Image description
♦ ২১টি কোম্পানির সব বাসই পুরোনো ♦ ৫০ জন মালিকের ১২২০ পারমিটবিহীন বাস চলছে ঢাকার বিভিন্ন রুটে

রাজধানীর পরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনতে নির্দিষ্ট করা হয়েছে ২১ কোম্পানির ২ হাজার ৬১০টি বাস। এর মধ্যে প্রাথমিকভাবে ১০০ বাস গোলাপি রং করে মাঠে নামিয়েছেন বাস মালিকরা। ক্রমান্বয়ে সবগুলো বাস রং করা হবে বলেও জানিয়েছেন তারা। অনুসন্ধানে জানা যায়, সবগুলো বাসই পুরোনো। এর মধ্যে কোনোটির ফিটনেস নেই, আবার কোনোটির বডি ভাঙাচোরা। পুরোনো বাসে গোলাপি রং দিয়ে নতুন মোড়কে সড়কে নামাচ্ছে পরিবহন মালিক সমিতি। তাদের এ কৌশলকে আধুনিক ও নিরাপদ রাজধানীর জন্য খুব দৃষ্টিকটু বলে মত পরিবহন সংশ্লিষ্টদের।

গত ৬ ফেব্রুয়ারি ২১ কোম্পানির ২ হাজার ৬১০টি বাস দিয়ে ই-টিকিটিং ও কাউন্টারভিত্তিক বাস চালু উদ্বোধন করে মালিক সমিতি। প্রথম ধাপে ১০০টি বাসে গোলাপি রং দিয়ে এ ব্যবস্থা চালু করা হয়। পরবর্তী ধাপে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির সব বাস এর আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছে মালিক সমিতি। শুধু আবদুল্লাহপুর নয়, ঢাকাকে চারটি ভাগে বিভক্ত করে চারটি আলাদা রঙে এ ব্যবস্থা চালুর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২১ কোম্পানির সব বাসই পুরোনো। এর মধ্যে অধিকাংশ বাসই লক্কড়ঝক্কড় ও ফিটনেসবিহীন। তার ওপর রয়েছে রুট পারমিটবিহীন বাস। মালিকরা শুধু রং ও নির্দিষ্ট রুট করে সড়কে চলাচলের সুযোগ করে নিতে চাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা যায়, রাজধানীতে আরটিসি অনুমোদিত বাস রুটের সংখ্যা ৩৮৮টি। এর মধ্যে এখন অকার্যকর ২৭৮টি। সক্রিয় ১১০টি রুটে অনুমোদিত গাড়ির সংখ্যা ৭ হাজার ৪৩টি। সক্রিয় রুটগুলোয় এখন গাড়ি চলছে ৪ হাজার ৫৪৬টি। এর মধ্যে ফিটনেসবিহীন বাসের সংখ্যা ১ হাজার ৫৩টি। ঢাকার সড়কে বাস নামাতে বিভিন্ন বাস কোম্পানির মালিকরা আরটিসি কমিটিতে আবেদন জানিয়েছেন। সে তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ৫০টি বাস কোম্পানির ২ হাজার ৮৮৫টি বাস চলাচলের অনুমতি রয়েছে। এতে ২০ বছরের অর্থনৈতিক মেয়াদকাল ফুরানো বাসের সংখ্যা ৭০৪টি। রুট পারমিট রয়েছে ১ হাজার ৬৫৫টি বাসের।

এ হিসাব অনুযায়ী, ৫০ জন বাসমালিকের ১ হাজার ২২০টি রুট পারমিটবিহীন বাস ঢাকার বিভিন্ন রুটে চলাচল করছে। এসব মালিকরাই আবার নতুন করে ২ হাজার ৯১০টি বাস ঢাকার বিভিন্ন সড়কে নামানোর তোড়জোড় শুরু করেছেন। আরটিসি কমিটির সদস্যরা বলেন, ২ হাজার ৯১০টি বাসের মধ্যে প্রায় সবগুলোই ফিটনেসবিহীন। এ বাসগুলো ঢাকায় রুট পারমিট হারিয়ে ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন জেলায় চলাচল করছে। লক্কড়ঝক্কড় এসব বাসের ফিটনেস সনদ পেতে বিআরটিএ আর রুট পারমিট পেতে ডিএমপি কার্যালয়ে নানা লবিং করছেন মালিকরা। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ও ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এসব বাসের অধিকাংশই ফিটনেসবিহীন। পাশাপাশি এসব বাসের রুট পারমিটও নেই। এক রুটের পারমিট বাতিল হওয়ায় অন্য রুটে ভিন্ন কোম্পানির ব্যানারে এসব বাস পরিচালিত হচ্ছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার মেয়াদোত্তীর্ণ, লক্কড়ঝক্কড় ও ফিটনেসবিহীন বাস সরানোর উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু বর্তমান মালিক সমিতির নেতারা কৌশলে লক্কড়ঝক্কড় বাসে গোলাপি রং দিয়ে সড়কে নামাতে চাচ্ছে। যা কখনোই একটা রাজধানীর জন্য কাম্য হতে পারে না। মালিকরা যে ২ হাজার ৬১০টি বাস নতুন মোড়কে চালাতে চাচ্ছেন সেগুলোর রুট পারমিট ও ফিটনেস আছে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।