সাধারণত এক বছর বলতে ৩৬৫ দিনের হিসাব করা হলেও ২০২৪ সালে বছরের গণনা করা হয় ৩৬৬ দিনে। কারণ হলো ২০২৪ সাল ছিল “লিপ ইয়ার” বা “অধিবর্ষ”। “লিপ ইয়ার” হলো প্রতি ৪ বছর পর পর ৩৬৫ দিনের ক্যালেন্ডারে ফেব্রুয়ারির শেষে বাড়তি একটি দিন যোগ হওয়া। তাই ২৯ ফেব্রুয়ারি অবশ্যই বিশেষ একটি দিন।
ইতিহাসে মাত্র একবারই এমন সময় এসেছিল, যখন ক্যালেন্ডারে ৩০ ফেব্রুয়ারি যোগ করতে হয়েছিল। সুইডেন একটি ডাবল লিপ ইয়ারের অংশ হিসেবে ১৭১২ সালের ক্যালেন্ডারে ৩০ ফেব্রুয়ারি যুক্ত করেছিল।
এই ৩০ ফেব্রুয়ারি কেন যুক্ত করা হয়েছিল তা বুঝতে হলে, আগে জানতে হবে লিপ ইয়ার কেন আসে, কবে থেকে লিপ ইয়ার যুক্ত হয়েছে সেই ইতিহাস।
লিপ ইয়ার কেন আসে?
ক্যালেন্ডারে যে অসঙ্গতি থাকে, সেটিকে সমন্বয় করতেই প্রতি ৪ বছর পর পর লিপ ইয়ারের আবির্ভাব হয়। কখন থেকে এই লিপ ইয়ারের প্রচলন হয়েছে, সে প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য দুই সহস্রাব্দেরও বেশি আগে প্রাচীন রোমের ইতিহাসের দিকে তাকাতে হবে। কারণ সেই সময় প্রথম আবিষ্কার হয়েছিল, তারা যে সৌর ক্যালেন্ডার ধরে বছর গণনা করছেন সেটি সৌর বছরের সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না।
এই ক্যালেন্ডারের প্রাথমিক ধারণা এসেছিল রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজারের কাছ থেকে। তিনি সে সময় আলেকজান্দ্রিয়ান জ্যোতির্বিজ্ঞানী সোসিজেনেসকে রোমান ক্যালেন্ডারের একটি বিকল্প তৈরি করতে সাহায্য করতে বলেছিলেন। যে ক্যালেন্ডার হবে সূর্যের চারিদিকে পৃথিবীর পরিভ্রমণের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত এবং বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
কারও কারও মতে, পৃথিবী সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করতে কাঁটায় কাঁটায় ৩৬৫ দিন সময় নেয় না। এতে ৩৬৫ দিনের সঙ্গে পাঁচ ঘণ্টা, ৪৮ মিনিট এবং ৫৬ সেকেন্ড বেশি সময় লাগে। এই বাড়তি সময়কে সমন্বয় করতে সোসিজেনেস একটি ক্যালেন্ডার তৈরির প্রস্তাব করেছিলেন, যা মিশরীয়দের ক্যালেন্ডারের সঙ্গে প্রায় হুবহু মিলে যায়।
সৌর বছরের সঙ্গে সন্নিবেশ করতে প্রতি ৪ বছরে ৩৬৫ দিনের সঙ্গে একটি অতিরিক্ত দিন যোগ করা হয়। এভাবে জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের জন্ম হয়, এর প্রবর্তক জুলিয়াস সিজারের সম্মানে এই নামকরণ করা হয়েছিল।
ইতিহাসজুড়ে বিভিন্ন শাসক এক বছরকে কয়েক মাসে ভাগ করেছেন। অর্থাৎ সব সময় ১২ মাসে এক বছর ছিল না, মাসের সংখ্যায় হেরফের ছিল। বর্তমানে ১২ মাসের যে ক্যালেন্ডার ব্যবহার করা হচ্ছে, প্রায় দুই হাজার বছর আগে তার প্রবর্তন করেছিলেন সম্রাট জুলিয়াস সিজার। ওই ক্যালেন্ডারের মাসগুলোর কিছু ৩০ দিন এবং কিছু ৩১ দিনে গণনা করা হতো। শুধুমাত্র ফেব্রুয়ারি মাস গণনা হতো ২৮ বা ২৯ দিনে।
তবে বছর শুরু হতো মার্চ মাস থেকে। কারণ এটি বসন্তের শুরু। এজন্য বছরের শেষ মাস ফেব্রুয়ারিকে লিপ ইয়ারের জন্য বেছে নেওয়া হয়। এক বছর যেহেতু ৩৬৫ দিন ৬ ঘণ্টায় হয়, তাই বাড়তি এই ৬ ঘণ্টাকে সমন্বয় করার জন্য সেই রোমান সময় থেকে লিপ ইয়ার চিহ্নিত করা হয়েছে।
৩০ ফেব্রুয়ারির প্রবর্তন
জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে ১৭০০ সালে একটি লিপ ইয়ার ছিল, কিন্তু সুইডেন ওই সালের ফেব্রুয়ারি মাস ২৮ দিনেই কাটায়। একইভাবে ১৭০৪, ১৭০৮ সাল লিপ ইয়ার হলেও তারা ফেব্রুয়ারি মাস ২৮ দিনেই সীমাবদ্ধ রাখতে চেয়েছিলেন। কয়েক বছর পর, সম্রাট দ্বাদশ চার্লস বুঝতে পারেন যে, সুইডেনের ক্যালেন্ডারটি জুলিয়ান বা গ্রেগরিয়ান কোনোটিই নয়।
এরপর তিনি ক্যালেন্ডার প্রণয়নে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন এবং আগের সবকিছু বাতিল করেন। কিন্তু, যেহেতু তারা ইতোমধ্যেই ১৭০০ সালের অধিবর্ষ বাদ দিয়েছিল, তাই তিনি আদেশ দেন যেন ১৭১২ অর্থাৎ আরেকটি লিপ ইয়ারে ২৯ ফেব্রুয়ারির পাশাপাশি আরেকটি অতিরিক্ত দিন যোগ করা হয়। এভাবে জুলিয়াস সিজারের সময় থেকে ইতিহাসে প্রথম এবং একটিমাত্র বারের জন্য ৩০ ফেব্রুয়ারি তারিখটি তৈরি করা হয়েছিল।
