
পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাড়া দেশের সব উপজেলায় আগামী দুই বছরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত স্থাপনের সুপারিশ করেছে স্থানীয় সরকারবিষয়ক সংস্কার কমিশন। সুপারিশে বলা হয়েছে, জেলা নয়, উপজেলাই হবে দেশের স্বীকৃত নিম্ন আদালত। জেলা হবে মধ্যবর্তী আদালত। এতে জেলা জজ হবেন জেলা ও উপজেলা আদালতের তত্ত্বাবধায়ক।
গত বুধবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে স্থানীয় সরকারবিষয়ক সংস্কারের প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দেয় এ-সংক্রান্ত কমিশন। শনিবার এটি প্রকাশ করে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদকে প্রধান করে গত ১৮ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে আট সদস্যের স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। স্থানীয় বিচারব্যবস্থা বিষয়ক সুপারিশে দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালতের পাশাপাশি একই পদমর্যাদায় প্রতিটি উপজেলায় বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির (এডিআর) জন্য পূর্ণাঙ্গ কার্যালয় স্থাপন করার কথা বলা হয়েছে। এর নেতৃত্বে থাকবেন একজন সিনিয়র সহকারী জজ। ইউনিয়ন পরিষদের অধীন গ্রাম আদালত বিলুপ্ত করে সেখানে ওয়ার্ড পর্যায়ে সালিশি ব্যবস্থার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এসব সালিশের তত্ত্বাবধান, সালিশকারকদের প্রশিক্ষণ ও সালিশের আপিল শুনানির জন্য এডিআর আদালতের বিচারকের এখতিয়ার ও প্রশাসনিক সহায়তা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে সুপারিশে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচারব্যবস্থায় দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালতের পরিবর্তে এডিআরের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সুপারিশে বলা হয়েছে, পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতি উপজেলায় না হলেও অন্তত প্রতিটি জেলায় তিনটি এডিআর পরিচালনার উপযোগী কাঠামো সৃষ্টি এবং এডিআর ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে হেডম্যান-কারবারি ও ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ড বা গ্রামভিত্তিক সালিশের সংযোগ স্থাপন করা হবে।
আদালতে বিচারপ্রার্থীদের বিচারিক সহায়তার জন্য উপজেলা পর্যায়ে আইনজীবী সমিতি (বার) প্রতিষ্ঠা ও উপজেলা বারের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য জাতীয় বার কাউন্সিলের উদ্যোগ নিতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে। উপজেলা পর্যায়ে আদালত পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিষয়ে কমিশনের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দেশে বিচারব্যবস্থা বিকেন্দ্রীকরণের চিন্তাভাবনা চলমান। এক সময় উপজেলা পর্যায়ে আদালতের কার্যক্রম চলত। সংস্কার কমিশনের জরিপে ৮০ দশমকি ৫ শতাংশ উত্তরদাতা উপজেলা পর্যায়ে বিচারব্যবস্থা প্রবর্তনের সমর্থন জানিয়েছেন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
স্থানীয় সরকার পুলিশ বাহিনী : স্থানীয় সরকারের একটি পুলিশ বাহিনীর সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন। সুপারিশে বলা হয়েছে, স্থানীয় সরকার পুলিশ বাহিনী পরিচালনার জন্য স্থানীয় সরকার কমিশন ও স্থানীয় সরকার বিভাগ যথাযথ বিধি প্রণয়ন করবে। নতুন বিধি অনুযায়ী স্থানীয় সরকারের পুলিশ বাহিনী পুনর্গঠিত হবে। এ ছাড়া কমিউনিটি পুলিশ বিলুপ্ত করে ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম পুলিশ বাহিনী ও পৌরসভায় পৌর পুলিশ বাহিনীর সুপারিশ করা হয়েছে। গ্রাম পুলিশ ও পৌর পুলিশ বাহিনীর চাকরি একটি নির্দিষ্ট বেতন কাঠামোর অধীনে স্থানীয় সরকার সার্ভিসে অন্তর্ভুক্ত হবে। নিয়মিত পুলিশ ক্যাডারের অ্যাডিশনাল আইজি পদমর্যদার একজন অফিসার স্থানীয় সরকার বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখা বা বিভাগের অংশ হিসেবে এ পুলিশ বাহিনীর প্রশাসন, শৃঙ্খলা ও প্রশিক্ষণ তদারকি করবে।