েছে। সাক্ষ্য-প্রমাণ ও অভিযুক্ত ওসির বক্তব্যে ভিডিও করার বিষয়টি প্রমাণিত।
ভিডিও করে ছড়ানোর অভিযোগে সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে ঢাকার সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে ২০১৯ সালের ১৫ এপ্রিল মামলাটি করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামলার তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআইয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার রীমা সুলতানা ওই বছরের ২৭ মে মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দেন। তাতে বলা হয়, ওই ছাত্রীকে থানায় জেরা করার দৃশ্য নিজের মোবাইল ফোনে ধারণ করে তা প্রচার করেন ওসি মোয়াজ্জেম। তদন্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে ওই দিনই মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল।
২০১৯ সালের ১৬ জুন রাজধানীর শাহবাগ থেকে মোয়াজ্জেমকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন জামিন নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠান সাইবার ট্রাইব্যুনাল। মামলা প্রত্যাহারের আবেদনে মোয়াজ্জেম এটিকে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা উল্লেখ করেন। আবেদনে আরও বলা হয়েছে, পিবিআইয়ের অভিযোগপত্র দাখিল, তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন এবং সাজা আইন অনুসরণ করে হয়নি। ঘটনাস্থলের সাক্ষীদের পরীক্ষা না করে শুধু ভাবির জবানবন্দি একতরফাভাবে গ্রহণ করে পিবিআই। এ ছাড়া আইন অনুযায়ী মামলার বাদী ব্যারিস্টার সুমন এই মামলা করতে পারেন না। কারণ এ ঘটনায় তিনি সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি নন। ছাত্রীর পরিবারের কেউ মামলা করেননি।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর পিপি ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী দলের জন্য যেসব মামলা করেছিল, সেগুলো রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অনেক মামলা রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রত্যাহারের আবেদন করা হচ্ছে। সাবেক ওসি মোয়াজ্জেমও এ রকম আবেদন করেছেন। পিপির মতামতের জন্য আবেদনটি তাঁর কার্যালয়ে আছে। তবে ওই মামলা রাজনৈতিক হয়রানিমূলক কি না, তা এখনো যাচাই-বাছাই করা হয়নি।