Image description

তথ্য প্রমাণ ও সূক্ষ বিশ্লেষণের মাধ্যমে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নানা অজানা তথ্য উঠে এসেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টে। প্রতিবেদনে অপরাধের নির্দেশদাতা হিসেবে সরাসরি অভিযুক্ত করা হয়েছে শেখ হাসিনাকে। তুলে ধরা হয়েছে মানবতাবিরোধী অপরাধে ক্ষমতাচূত আওয়ামী লীগ, কিভাবে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করেছে তার চিত্র।

রিপোর্টের ভিত্তিতে শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করতে কি বলছেন আইন ও রাজনীতি বিশ্লেষকরা? এরপর আর কিভাবে বাংলাদেশকে সহায়তা করবে জাতিসংঘ?

শেখ হাসিনা সহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে যখন বিচারের দাবি উঠছে, তখন জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদন অকাট্য দলিল হিসেবে, তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে অনেকটাই সহায়ক হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন আইন ও রাজনীতি বিশ্লেষকগণ।

 

আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের দোসরদের বিচারের আবশ্যকতা, ন্যায্যতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা আরো অনেক বেশি স্পষ্ট করে ফুটিয়ে তুলেছে এই প্রতিবেদন। বিচার কাজের সহায়ক ম্যাটেরিয়াল হিসেবে প্রতিবেদনটির সাক্ষ্যমূল্য রয়েছে বলেও মনে করছেন তিনি।

 

বাংলাদেশের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম ও সাংবাদিকদের সাথে এক প্রেস ব্রিফিং এ বলেছেন তারা যেসব তথ্য প্রমাণ পাচ্ছেন তার সঙ্গে জাতিসংঘের এই প্রতিবেদনের সাদৃশ্য রয়েছে এবং এটিকে অকাট্য দলিল হিসেবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ব্যবহার করা যাবে। 

 

তবে শেখ হাসিনা ও অন্যান্য জড়িতদের বিচারে, বাংলাদেশে বিচার কাজের চেয়ে, সরকারের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত বা আইসিসিতে মামলা করার প্রয়োজন বলে মনে করেন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সাবেক দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ও যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অফ এসএক্স এর আইনের শিক্ষক আব্বাস ফয়েজ।

কারণ হিসেবে তিনি ব্যাখ্যা করেন, এমন গুরুতর বিষয় মোকাবিলা করার আগে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় বড় ধরনের সংস্কার প্রয়োজন। মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে পাঠানোর জন্যও বাংলাদেশ সরকারের প্রতি পরামর্শ তার।

 

জাতিসংঘের এই প্রতিবেদনের মধ্য দিয়ে বিচারের একটি নির্ভরযোগ্য ভিত্তি সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন অ্যাডভোকেট এলিনা খান। তবে প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম মনে করেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করতে রাষ্ট্র আগ্রহী বা সক্ষম না হলে, তখন আইসিসিতে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে।

জাতিসংঘের এই প্রতিবেদন একটি সাহসী ও নিরপেক্ষ কাজ হিসেবে প্রশংসিত হয়েছে সচেতন মহলে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও এই প্রতিবেদনকে স্বাগত জানিয়েছে।

 

তবে এরপর ভবিষ্যতে পদক্ষেপ হিসেবে কি করবে জাতিসংঘ?

সংস্থাটির মানবাধিকার কমিশনের এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রধান রোরি মুনগুন সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশে জাতিসংঘের আরো বেশি উপস্থিতির মধ্য দিয়ে, তাদের স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে ভূমিকা রাখার ব্যাপারে আশাবাদী। পরবর্তী ফলোআপ পর্যায়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, নাগরিক সমাজ এবং বিচার বিভাগের সাথে কাজ করার এবং সংস্কার কাজ এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করার কথা বলেছেন তিনি।

বিচার কাজের জন্য জাতিসংঘের এই রিপোর্টটি প্রাথমিক ভিত্তি হিসেবে কাজ করলেও, আদালতে ব্যবহারের জন্য আরো গভীর এবং সুনির্দিষ্ট অপরাধমূলক তদন্তের প্রয়োজন হবে। বিচার কাজের জন্য কোন ঘটনার ভিত্তিতে জাতিসংঘের কাছ থেকে আরো বিস্তারিত তথ্যের প্রয়োজন হলে, জাতিসংঘের নিয়ম অনুযায়ী আবেদন করলে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অনুমতি সাপেক্ষে ও সুরক্ষা নিশ্চিত করে তথ্য দেয়া সম্ভব বলেও জানান তিনি।

রোরি মুনগেন আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, সামনের দিনগুলোতে দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে কাজ করবে, এমন একটি স্বাধীন জাতীয় মানবাধিকার কমিশন গঠনে সহায়তা করতেও আগ্রহী জাতিসংঘ।