Image description
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাত, পাস করানোর জন্য দেওয়া হতো শেখ পরিবারের নাম

অর্থ লুট করতেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে নেওয়া হতো নানা প্রকল্প। শেখ পরিবারের নামে গত ১৫ বছরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে ৫১ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে ৮২টি উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এর মধ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতেই ওই পরিবারের নামে নেওয়া হয় ১১টি প্রকল্প। যার আর্থিক মূল্য কয়েক হাজার কোটি টাকা। এ খাতের যে কোনো প্রকল্পে শেখ পািরবারের নাম থাকলেই অনেকটা বিনা শর্তে পাস করানো হতো। বাজেটের বিষয়েও দেখানো হতো উদারতা। দফায় দফায় বাড়ানো হতো প্রকল্পের বাজেট। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে শেখ পরিবারের নামে থাকা প্রকল্পগুলোর অডিটে ছিল নিষেধাজ্ঞা। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অভ্যন্তরীণ তদন্তে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলামের নির্দেশে ওই তদন্ত কাজ চালানো হয়। শেখ পরিবারের সদস্যদের নামে নেওয়া প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে শেখ মুজিবুর রহমানের নামে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, হাইটেক পার্ক, শেখ কামালের নামে আইটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র, শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব, শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউটসহ আরও কয়েকটি প্রকল্প। সম্প্রতি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে শেখ পরিবারের নামে নেওয়া সব প্রকল্পের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয় ও অযৌক্তিক খরচ বাদ দেওয়া হয়েছে।

তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ জানিয়েছে, শেখ পরিবারের সদস্যদের নামে গত ১৫ বছরে ৫১ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে ৮২টি উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এর মধ্যে ৩৮টি প্রকল্পের কাজ শেষ, বাকি ৪৪টি প্রকল্পের কাজ চলছে। এরই অংশ হিসেবে শেখ হাসিনার নামে ২০১৭ সালে যশোরে একটি সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক নির্মাণ করা হয়। এতে ব্যয় হয়েছিল ৩০৫ কোটি টাকা। কিন্তু যে লক্ষ্য নিয়ে এই পার্ক করা হয়, তা পূরণ হয়নি। কোনো কাজে আসছে না এই পার্ক। দিনের পর দিন লোকসান গুনতে হচ্ছে। লোকসান ঠেকাতে শেষ পর্যন্ত সফটওয়্যার পার্কে বিয়েসহ সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হচ্ছে। শেখ কামালের নামে ২০২২ সালে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর উদ্বোধন করা হয়। এতে ব্যয় হয় ১১৭ কোটি টাকা। দুই বছর পেরিয়ে গেলেও ইনকিউবেটরটি তেমন সাড়া জাগাতে পারেনি। অনেকটা অব্যবহৃত পড়ে আছে সুরম্য ভবন, কম্পিউটার ও ডরমিটরি। সিলেটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্কও বেহাল। গত বছর সিলেট হাইটেক পার্ক উদ্বোধন করা হয়। তবে সেখানে আইসিটি, টেলিকমিউনিকেশন এবং আইসিটিনির্ভর শিল্পের জন্য প্রতিষ্ঠিত আইটি পার্ক হওয়ার কথা। অথচ পার্কটিতে জমি বরাদ্দ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোয় মূলত ইলেকট্রনিক, হোটেল ও রেস্তোরাঁ খাতেরই প্রাধান্য। আইসিটি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, শেখ পরিবারের নামে এরই মধ্যে বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় সারা দেশে ৯ হাজার একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব করা হয়েছে। একইভাবে শেখ কামালের নামে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপনের কার্যক্রম চলছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এসব প্রকল্পের কাজ সরাসরি তত্ত্বাবধান করেন সাবেক দুই মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার ও জুনাইদ আহমেদ পলক। ১১টি প্রকল্পের বেশির ভাগই কয়েক দফা প্রকল্প মূল্য বাড়ানো হয়। খরচের ক্ষেত্রে মানা হয়নি নিয়ম-কানুন। শেখ পরিবারের নামে প্রকল্প হওয়ায় কেউ কোনো প্রশ্ন তোলার সাহস পাননি। এসব প্রকল্পের প্রয়োজন নেই বলে কিছু কর্মকর্তা প্রশ্ন তুললে তাদের আওয়ামীবিরোধী বলে ট্যাগ লাগানো হয়। পরবর্তীতে তাদের কপালে জুটেছে বদলি, তারা বঞ্চিত হয়েছেন পদোন্নতি থেকে। এ ধরনের প্রায় ২৫ জন কর্মকর্তা রয়েছেন বলে জানিয়েছে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ।

এ প্রসঙ্গে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ১১টি প্রকল্পের মধ্যে চলমান ছিল ৬টি। সবগুলোর নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। এরই মধ্যে আমাদের একটি তদন্ত কমিটিতে এসব প্রকল্প থেকে ৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকা সাশ্রয়ের কথা বলেছে। এর মধ্যে একটি প্রকল্প থেকেই আমরা ১৭৫ মিলিয়ন ডলার উইথড্রো করেছি। শেখ পরিবারের নামে নেওয়া প্রকল্পগুলো ছিল সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত। নাম পরিবর্তন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আগে ছিল শেখ রাসেল আইটি ট্রেনিং সেন্টার। এখন সেটার নাম দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ আইটি ট্রেনিং সেন্টার। একইভাবে শেখ হাসিনা, শেখ কামাল, শেখ জামাল- এগুলোরও সব নাম বাদ। অর্থাৎ তাদের নামের জায়গায় বাংলাদেশ বা আইসিটি ডিভিশন যুক্ত করা হয়েছে।

বর্তমানে শেখ পরিবারের সদস্যদের নামে আইসিটি বিভাগের চলমান প্রকল্পগুলোর (এখন নাম পরিবর্তন হয়েছে) মধ্যে রয়েছে দেশব্যাপী শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার, শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন (দ্বিতীয় পর্যায়) এবং শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট অব ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজির প্রাথমিক অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প।