
Mahmudul Khan Apel (মাহমুদুল খান আপেল)
বাংলাদেশে সর্বশেষ একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০০১ সালে! তারপর বিগত এই দীর্ঘ ২৪টা বছর সত্যিকার অর্থে দেশে কোন নির্বাচন হয়নি! এই ২৪ বছরে সবচেয়ে বিশাল যে পরিবর্তনটা এই পৃথিবীতে ঘটেছে তা হলো এই বিশ্ব ইনফরমেশন সুপার হাইওয়ে বা ইন্টারনেটের যুগে প্রবেশ করছে, যা মানুষকে দুশো বছর এগিয়ে নিয়ে গেছে! কাজেই আপনাকে এই ২৪ বছরকে ২৪০ বছর ধরেই আগাতে হবে! এই গতি সবকিছু বদলে দিয়েছে! সব কিছু বলতে সবকিছু, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনটা হয়েছে মানুষের চিন্তায়! আগে যখন মানুষের চিন্তা ছিলো বড়ো জোর ঢাকা থেকে সহজে যমুনা বা পদ্মা নদীটা পার হয়ে কিভাবে উত্তরবঙ্গ বা দক্ষিণবঙ্গে যাওয়া যাবে, চিন্তার দৌড় ছিলো এটুকুই! আর মাত্র ২০ বছরে মানুষ এখন লক্ষ লক্ষ মাইল পাড়ি দিয়ে কিভাবে অন্য গ্রহে পাড়ি দেয়া যায় সেই চিন্তা করে! এই চিন্তার পরিবর্তন এতোটা সহজভাবে নিতে পারবেন না! কাজেই আসছে নির্বাচনে যা আশাকরা যায় আগামী জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবে, সেই নির্বাচন খুব খুব বেশী ইন্টারেস্টিং হবে, এটা নিশ্চিত থাকতে পারেন!
২৪ বছর আগের হিসেবেই ধরি আর বাংলাদেশের এই মুহূর্তে একমাত্র সারাদেশে সমানভাবে সংগঠিত একমাত্র দল হিসাবে বিবেচনা করি, দুই হিসেবেই আসে বিএনপির নাম! বিশেষ করে তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ আওয়ামিলিগের নিঃশেষ হয়ে যাওয়া, সাথে দেশের তৃতীয় বৃহত্তম দল জাপাকেও সাথে ধ্বংস করে দিয়ে যাবার ফলে রাজনীতিতে বিশাল এক শূন্যতা তৈরি হয়েছে! শুন্যতা ভালো জিনিষ না! ভুমন্ডলের কোন স্থানই শুন্য থাকতে পারেনা! কোন কারনে কোথাও হঠাৎ শুন্য হয়ে গেলে চারপাশের বাতাস প্রবলবেগে সেই শুন্যস্থান পূরনের জন্য এগিয়ে আসে, তখনই ঘুর্নিঝড় শুরু হয়! কাজেই রাজনৈতিক এই শুন্যতা যেনো কোন ঘুর্ণিঝড় তৈরী না করে সেদিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে!
রাজনৈতিক এই শুন্যতা পুরন করতে পারে একমাত্র ছাত্র সমন্বয়কদের নতুন রাজনৈতিক দল! এখানে দেশের আরেকটি রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীকে হিসেবে কেনো আনছিনা তার বিশাল ব্যাখ্যা আছে! সেই আলাপে পরে আসি!
ছাত্রদের নতুন সেই রাজনৈতিক শক্তির সম্ভাবনা যেমন প্রবল, তেমনি তাদের চ্যালেন্জগুও চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানোর মত!
সব চ্যালেন্জ নিয়ে আলোচনা করতে না পারলেও দুই একটা নিয়ে কথা বলতেই হয়!
এক.
রাজনীতি হলো বিশ্বের সবচেয়ে কুটিল একটা খেলা, এখানে একমাত্র যোগ্যতা হলো অভিজ্ঞতা, সেটার ভয়ঙ্কর অভাব দিয়েই তাদের যাত্রা শুরু হচ্ছে!
দুই.
নেতৃত্বের নির্বাচন - দক্ষিন এশিয়ার মানুষ প্রাকৃতিকভাবেই অতি আবেগপ্রবণ! যে নেতাকে তারা অন্তরে স্থান দেয় তার জন্য অনায়াসে নিজের জীবনটাও দিয়ে দিতে পারে! এই ধরনের কালচারের বাহিরে গিয়ে কোন সুনির্দিষ্ট নেতা ছাড়া একটি রাজনৈতিক দলকে প্রতিষ্ঠিত করা এবং টিকে রাখাটা বিশাল একটা চ্যালেন্জ!
তিন.
আদর্শ - নতুন এই দলটির সুনির্দিষ্ট কোন আদর্শ এখন পর্যন্ত লক্ষ করা যায়নি! রাজনীতির কিছু বেসিক থাকে, ডান,বাম,মধ্য বা অমুক তমুক পন্থির বাহিরে গিয়ে রাজনীতি টেকানো যায়না! এতে বড় সমস্যা হবে যে তারা কি করতে চায়, কি প্রতিষ্টার জন্য সংগ্রাম করছে সেটা জনগণকে বোঝানোই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে!
আরও অনেকগুলি সমস্যা একেবারে চোখে আঙুল দিয়েই দেখানো যায় এবং এসব ঘাটতি ইতিমধ্যেই দৃশ্যমান হচ্ছে!
এবার সংক্ষেপে দেশের আরেকটি প্রতিষ্ঠিত এবং ২৪ বছর আগের হিসাবে দেশের এই মুহূর্তে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল জামায়াতে ইসলামীর কথা সংক্ষেপে বলতে হয়! বিস্তারিত বলতে গেলে বিশাল একটা চ্যাপ্টার হয়ে যাবে!
জামায়াত আর দশটা সচরাচর রাজনৈতিক দলের মত কোন রাজনৈতিক দল না! ক্যাডার ভিত্তিক সংগঠন হবার কারনে এই দলটির কখনও সর্বসাধারণের দল হয়ে ওঠাই সবচেয়ে বড় চ্যালেন্জ! যেকেউ চাইলেই তাদের একটা সদস্য পর্যন্ত হতে পারবেনা! সেই অর্থে একটা সদস্যও তাদের সুপ্রশিক্ষিত! প্রশিক্ষন নিয়ে একটা রাজনৈতিক দলের সদস্য হওয়া এবং তা মেনে চলাটা সবার পক্ষে সম্ভব না, বাস্তবতা তা বলেনা!
দলটির আরেকটা বড় সমস্যা ইদানীং খুব ভালোভাবেই চোখে পরছে সেটা হলো নেতৃত্বের শূন্যতা! তাদের এখনকার রাজনীতি দেখলে মনে হয় সত্যিই হাসিল তাদের নেতৃত্ব শুন্য করে দিয়ে গেছে! শীর্ষস্থানীয় নেতাদের কাছ থেকে এখন পর্যুন্ত কোন নীতিনির্ধারণী বা দিকনির্দেশনামুলক কোন বক্তব্য সাম্প্রতিককালে শুনতে পাওয়া গেছে বলে মনে পরেনা! তারা এখন যেটা করে সেটা হলো, তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ যেটা বলে, হয় সেটার ইকো করে, নাহলে পুরোপুরি বিরোধীতা করা! নিজেদের কোন বয়ান নাই! তবে তাদের অনলাইন উপস্থিতি সবার উপরে! এটা সম্ভবত ক্যাডার ভিত্তিক সংগঠন বলেই সম্ভব হয়েছে! অনলাইনের এই সরব উপস্থিতি আর অন্যদিকে শীর্ষ নেতাদের দুর্বলতা বুঝিয়ে দেয় যে দলটা বিশাল দেহী ছোট্ট মাথার একটা প্রানীর মত হয়ে গেছে! আর বেশী কিছু না বলি!
ভোটের হিসেবে যদি ফিরে যাই তাহলে বলতে হবে যে আগামীর জাতীয় নির্বাচনে দেশের এই মুহর্তের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপিকে লড়াই করতে হবে অদৃশ্য শক্তির বিরুদ্ধে! এক্ষেত্রে লীগ/জাপার ভোট ব্যাংক হবে অনেকটা ডাস্টবিনের খাবারের মত! ওগুলোও খারাপ তবে অতিরিক্ত খিদা না থাকলে কেউ খাবেনা! তবে দেখা যাবে যে যাদের খিদা আছে আবার সাথে চোখের লজ্জাও আছে, তারা ঠিকই রাতের আঁধারে চুপে চুপে গিয়ে সেই উচ্ছিষ্ট খাবারই খাচ্ছে!
এর পাশাপাশি যে জেনারেশন গ্যাপ তৈরী হইছে, সেটা একটা বিশাল চ্যলেন্জ হবে সব দলের জন্য! মানুষ ২৪ বছর ভোট দিতে পারেনি, আর যার জন্ম ২০০১ সালে তো জন্মেও ভোট কি জিনিষ চোখেই দেখেইনি!
সব মিলিয়ে জাতীর জন্য এক মহা বিষ্ময় অপেক্ষা করছে! এই নির্বাচন হবে এক মহা বিস্ময়কর এবং এক্সাইটম্যান্টের! মনে হলেই কেমন শরীরে শিহরণ জাগে!
জাতীয় নির্বাচন আগে নাকি স্থানীয় নির্বাচন-এটা একটা ভিন্ন টপিক! তবে এটা আমার কাছে সুসম একটা রাজনৈতিক খেলা বলেই মনে হয়! এর মধ্যে দেশপ্রেম বা জনগনের কোন চাওয়া পাওয়ার বালাই বা ভালাই নাই! যারা জাতীয় নির্বাচনে জিততে পারবে, তারা জাতীয় নির্বাচন আগে চায়! আর যারা স্থানীয় নির্বাচনে সুবিধা করতে পারবে, তারা স্থানীয় নির্বাচন আগে চায়! সহজ অংক!
বাই দ্য ওয়ে - ২০০৮ সালের নির্বাচনকে আমি নিরপেক্ষ তো মনে করিই না বরং মনে করি যে ঐ নির্বাচন ছিলো ফ্যাসিবাদের বীজ বপন! হাসিনা নিজে বলেছিলো যে আমরা চাইলে বিএনপি বাদ দিয়ে জাতীয় পার্টিকে বিরোধী দলের আসনে বসাতে পারতাম!