
বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে সৌদি আরবে পাড়ি দিচ্ছেন একের পর এক রোহিঙ্গা। কয়েক দশকে বাংলাদেশি পাসপোর্টে সৌদিতে প্রবেশ করেছেন কমপক্ষে ৫ লাখ রোহিঙ্গা। যাদের সবাই কাগজেকলমে অবৈধ ‘বাংলাদেশি’ হিসেবে সৌদি আরবে বসবাস করছেন। বাংলাদেশি হিসেবে শুধু বসবাস নয়, তারা জড়িয়ে পড়ছেন নানান অপকর্মে। এতে বাংলাদেশিদের নিয়ে বিরূপ ধারণা সৃষ্টি হচ্ছে সৌদির নাগরিকদের মধ্যে।
বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে ১০ বছর আগে সৌদি আরব গেছেন পবিত্র নগরী মক্কার আল মিসফালাহ এলাকার ইমাদাত আল জাহাব হোটেলের কর্মচারী শফিউল্লাহ। তিনি বলেন, ‘সাড়ে ৪ লাখ টাকা খরচ করে সৌদি আরব এসেছি। আকামা নেওয়ার পর আর নবায়ন করিনি। এখন চেষ্টা করছি আমার পরিবারের অন্য সদস্যদেরও নিয়ে আসার।’
জানা যায়, নব্বইয়ের দশকে বেশ কিছু রোহিঙ্গাকে শরণার্থী হিসেবে নেয় সৌদি সরকার। তারা শরণার্থী মর্যাদা এবং সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে। কিন্তু সৌদি সরকার শরণার্থী হিসেবে নেওয়া বন্ধ করলেও থামেনি রোহিঙ্গাদের সৌদি যাত্রা। তারা বাংলাদেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করেই যাচ্ছেন সৌদিতে। গত তিন দশকে বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করে কমপক্ষে ৫ লাখ রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছেন সৌদি আরবে। এসব রোহিঙ্গার সিংহভাগই অবৈধভাবে অবস্থান করছেন মক্কা এবং মদিনার বিভিন্ন এলাকায়। সৌদি আরবের আইন অনুযায়ী- সৌদিতে বিদেশি শ্রমিকদের কফিলের (সৌদি নাগরিক) অধীনে থাকতে হয়। কফিলের অধিনে বিদেশি শ্রমিকদের আকামা (কাজের অনুমতি) দেয় সৌদি সরকার। কিন্তু বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করে পাড়ি জমানো রোহিঙ্গারা সৌদি আরবে এসে পালিয়ে যান কফিলের কাছ থেকে। ভিসা অনুযায়ী যে এলাকায় থাকার কথা, সেখানে অবস্থান না করে চলে যান রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায়। আকামা অনুযায়ী করেন না কাজ। তারা চলে যান আগে থেকেই সৌদিতে অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের কাছে। এমনকি পরবর্তীতে আকামাও নবায়ন করেন না। ফলে কাগজে কলমে বাংলাদেশি হিসেবে প্রবেশ করা রোহিঙ্গারা হয়ে যান অবৈধ। বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করে সৌদিতে যাওয়া রোহিঙ্গারা জড়িয়ে পড়ছেন নানা অপরাধে। ফলে রোহিঙ্গাদের কারণে বাংলাদেশিদের বিষয়ে বিরূপ ধারণা সৃষ্টি হচ্ছে সৌদি আরবে। এতে বিপাকে পড়ছেন প্রকৃত বাংলাদেশিরা। যদিও সৌদি আরবে অবৈধভাবে বসবাস করা রোহিঙ্গাদের জন্য স্থায়ীভাবে কিছু করতে চায় সৌদি সরকার। এজন্য সৌদি আরবে অবৈধভাবে বসবাস করা রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট নবায়নের জন্য ২০১০ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব দেয় সৌদি সরকার। ২০২২ সালের ১৩ নভেম্বর সৌদি সরকারের উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নাসির বিন আবদুল আজিজ আল দাউদের বাংলাদেশ সফরের সময় রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট দেওয়ার বিষয়ে সমঝোতা সই হয়। ২০২৪ সালের ১২ মে সৌদি আরবের উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. নাসের বিন আবদুল আজিজ আল দাউদের নেতৃত্বাধীন একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল ঢাকা সফর করে। সে সময় রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট নবায়নে আবারও তাগিদ দেয় সৌদি আরব। সৌদি সরকারের সঙ্গে সমঝোতা অনুযায়ী দুই দেশের মধ্যে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠিত হয়। চলতি বছরের জুনের মধ্যেই সৌদিতে থাকা ৬৯ হাজার রোহিঙ্গাকে দেওয়া হচ্ছে বিশেষ ক্যাটাগরির এমআরপি পাসপোর্ট। এরই মধ্যে সৌদি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ২৫ হাজার ৬১৫ জনের একটি তালিকাও পাওয়া গেছে।