Image description

আধুনিক ও হালনাগাদ যন্ত্রপাতির অভাব নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নিবন্ধন অনুবিভাগে। ফলে পুরনো কিছু যন্ত্রপাতি ও নতুন কিছু দিয়ে চলছে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম। যন্ত্রপাতি স্বল্পতা ও কারিগরি সমস্যায় হিমশিম খাচ্ছেন কর্মকর্তারা। এরপরও চলমান হালনাগাদ কার্যক্রমের রেজিস্ট্রেশন আগামী ১১ এপ্রিলের মধ্যে সম্পন্ন করার জন্য সবাইকে মনোযোগী হওয়ারও নির্দেশনা দিয়েছে ইসি। এ ব্যাপারে এনআইডির মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীর বলেন, যন্ত্রপাতির সঙ্কট তো আছেই। তারপরও কার্যক্রম আমরা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা এখন পর্যন্ত পুরোপুরি বলতে পারছি না। আরো কয়েক দিন দেখতে হবে। পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা কমিশনকে এই বিষয়ে জানাবো যে আমরা কোন পরিস্থিতিতে আছি। সমস্যা যেটা আছে তা মেনে নিয়েই কাজ করতে হবে। পাশাপাশি সমাধানের জন্য চেষ্টা করতে হবে।

জানা গেছে, ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম চলমান আছে। ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদের সভাপতিত্বে নির্বাচন কমিশনের সাম্প্রতিক মাসিক সমন্বয় সভায় নির্ধারিত সময়ে এই কাজ শেষ হওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়। সভায় এনআইডি মহাপরিচালক, ঢাকা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, ফরিদপুর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন অফিসার, নারায়ণগঞ্জ জেলা নির্বাচন অফিসার ও গাজীপুর জেলা নির্বাচন অফিসার বিষয়টি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন। কর্মকর্তারা জানান, ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে যন্ত্রপাতির স্বল্পতা ও কারিগরি সমস্যার সমাধান করা না হলে নির্ধারিত সময়ে ভোটার রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম শেষ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। যন্ত্রপাতির সঙ্কট কাজের ক্ষেত্রে বেশ সমস্যার সৃষ্টি করছে। কারিগরি এই কাজ শুধুমাত্র যন্ত্রপাতির ওপরই নির্ভর করে। ফলে এসবের সাপোর্ট বড় দরকার।

ইসির কর্মকর্তারা বলেছেন, যন্ত্রপাতির স্বল্পতার সমাধান করা হলে নির্ধারিত সময়ে ভোটার নিবন্ধনকার্যক্রম সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। কিন্তু প্রুফ রিডিং ও ডাটা আপলোডের জন্য সময় বৃদ্ধি প্রয়োজন হতে পারে। যন্ত্রপাতি যত হালনাগাদ হবে, কাজের গতি ততটা বেশি দ্রুত হবে।
কর্মকর্তাদের এমন শঙ্কার পর ইসির অতিরিক্ত সচিব জানান, দ্রুত সময়ের মধ্যে ইউএনডিপির পক্ষ থেকে যন্ত্রাংশ পাওয়া যাবে। আর দ্রুততম সময়েই তা মাঠপর্যায়ে পাঠানো সম্ভব হবে। এ ছাড়া হালনাগাদ কার্যক্রমের রেজিস্ট্রেশন ১১ এপ্রিলের মধ্যে সম্পন্ন করার জন্য মনোযোগী হওয়ারও নির্দেশনা দেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত ১৪ জানুয়ারি ইউএনডিপির সাথে বৈঠকের পর ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ভোটার তালিকা হালনাগাদের পর সেটি সাধারণীকরণ প্রক্রিয়ায়ও সহায়তা করবে ইউএনডিপি। তিনি বলেন, হালনাগাদ কার্যক্রমে আমাদের কিছু উপকরণের ঘাটতি আছে, সেগুলো দেয়ার জন্য বলেছি। তারা ঘরে ঘরে যেয়ে তো তথ্য আনবে না। সে তথ্য আমরা আনার পর কাস্টমাইজেশনে তারা সহায়তা করবে। সহায়তাটা হচ্ছে কারিগরি। হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার, প্রশিক্ষণ, দক্ষতা উন্নয়ন, যোগাযোগ, এসডিজির কিছু গোল (লক্ষ্য) আছে, সেগুলোতে তারা সহায়তা করবে।

ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমের ব্যাপারে জানতে চাইলে এনআইডির মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ এস এম হুমায়ুন কবীর গতকাল বিকেলে নয়া দিগন্তকে বলেন, কাজের ক্ষেত্রে সমস্যা আছে আমাদের। সমস্যা আছে বলেই আমরা ইউএনডিপির কাছে সহায়তা চেয়েছি। তারা ইতোমধ্যে কিছু যন্ত্রপাতি আমাদেরকে দিয়েছে। আরো কিছু যন্ত্রপাতি আসবে। আশা করছি আগামী সপ্তাহে পেয়ে যাবো। তিনি বলেন, আমাদের কাছে যেসব যন্ত্রপাতি ছিল তার কিছু মেরামত করেছি। নতুন ও পুরাতন মিলে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। এতে অসুবিধা হচ্ছিল। তবে কাজ থেমে নেই। তিনি বলেন, কাজ থামিয়ে রাখাও যাচ্ছে না। সে কারণে ইউএনডিপির কাছ থেকে যন্ত্রপাতিগুলো পেলে আমাদের বর্তমান যে সঙ্কট রয়েছে তা সমাধান হবে। আমরা মনে করছি যে কাজ যেহেতু বন্ধ হয়নি, চলমান আছে, তাই আমরা এসব কাটিয়ে উঠতে পারব ইনশাআল্লাহ।

কোন ধরনের যন্ত্রপাতির সঙ্কট রয়েছে জানতে চাইলে এনআইডি মহাপরিচালক বলেন, ল্যাপটপের কিছু ঘাটতি আছে। স্ক্যানারেরও সঙ্কট আছে। আইরিশ নেয়ার জন্য যন্ত্রপাতির কিছু অভাব রয়েছে। এসব কিছু মিলে আমাদের এসব কাজে প্রচুর যন্ত্রপাতি লাগে। প্রায় ৫৪ লাখ মানুষের রেজিস্ট্রেশন। প্রচুর মানুষ নিজ থেকে আগ্রহী হয়ে এখন ভোটার হতে আসছে। চাপ বেশি থাকার কারণে আমাদের লোকজনকে অতিরিক্ত সময়েও কাজ করতে হচ্ছে।
জনবলের ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিজি বলেন, এই ক্ষেত্রে আমাদের জনবলের সঙ্কট নেই। কারণ যে কয়জন জনবল লাগে সে কয়জন দিয়েই কাজ করাচ্ছি। শুধু আমাদের যন্ত্রপাতিগুলো আধুনিক ও হালনাগাদ হতো তাহলে এই কাজে সময়টা আরো কম লাগতো। তিনি বলেন, আমরা সরেজমিন দেখেছি যত লোককে আসতে বলেছি, তার চেয়ে দুই শ’ লোক বেশি এসেছে।