
নারী ও পুরুষ দুজনকেই রামদা নিয়ে প্রকাশ্যে আঘাত করছিল জলপাই রঙের শার্ট পরিহিত এক কিশোর। তাঁদের চিৎকারে আশপাশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় কাঁদতে কাঁদতে হামলাকারীদের কাছে প্রাণভিক্ষা চাইছিলেন হামলার শিকার এক নারী। ধারালো অস্ত্রে মারাত্মক যখম অবস্থায় তাঁরা এখন হাসপাতালে ভর্তি।
গত সোমবার রাত ১০টার দিকে রাজধানীর উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরে এভাবে দুজনকে কুপিয়ে মারাত্মক যখম করে কিশোর-তরুণ গ্যাং সদস্যরা। বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালনা নিয়ে কথা-কাটাকাটির জেরে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
শুধু এই ঘটনা নয়, দেশে চলমান বিশেষ অভিযানের (অপারেশন ডেভিল হান্ট) মধ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে এ ধরনের নৃশংসতার অনেক অভিযোগ দেশের বিভিন্ন থানায় জমা পড়েছে কিশোর-তরুণ গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে। তাদের নিয়ন্ত্রণে পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা তৎপর।
পুলিশ বলছে, সম্প্রতি দেশজুড়ে নতুন কৌশলে কিশোর-তরুণ গ্যাংয়ের তৎপরতা বেড়েছে। প্রতিদিনই তাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ে অভিযোগ উঠছে। খোদ পুলিশের ওপরও ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়েছে তারা।
গত বছরের এপ্রিলের আগে রাজধানীতে অন্তত ১২৭ কিশোর-তরুণ গ্যাং সক্রিয় ছিল। সারা দেশে ছিল ২২৭টি গ্যাং। এসব গ্যাংয়ের সদস্য ছিল দুই হাজারের বেশি। দেশের প্রতিটি থানায় তাদের তালিকা ছিল। তবে গত ৫ আগস্টের আগে ও পরে দেশের বেশির ভাগ থানা ধ্বংস হওয়ায় সেই তালিকাও ধ্বংস হয়েছে। এর ফলে এখন নতুন করে কিশোর-তরুণ গ্যাংয়ের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।
নতুন তালিকা করে কিশোর-তরুণ গ্যাং নিয়ন্ত্রণে পুলিশের সব ইউনিটকে এরই মধ্যে নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, কিশোর-তরুণ অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে দেশজুড়ে পুলিশ সক্রিয়।
থানা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, সময় বদলালেও পাল্টায়নি কিশোর-তরুণদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। বিগত সরকারের সময়ে তাদের সে সময়ের ওয়ার্ড কাউন্সিলর থেকে শুরু করে কতিপয় রাজনৈতিক নেতা শেল্টার দিতেন। বর্তমানে তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে সমাজে নতুন করে মাথাচাড়া দেওয়া কিছু উঠতি সন্ত্রাসী। এ ছাড়া রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় জামিনে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরাও এখন কিশোর গ্যাংকে শেল্টার দিচ্ছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর কালের কণ্ঠকে বলেন, কিশোর-তরুণ গ্যাং নিয়ন্ত্রণই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
এসব গ্যাং নিয়ন্ত্রণে র্যাবেরও আলাদা ভূমিকা রয়েছে। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল মো. মুনীম ফেরদৌস বলেন, বরাবরের মতোই র্যাবের সব ইউনিট দেশে কিশোর-তরুণ গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
ঢাকায় অপরাধের শীর্ষে যেসব গ্যাং
ঢাকা মহানগর পুলিশের তালিকা অনুযায়ী, বরাবরই উত্তরা এলাকায় কিশোর-তরুণ গ্যাং সদস্য বেশি। এই এলাকার গ্যাংগুলোর মধ্যে রয়েছে নাইন এমএম বয়েজ, নাইন স্টার, পাওয়ার বয়েজ, বিল বস, সুজন ফাইটার, ক্যাসল বয়েজ, আলতাফ জিরো, ভাইপার ও তুফান; মিরপুর এলাকায় বিচ্ছু বাহিনী, সুমন গ্যাং, বিহারি রাসেল, পিচ্চি বাবু, সাইফুল গ্যাং, বাবু রাজন, রিপন গ্যাং, সাব্বির গ্যাং, নয়ন গ্যাং ও মোবারক গ্যাং; ধানমণ্ডিতে একে ৪৭, নাইন এমএম ও ফাইভ স্টার বন্ড; বংশালে রয়েছে জুম্মন গ্যাং; তেজগাঁওয়ে মাঈনুদ্দিন গ্যাং; মুগদায় চান জাদু, ডেভিড কিং ফল পার্টি, ভলিয়ম টু ও ভাণ্ডারী; পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজার, কলতাবাজার, পানিটোলা, লালকুঠি, শ্যামবাজার, ইসলামপুর, বাবুবাজারসহ সদরঘাটের পার্শ্ববর্তী এলাকায় ফেরদৌস গ্রুপ, সাজু গ্রুপ, সিনিয়র গ্রুপ, জুনিয়র গ্রুপ, টাইগার গ্রুপ, চিতা গ্রুপ; রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ডাইল্লা গ্রুপ, এলেক্স গ্রুপ, ইমন গ্রুপ, আনোয়ার ওরফে শ্যুটার আনোয়ার গ্রুপ, আকাশ গ্রুপ, দ্য কিং অব লও ঠেলা গ্রুপ, ডায়মন্ড গ্রুপ, আই ডোন্ট কেয়ার (আইডিসি) গ্রুপ, মুরগি গ্রুপ, সাব্বির গ্রুপ, শাওন গ্রুপ, ফিল্ম ঝিরঝির গ্রুপ, স্টার বন্ড গ্রুপ, গ্রুপ টোয়েন্টি ফাইভ, লাড়া দে, লেভেল হাই, দেখে ল-চিনে ল ও কোপাইয়া দে গ্রুপ।