
ধান সিন্ডিকেটের কারণে চালের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। গতকাল প্রায় সব ধরনের চালের পাইকারি দরে কেজিপ্রতি বেড়েছে এক টাকা। ধানের কোনো সঙ্কট না থাকলেও সিন্ডিকেটের কারণে অসহায় হয়ে উঠছে মিল মালিকরা। ফলে চাহিদা মতো চাল সরবরাহ করতে পারছেন না মিল মালিকরা। গতকাল একাধিক মিল মালিকের সাথে কথা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা এ অভিযোগ করেন। এই অভিযোগের সত্যতাও মিলেছে গতকালের একটি ভিডিও চিত্রে।
জানা গেছে, বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় ধান মজুদদার হিসেবে পরিচিত মজুমদার অটো রাইস মিল। গতকাল মজুমদারের বগুড়ার শেরপুরের সুনকা এলাকায় অবস্থিত একটি গোডাউনে হাজার হাজার বস্তা ধান ভর্তি থাকলেও মিলারদের জিম্মি করে চড়া মূল্যে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। ভিডিওতে দেখা গেছে, বিশাল আকারের গোডাউন ভর্তি ধান। দু-একটি ট্রাকে করে আরো ধান মজুদ চলছে। কয়েক একর জুড়ে গোডাউনে বিচ্ছিন্নভাবে বস্তাভর্তি থাকলেও মিলাররা ধান ক্রয় করতে চাইলে সঙ্কটের কথা বলে মূল্য বৃদ্ধি করে অল্প অল্প করে ধান সরবরাহ করা হচ্ছে।
মজুমদারের এমন আরো ১০/১২টি গোডাউন ভর্তি ধান রয়েছে বলেও ওই সূত্র জানায়। এ বিষয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে মজুমদার অটো রাইস মিলের কাউকে পাওয়া যায়নি।
অভিযোগ উঠেছে, মজুমদার ছাড়াও দেশে ধান ও চাল মজুদদার হিসেবে তালিকায় নাম রয়েছে চাঁপাই নবাবগঞ্জের মোজাম্মেল অটো রাইস। করপোরেটের মধ্যে রয়েছে সিটি গ্রুপ, বেলালের বেলকোন ও এসিআইসহ আরো কয়েকটি গ্রুপ।
একাধিক চাল ব্যবসায়ীর সাথে কথা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বাজারে যখন চাল প্রয়োজন তখনই মিলারদের কাছে যোগাযোগ করে চাল পাওয়া যায় না।
ওই ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে চাঁপাই নবাবগঞ্জের ব্যবসায়ী মোজাম্মেল অটো রাইস মিলের মালিক জিম্মি করে ব্যবসা করছেন। বর্তমানে মিনিকেটের চাহিদা বাজারে সবচেয়ে বেশি থাকায় মোজাম্মেলের কাছে মিনিকেট চাল চাইলে ট্রাক প্রতি ২৮০ বস্তার মধ্যে ১২০ বস্তা মিনিকেটের সাথে ১৬০ বস্তা পোলাউর চাল (চিনিগুঁড়া) নিতে বাধ্য করা হয়। কারণ হিসেবে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা বলেন, মিনিকেটের চেয়ে ১০ গুণ মুনাফা চিনিগুঁড়া পোলাউর চালে। কৃত্রিম সঙ্কট দেখিয়ে বাজারকে অস্থির করছেন দেশের এই শীর্ষ চাল ব্যবসায়ী।
এ বিষয়ে জানতে মোজাম্মেল অটো রাইসের মার্কেটিংয়ের নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
অপর দিকে নওগাঁর চাল ব্যবসায়ী ডায়মন্ড ব্রান্ডেরও মিনিকেটের মূল্য চড়া। বাজারে ডায়মন্ডের চাহিদা থাকলেও সঙ্কট দেখিয়ে বাজারে সরবরাহ কম বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানতে চাইলে ডায়মন্ড ব্রান্ডের মার্কেটিং ম্যানেজার রাব্বি নয়া দিগন্তকে বলেন, ধানের সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে বাজারে মিনিকেট চালের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের চালের চাহিদা থাকলেও আমরা ধানের সঙ্কটের কারণে পাইকারদের কাছে সরবরাহ করতে পারছি না। ২৪ ঘণ্টায় মাত্র এক হাজার বস্তা চাল সরবরাহ করতে পারছি। এর বেশি সম্ভব হচ্ছে না। যার কারণে মিনিকেটের বাজারও ঊর্ধ্বমুখী।
দেশের অন্যতম পাইকারি চালের আড়ত টঙ্গী বাজার ও বাবু বাজারের একাধিক আড়ৎ মালিকরা অভিযোগ করে বলেন, আমরা এখন মিলারদের কাছে শতভাগ জিম্মি। কারণ যখনই চালের চাহিদা বাড়ে তখনই মিলাররা জিম্মি করে যার যার মতো করে চালের বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরির পর অস্থির করে তোলে।
অপর দিকে মিল মালিকদের অভিযোগ, ধান সিন্ডিকেটের কারণে চাহিদামতো চাল সরবরাহ করা যাচ্ছে না। অভিযোগ করে তারা বলেন, করপোরেটের মালিকরা এই সিন্ডিকেটের মূল। লাখ লাখ টন ধান মজুদ করার পরও তারা সিন্ডিকেট করে মিলারদের জিম্মি করে রাখে।
আর সপ্তাখানেক পরই পবিত্র রমজান মাস। একসপ্তাহ আগেই চালের বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়ায় খোদ খুচরা ক্রেতারাও ক্ষুব্ধ। পুরান ঢাকার বাসিন্দা আব্দুল আউয়াল নামে এক ভুক্তভোগী নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা মধ্যবিত্ত হওয়ার কারণে আমাদের জ্বালাটাও বেশি। তিনি বলেন, পরিবারের সবাই তিন বেলা ভাত খাওয়ার অভ্যাস। কিন্তু চালের বাজার যেভাবে হুহু করে বাড়ছে তাতে ভাত খাওয়া কমাতে হবে মনে হচ্ছে। যে বেতন পাই সব যদি চালেই শেষ করে দেই তাহলে বাঁচব কিভাবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুষ্টিয়া চাল মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন সাদু নয়া দিগন্তকে বলেন, আমি একটু ব্যস্ত আছি এ বিষয়ে পরে কথা বলব।
গতকাল টঙ্গী বাজার ও বাবু বাজারে পাইকারি আড়তে গিয়ে দেখা গেছে, গত বুধবারের তুলনায় প্রতি কেজি মিনিকেট চাল এক টাকা বেশি দরে বিক্রি করছেন পাইকাররা। এর মধ্যে দাদা মিনিকেট চালের মূল্য ১৭ ফেব্রুয়ারি ছিল ৭৪ টাকা। গতকাল ৭৫ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। অবশ্য মোজাম্মেল ব্রান্ডের মিনিকেট চালের বাজারমূল্য ৮৩ টাকা। কেজিপ্রতি দাদার চেয়ে ৮ টাকা বেশি। অপর দিকে ডায়মন্ডের চালের মল্য ৮০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। এ ছাড়াও গতকাল পাইজামের মূল্য গত দুই দিনের তুলনায় দুই টাকা করে বেশি দেখা গেছে।