Image description

রাত হলেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বাড়ে ডাকাত আতঙ্ক। অন্ধকারের সঙ্গে এই মহাসড়কে নেমে পড়ে ডাকাত দল। একের পর এক ডাকাতির ঘটনায় এই মহাসড়ক এখন আতঙ্কের নাম। রাতের সঙ্গে দিনে মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহন থামিয়ে ডাকাত দল অস্ত্রের মুখে যাত্রীদের সর্বস্ব লুটে নিয়ে যাচ্ছে। এমনকি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও চলছে ডাকাতি। 

জানা গেছে, আগে ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও ৫ই আগস্টের সরকার পরিবর্তনের পর তা লক্ষণীয় হারে বেড়েছে। বিমানবন্দর হয়ে দেশে ফেরা প্রবাসী, রাজধানীতে আসা ব্যবসায়ী, গাড়িচালক ও স্থানীয় তৈরি পোশাক শ্রমিকরা বেশি ডাকাতি, ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন। এ ছাড়া যানজটে আটকে থাকা মোটরসাইকেলের যাত্রীরাও একই পরিস্থিতির শিকার। অনেক ঘটনা ক্লুলেস হওয়ায় ‘ঝামেলা এড়াতে’ মহাসড়কে ডাকাতির শিকার ব্যক্তিরা মামলা করতে চান না। অনেক সময় পুলিশও ডাকাতির ঘটনায় ছিনতাইয়ের মামলা কিংবা শুধু জিডি নিয়েই দায় শেষ করেন। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ডাকাতির সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে পাওয়া যায়নি। তবে এই মহাসড়কে চলাচলকারী কুমিল্লা অঞ্চলের হালকা যানবাহনের চালকেরা নিজেদের ভার্চ্যুয়াল গ্রুপে শেয়ার করা তথ্যের বরাত দিয়ে বলছেন, গত ছয় মাসে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর থেকে কুমিল্লার চান্দিনা পর্যন্ত মহাসড়কে অন্তত ১০০ ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। যার বেশির ভাগের ক্ষেত্রে কোনো মামলা হয়নি। অপরদিকে শেষ ছয় মাসে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনায় অন্তত ১৯টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।

ঘটনা অনেক, মামলা কম: থানাগুলো থেকে পাওয়া পুলিশের হিসাব বলছে, গত ছয় মাসে মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের তিনটি থানায় অন্তত ১৯টি মামলা হয়েছে। এরমধ্যে রূপগঞ্জ থানায় ১৩টি, বন্দরে ৪টি ও আড়াইহাজারে ২টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় অভিযুক্ত হিসেবে ৩৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত ছয় মাসে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় চারটি ছিনতাই মামলা হলেও সোনারগাঁ থানায় কোনো মামলা হয়নি। যদিও এ সময়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সোনারগাঁ অংশে বেশ কিছু ডাকাতির ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। গত ৮ই ডিসেম্বর সোনারগাঁ মেঘনা টোলপ্লাজা এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব আরিফ সোহেলসহ নেতাদের বহনকারী একটি গাড়িতে ডাকাত দল আক্রমণ করে। মহাসড়ক এলাকায় দায়িত্ব পালনকারী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে ডাকাতি কিংবা ছিনতাইয়ের শিকার যাত্রীরা ভয়ে দ্রুত এলাকা ছাড়েন। আদালত ও থানার হয়রানির ভয়ে তারা মামলা এড়িয়ে যান। গত ৮ই ডিসেম্বর ছিনতাইকারীদের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের বহনকারী গাড়ি। সমপ্রতি মহাসড়কসংলগ্ন দোকানপাটেও ডাকাতির ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। ৮ই ফেব্রুয়ারি রাতে মহাসড়কলাগোয়া কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের মিয়ারবাজার মসজিদ মার্কেটের প্রীতি জুয়েলার্সে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। প্রকাশ্যে গুলিবর্ষণ ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দোকান থেকে প্রায় ২৫ ভরি সোনা লুট করে নিয়ে যায় সাত-আটজনের ডাকাত দল। পালিয়ে যাওয়ার সময় ডাকাতের গুলিতে এক ব্যবসায়ী গুলিবিদ্ধ হন। কাউসারকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, মহাসড়ক সংলগ্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও মানুষকে লক্ষ্য করেই তারা ছিনতাই-ডাকাতি করে। চক্রের বাকি সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

দেড় থেকে দুই মিনিটের মিশন: জানা যায়, রাতে মহাসড়কগুলোতে গাড়ির চাপ বাড়লে সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়। তখন কখনো ধীরগতিতে আবার কখনো থেমে থেমে গাড়ি চলাচল করে। ওই সময় ডাকাতেরা সাধারণত ঢাকা থেকে আসা প্রবাসী যাত্রী বহন করতে পারে, সম্ভাব্য এমন প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসগুলোকে লক্ষ্য করে অস্ত্র নিয়ে দল বেঁধে হামলা চালায়। মুহূর্তেই তারা গাড়ির কাঁচ ভেঙে চালক ও যাত্রীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সবকিছু লুটে নেয়। পুলিশ বলছে, দেড় থেকে দুই মিনিটে তারা ডাকাতি শেষ করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।

আতঙ্কিত যানবাহন চালকরা চান নিরাপত্তা: প্রতিনিয়ত ডাকাতি-ছিনতাইয়ের ঘটনায় অতিষ্ঠ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলাচলকারী বিভিন্ন যানবাহনের চালকরা। সড়কে নিরাপত্তার দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন হালকা মোটরযানের চালকরা। ওই দিনের কর্মসূচির অগ্রভাগে ছিলেন ইলিয়টগঞ্জ বাজার এলাকার প্রাইভেটকারের চালক মো. রাসেল। তিনি  বলেন, মানুষ ডাকাতের কবলে পড়ে সব হারালেও মামলা করতে চান না। এর মূল কারণ হচ্ছে, মানুষ মনে করে, মামলা করে শেষ পর্যন্ত কোনো মালামালই পাওয়া যায় না। উল্টো মামলার বাদী হয়ে আইনি বিভিন্ন ঝামেলায় পড়তে হয়।
ওই এলাকার প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসের চালকদের হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন মাধ্যমে কয়েকটি ভার্চ্যুয়াল গ্রুপ আছে। কোনো চালক ডাকাতের কবলে পড়লে তাৎক্ষণিক এসব গ্রুপে জানিয়ে থাকেন। ওই গ্রুপের বরাত দিয়ে মো. রাসেল বলেন, কাঁচপুর থেকে চান্দিনা এলাকার মধ্যে গত ছয় মাসে অন্তত ১০০ ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। তাদের কর্মসূচির পরও ১০ই ফেব্রুয়ারি গভীর রাতেও দাউদকান্দি এলাকা, গজারিয়ার ভরেরচর, সোনারগাঁর মোগরাপাড়াসহ চার স্থানে ডাকাতি হয়েছে। হাইওয়ে পুলিশ কুমিল্লা অঞ্চলের পুলিশ সুপারের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক খায়রুল আলম বলেন, আমরা মহাসড়কে ছিনতাই-ডাকাতি প্রতিরোধে কাজ করছি। এরই মধ্যে হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি জেলা পুলিশের সংশ্লিষ্ট থানাগুলোকেও বলা হয়েছে রাতে মহাসড়কে টহল বৃদ্ধি করার জন্য। হাইওয়ে পুলিশের সদস্যরা দিন-রাত কাজ করছেন, কোথাও তথ্য পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিচ্ছেন।