Image description
ফাহাদ হুসাইন
 
ইস্যুর ভিড়ে দুইদিন আগের সিলেট এমসি কলেজের রিয়াদের ঘটনা আপনারা অনেকেই ভুলে গেছেন হয়ত। কিন্তু ওসমানী মেডিকেল ছাত্রদলের একজন ইন্টার্ন ডাক্তার কী জঘন্য ঘটনা ঘটিয়ে সম্পূর্ণ সুস্থ সেই রিয়াদকে গুরুতর অসুস্থতার দিকে ঠেলে দিচ্ছিল তা একদম পুঙ্ক্ষানুপুঙ্ক্ষভাবে আপনাদের সামনে তুলে ধরছি। এই ঘটনা থেকে আমি এটুকু অন্তত নিশ্চিত- ছাত্রদল করলে শুধু সাধারণ শ্রেণির ছাত্ররা না বরং ডাক্তার শ্রেণির ছাত্ররাও মানুষ মারতেও কুণ্ঠাবোধ করে না।
 
ঘটনার আদ্যোপান্ত:
এমসি কলেজে হাতাহাতির ঘটনা ধাক্কাধাক্কিতে গড়ালে রিয়াদের ডান পায়ের টিবিয়ার শিনে ধাক্কা লাগে। এবং টিবিয়ার শিন সাবকিউটেনিয়াস হওয়াতে সেখান থেকে সহজেই বেশ কিছু ব্লিডিং হয়। এরপরে রিয়াদকে ওসমানী মেডিকেলের ইমার্জেন্সিতে নিয়ে আসা হলে বুধবার দিবাগত রাত ( অর্থাৎ বৃহস্পতিবার ) রাত ২ : ১৬ টায়। বৃহস্পতিবার সকালের দিকেই রোগীর সমস্ত এক্সরে তে দেখা যায় কোথাও তেমন কোনো গুরুতর ফ্র্যাকচার নেই। এবং ওসমানী মেডিকেলের ডেপুটি ডিরেক্টর সৌমিত্র চক্রবর্তী স্যার সকল রিপোর্ট পর্যবেক্ষণ করে সংবাদমাধ্যমগুলোতেও জানান যে তার গুরুতর কোনো সমস্যা হয়নি। কেবল কিছু সোয়েলিং বা ফুলে যাওয়া ছিল। তাই রোগীকে ব্যথানাশক ওষুধ, ক্ষত সারানোর ওষুধ- এসমস্ত দেওয়া হয়। রোগীকে বৃহস্পতিবারেই রিলিজ দেওয়ার চিন্তা করেন চিকিৎসকগণ তবে তাকে বৃহস্পতিবার দুপুর (আনুমানিক ১২টা-১টা) থেকে আর ওয়ার্ডে পাওয়া যায় না। তাকে না পেয়ে ওয়ার্ডের হিস্ট্রি লিস্টে অগত্যা ডিসচার্জ দেখানো হয় ২০ তারিখেই। যা পরবর্তীতে বিভিন্ন মিডিয়াতে নিউজেও আসে।
 
গল্পের আসল প্লট শুরু হচ্ছে এখান থেকেই। ২০শে ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা বা ৭টার দিকে রোগী আবারও হস্পিটালে আসেন। এবং তাকে ঠিক কারা পাঠালো, কেন পাঠালো তা নিয়ে সকলের মনে সন্দেহ জাগতে থাকে। দ্বিতীয়বার আসার সময় রোগীর কমপ্লেইন থাকে - সিভিয়ার হেডেক উইথ ভোমিটিং। অর্থাৎ প্রচণ্ড মাথাব্যথার সঙ্গে বমির উপস্থিতি। অথচ আগেরবার ভর্তির সময়ে রোগীর এই কমপ্লেইন ছিল না, এবং রোগী যেই ১০-১২ঘণ্টা হসপিটালে ছিল ততক্ষণেও কেউ বমি করতে দেখেনাই। তো যাইহোক, রোগী যেহেতু বলেছে সেহেতু তার হেইডে (মাথায়) ইনজুরির একটা সম্ভাবনা ধরে নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডে রেফার করা হয়। তবে এখানেও আছে গোজামিল। নিউরোসার্জারিতে ভর্তির একটা প্যারামিটার হলো জিসিএস (GCS - Glasgow Coma Scale) যা রোগীর কনশাসনেস এবং ব্রেইন ইনজুরির মাত্রা নির্ধারণে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সেই প্যারামিটার ছিল একদম নরমাল, ১৫/১৫। কিন্তু তবুও তাকে বিভিন্ন কলাকৌশলে নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডেই পাঠানো হয়। সেখানে রাত ৮:৩৫-এ কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ব্যবস্থাপত্র লিখে দিয়ে চিকিৎসা চালাতে থাকেন। উক্ত চিকিৎসক ৫৭ ব্যাচের একজন নারী ইন্টার্ন (নিরাপত্তার খাতিরে নাম উল্লেখ করা থেকে বিরত থাকলাম)। উল্লেখ্য, রোগী বৃহস্পতিবার সারারাতে একবারও বমি করেনাই এবং কনশাসনেসও ছিল একদম ঠিকঠাক।
 
বৃহস্পতিবার রাত কেটে গিয়ে শুক্রবার সকালে ওই কর্তব্যরত চিকিৎসকের ডিউটি টাইম শেষ হয় এবং ৫৭ ব্যাচের দুইজন নারী ইন্টার্ন চিকিৎসক তাদের ডিউটি শুরু করে। সবচেয়ে ভয়ানক ঘটনা এখানেই ঘটে, আর সেটা হলো- শুক্রবার দুপুর ১২:৩০ এর সময় ছাত্রদলের একনিষ্ঠ কর্মী ডা. আল মামুন (ইন্টার্ন চিকিৎসক, ৫৬ তম ব্যাচ) এসে ওই দুইজন নারী ডিউটি ডাক্তারকে একপ্রকার হুমকি দিয়ে আগের প্রেকক্রিপশন চেইঞ্জ করে দিয়ে যায়। অথচ আল মামুনের ডিউটি ছিল গাইনী ওয়ার্ডে, তার নিউরোলজি ডিপার্টমেন্টে আসার বিন্দুমাত্র অধিকার নেই। সে ক্ষমতা খাটিয়েই এখানে আসে। দ্য মোস্ট 'ভয়ঙ্কর' থিং ইজ- মিজানুর রহমান রিয়াদকে বমি ও হেডেকের যেই বানোয়াট কমপ্লেইনে হস্পিটালে এডমিট করা হয়েছিল সেটাকে সত্য প্রমাণ করতে আগের প্রেসক্রিপশনে একটা Emistat (বমির ওষুধ) যোগ করা হয়। কিন্তু রোগী দ্বিতীয়বার হস্পিটালে আসার পরেও থেকে বমি করেনাই একবারের জন্যও। এবং আরও ভয়ানক যেই জিনিস সেটা হলো- রোগীকে দেওয়া হয় সেই ওষুধ যা সিভিয়ার কনভালশনের পেশেন্টদের দেওয়া হয়। কনভালশন হলো খিঁচুনি। খিঁচুনি প্রতিরোধে রোগীর কনশাসনেস কমিয়ে দিয়ে রোগীকে অনেকটা অবচেতন করে রাখাই এই ওষুধের কাজ। এবং এই ওষুধ দেওয়ার পরে স্বাভাবিকভাবেই রোগী প্রায় কনশাসনেস অবস্থায় চলে যায়। আর এইদিন, ২১শে ফেব্রুয়ারি শুক্রবারই বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ রিয়াদকে দেখতে আসে, তারা এসে রিয়াদকে গুরুতর অসুস্থ বা সেন্সলেস অবস্থায় দেখতে পান।
 
পরবর্তীতে আল মামুনের এই ঘটনা জানাজানি হলে ইন্টার্ন চিকিৎসক কমিটির মূখপাত্র Dr. EMdad HAsan ডা. আল মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে হাসপাতালের পরিচালক বরাবর দরখাস্ত দায়ের করে তাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য।
এই হলো বাংলাদেশের চিকিৎসাব্যবস্থা। যেখানে রোগীকে অসুস্থ দেখিয়ে অপরপক্ষের নামে দুর্নাম ও মিথ্যা রটনা করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে রোগীকে আরও অসুস্থতার দিকে ঠেলে দেওয়া হয়। এরা এমনই নিকৃষ্ট একটি জাতি, যারা দলীয় স্বার্থ রক্ষার্থে শপথবাক্য পাঠ করা ডাক্তার হয়েও রোগীকে ঠেলে দেয় মৃত্যুর মুখে।
ছবি ও কমেন্টে সকল এভিডেন্স জুড়ে দিচ্ছি।