
আলী আহমেদ মাবরুর (Ali Ahmad Mabrur )
আল্লাহ তায়ালা সম্মান দেয়ার মালিক..
বাংলাদেশে শায়খ ইয়াসির কাদি আসবেন, এমনটা জানার পর থেকেই তার লেকচার সরাসরি শোনার ইচ্ছে ছিল। মনের গহীনে আরো একটি ইচ্ছে ছিল, যদি তার সাথে একটু কথা বলতে পারতাম, বিশেষ করে তার যে বইগুলো আমি অনুবাদ করেছি সেগুলো তাকে একটু দেখাতে পারতাম। কারণ আমি শায়খের লেকচার বা বই থেকে এ পর্যন্ত ১০টি বই অনুবাদ করেছি আলহামদুলিল্লাহ।
আল্লাহর রহমতে তিনি ঢাকায় আসার পর মীরপুরে যে লেকচারটা প্রদান করেন, সেখানেই তার লেকচারটি শোনার সুযোগ হয়। সেদিন রাতে ঐ লেকচারের পর আমার ঢাকার বাইরে যাওয়ার কথা ছিল। বাসা থেকে সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়ে বের হয়েছিলাম।
কিন্তু বাসস্ট্যান্ডের উদ্দেশ্যে বের হবো এমন সময় শায়খের সফরের আয়োজক একটি সংস্থা থেকে একটি চমৎকার অফার পাই। পরের দিন জুমআয় শায়খের খুতবা দেয়ার কথা ছিল মাদানি এভিনিউয়ের ইউনাইটেড সিটিতে অবস্থিত নান্দনিক মসজিদ আল মোস্তাফায় সাঃ। সেখানে শায়খ নিজে এবং আয়োজকরা একজন অনুবাদকের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছিলেন।
বাংলাদেশের আর কোনো ইভেন্টে এরকম ট্রান্সলেটর তিনি চাননি। কিন্তু এটি যেহেতু খুতবা, মসজিদে দেবেন তাই সেখানে আম অনেক লোকজন আসতে পারে, যাদের অনেকে ইংরেজি খুতবা হয়তো বুঝতে পারবেন না। এ কারণে তারা একজন অনুবাদকের জরুরত অনুধাবন করেছিলেন। অফারটি পেয়ে আমি শিহরিত হই। কারণ নিঃসন্দেহে এটি শায়খের সাথে থাকার একটা সুযোগ করে দেবে।
আমি ঢাকার বাইরের প্রোগ্রামের আয়োজকদের কাছে বিষয়টি শেয়ার করি, এবং আমাকে ছুটি দেয়ার অনুরোধ করি। আলহামদুলিল্লাহ তারাও সহযোগিতা করেন।
পরের দিন সকালে শায়খের প্রথম লেকচার ভেনুতে চলে যাই। সেখানে গিয়েই তার বহরে আমিও যুক্ত হয়ে যাই। লেকচার শেষ করে প্রথম আমরা চলে যাই, পাঁচ তারকা একটি হোটেলে। সেখানে শায়খ একটু রেস্ট নেন, কফি খান। তখন ওনার সফরসঙ্গী ছাড়া মাত্র দুজন মানুষ ছিল। আমি সাথে থাকা শায়খের বইগুলো উপহার দেই।
বেশ অনেকটা সময় আমরা কথা বলি। উনি আমার বইগুলো দেখে বিস্মিত হন। বিশেষ করে কারবালা ইমাম মাহদি, কুরআনিক দুআ ও ল্যাংগুয়েজ অব লাভ বইয়ের তিনি প্রশংসা করেন। আমার কাছে তিনি জানতে চান, এরপর তার কোন কাজটা করবো। আমি একটি চলমান কাজের কথা বললাম। তিনি খুশি হলেন। আমি তাকে তার মেইলগুলো দেখালাম, যেগুলো তিনি আমাকে অনুমতি হিসেবে পাঠিয়েছেন। তিনি শুকরিয়া জানালেন।
এরপর বাংলাদেশ, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থা, ইসলামী আন্দোলনসহ নানা বিষয়ে আলাপ হলো। আমার ব্যক্তিগত পরিচয়ও তাকে জানালাম। তিনি সবমিলিয়ে আমাকে কিছু পরামর্শ দিলেন। এরপর আমরা দুজন খুতবা নিয়ে বসলাম। তিনি কোন টপিকে বলবেন, আমি কীভাবে বলবো, কতক্ষণ তিনি বলবেন, কতক্ষণ আমি বলবো সবকিছু তখন ফাইনাল হলো। টপিকটি আমার জানা এমনটা তাকে বললাম। তিনি খুব বেশি খুশি হলেন এবং বললেন আলহামদুলিল্লাহ আমি পারফেক্ট লোক পেয়েছি।
এরপর আবার তার বহরে করে ইউনাইটেড সিটির মসজিদে গেলাম, নামাজের আগে একসাথে সময় কাটালাম। তারপর মসজিদে পাশাপাশি বসলাম। তারপর খুতবার সময় হলে শায়খ মিম্বারে উঠে খুতবা দিলেন। এই চমৎকার মসজিদে আমি এই প্রথম গেলাম। আর প্রথমবার গিয়েই মসজিদের প্রথম সারি শুধু নয়, মিম্বারে ওঠার সৌভাগ্য হলো। শায়খের পর আমি পুরো খুতবার নির্যাস তুলে ধরলাম। আলহামদুলিল্লাহ শায়খসহ আয়োজকেরা অনেক প্রশংসা করলেন।
নামাজের পর আমি ছুটি চাইলাম। শায়খ একসাথে লাঞ্চ করতে বললেন। তাই একই টেবিলে লাঞ্চ হলো। তারপর ছুটি চাইলাম। তখনও পেলাম না। শায়খ সেখান থেকে সিলেট যাবেন। তাই আমিও তার সাথে বিমানবন্দর গেলাম। ইমিগ্রেশনে ঢোকার আগে তিনি আদর করলেন, জাজাকাল্লাহ বারাকাল্লাহ বলে বিদায় নিলেন।
সবমিলিয়ে এটা আমার জীবনের একটি ভিন্ন রকম অভিজ্ঞতা ছিল। একটু চেয়েছিলাম কিন্তু আল্লাহ তায়ালা অনেক বেশি বরকত দিলেন। অনেক বেশি সম্মানিত করলেন, আলহামদুলিল্লাহ।