Image description

ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ৪৪২ বছরের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী খেরুয়া মসজিদ। মসজিদটিতে আজও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় হয়। মসজিদের নির্মাণশৈলীর পাশাপাশি আধ্যাত্মিক গল্প এর আকর্ষণ আরও বাড়িয়েছে। সুলতানি ও মুঘল আমলের নকশার সমন্বয়ে দেশে মুসলিম স্থাপত্যের যে কটি নিদর্শন রয়েছে তার মধ্যে বগুড়ার খেরুয়া মসজিদ অন্যতম।

জানা যায়, মুসলিম স্থাপত্যের অপূর্ব নিদর্শন হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে প্রাচীন ঐতিহাসিক খেরুয়া মসজিদ। বগুড়া শহর থেকে ২৩ কিলোমিটার দক্ষিণে শেরপুর উপজেলার গ্রামীণ সবুজ শ্যামল ছায়াঘেরা মনোরম পরিবেশে খন্দকারটোলা গ্রামে এ মসজিদটির অবস্থান। মসজিদটির নির্মাণশৈলী আজও দূরদূরান্ত থেকে আসা পর্যটক ও দর্শনার্থীর হৃদয়ে ভীষণভাবে নাড়া দেয়। সীমানাপ্রাচীর ঘেরা এ মসজিদটির প্রবেশদ্বারে রয়েছে প্রতিষ্ঠাতার কবর। মির্জা নবাব মুরাদ খানের পৃষ্ঠপোষকতায় আবদুস সামাদ ফকির ৯৮৯ হিজরির ২৬ জিলকদ (১৫৮২ খ্রিস্টাব্দ) ওই স্থানে মসজিদটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। উত্তর-দক্ষিণ লম্বাবিশিষ্ট মসজিদটির বাইরের দিকের দৈর্ঘ্য ৫৭ ও প্রস্থ ২৪ ফুট। ভিতরের দিকের দৈর্ঘ্য ৪৫ ও প্রস্থ ১২ ফুট। আর মসজিদের চারদিকের দেয়ালের পুরুত্ব ৬ ফুট। তিন গম্বুজবিশিষ্ট এ মসজিদের চার কোনায় চারটি মিনার, পুব দেয়ালে তিনটিসহ উত্তর-দক্ষিণে আরও দুটি দরজা রয়েছে। মসজিদে তিনটি মিহরাব। এ ছাড়া ধনুকের মতো বাঁকা কার্নিশের তলায় সারিবদ্ধ খিলান আকৃতির প্যানেলের আছে চমৎকার অলংকরণ। দেয়ালে কিছু কিছু পোড়ামাটির ফলকও ছিল। তবে সংখ্যায় খুবই কম। এ মসজিদ নির্মাণে ইট, চুন, সুরকি ছাড়াও বৃহদাকার কৃষ্ণপাথর ব্যবহার করা হয়েছে। মসজিদের সামনের দেয়ালে দুটি শিলালিপি ছিল। একটি শিলালিপির ভিতরে বহু মূলবান সম্পদ রক্ষিত ছিল, যা পরে ব্যবহৃত হয়। আর অন্যটি বর্তমানে পাকিস্তানের করাচি জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে। সম্রাট আকবরের আমলে মসজিদটি নির্মিত হওয়ায় এর দেয়ালের বিভিন্ন স্থানে ব্যতিক্রম অনেক চিহ্ন দেখা যায়। ইটের বিন্যাস ও খাড়া প্যানেলের মাধ্যমে নান্দনিক চিত্র তৈরি করা হয়েছে। মিনার, গম্বুজ ও ইটের বৈচিত্র্যময় গাঁথুনি এবং ফুল-লতা-পাতার নকশা পুরো মসজিদটিকে দিয়েছে বিশেষ সৌন্দর্য। এ মসজিদটি দীর্ঘ সময় অবহেলায় পড়ে ছিল। তবে গত শতকের নব্বইয়ের দশকে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ মসজিদটি সংস্কারে উদ্যোগ নেয় এবং আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনে।

শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশিক খান জানান, মুঘল স্থাপত্যের অপূর্ব নিদর্শন ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন খেরুয়া মসজিদ। শিগগিরই মসজিদটির সংস্কার শুরু করা হবে। পর্যায়ক্রমে পুরো মসজিদ সংরক্ষণে সব কাজ বাস্তবায়ন করা হবে। তিনি বলেন, খেরুয়া মসজিদটি এ অঞ্চলের মুসলিম আমলের সবচেয়ে প্রাচীন কীর্তি। আরব দেশ থেকে আবদুস সামাদ ফকির নামে এক ব্যক্তি শেরপুরের এ এলাকায় এসেছিলেন। এলাকাটি ঘনবসতি হওয়ায় তিনি এখানে একটি মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা করেন। তখন এ অঞ্চলের শাসক জওহর আলী কাকশালের ছেলে মির্জা মুরাদ খানের সহায়তায় মসজিদটি নির্মিত হয়।