![Image description](https://content.bdtoday.net/files/img/202502/e5df69abe710cea77fef5154767f7d5d.png)
নতুন ধরণের উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত আবিষ্কারের আশা করছে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিআরআরআই)। বন্যার সময় বা জোয়ারের পানিতে তলিয়ে থাকা ফসলি মাঠে কোনো ক্ষতি ছাড়াই ধান গাছ নিজের জীবনচক্রকে এগিয়ে নেবে এমন জাতের আবিষ্কারের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটির বিজ্ঞানীরা।
তাদের মতে, লবণ সহিষ্ণুতার পাশাপাশি দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় সমস্যা বন্যা বা নদীর জোয়ারের পানিতে ফসলি ক্ষেত তলিয়ে থাকা। এতে ধান গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ফলে স্বাভাবিক উৎপাদনও ব্যাহত হয়। এ কারণে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট বরিশালে নতুন গবেষণা চলছে। যেখানে উচ্চফলনশীল ধান গাছে বরিশালের স্থানীয় জাতের ধান গাছের জিনের মিশ্রণ ঘটিয়ে নতুন জাত আবিষ্কারের চেষ্টা চলছে।
জানা গেছে, নতুন গবেষণার অধীনে বরিশালের স্থানীয় ৩৬৪টি জাতের ধানের বীজ সংগ্রহ করেছে গবেষণা ইনস্টিটিউট। যার মধ্যে দুধমনা, সাদা মোটা, নাকুচি মোটা, হলদে মোটা, গিরমি, ডিঙ্গামানিক, ভূষিহারা, সবরি মোটা, সাক্ষর খোরা, ঘুনসি, চাউলা মাতারি, বেতি চিকন, মোথা মোটা, মৌ-লতা, দুধ কলমসহ ৩৬৪ জাতের ধান রোপণ করা শেষে বেশ কয়েকটি জাতের গাছ থেকে আশানুরূপ ফলও পেয়েছেন গবেষকরা। তাদের মতে দুধমনাসহ বেশ কয়েকটি স্থানীয় জাতের ধান গাছ জোয়ারের পানিতে ফসলি ক্ষেত তলিয়ে থাকলেও স্বাভাবিক জীবন যাপন করে থাকে। আর এ গাছগুলো উচ্চতায়ও বেশ লম্বা হয়। তাই এই জাত উচ্চফলনশীল করার প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে।
ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান ও প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুহম্মদ আশিক ইকবাল খান বলেন, বরিশালের মানুষ মোটা চাল যেমন বেশি খায়, তেমনি এ অঞ্চলে ধান বলতে আমন ধানকেই বোঝায়। এখানে ধান চাষের সবচেয়ে বড় সমস্যা জোয়ারের পানি। এরসঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে থাকার মতো কোনো জাত আমরা এখনও আবিষ্কার করতে পারিনি। আমরা মাঠপর্যায়ে দেখেছি, জোয়ারের মধ্যেও স্থানীয় কিছু জাত বেঁচে থাকে। যার মধ্যে সাদা মোটাসহ বেশ কয়েকটি জাতের ধানগাছ রয়েছে। যেমন ভোলার দিকে কালোঘোড়া নামে একটি জাতের ধানগাছ জোয়ারের পানিতে আসা যাওয়ার মধ্যে ভালো থাকতে আমরা দেখেছি। ডিঙ্গামানিকও ভালো হয়।
ড. মুহম্মদ আশিক আরও বলেন, আমাদের আবিষ্কৃত জাতগুলো জোয়ার-ভাটার পানিতে টিকতে পারে না। কিন্তু স্থানীয় জাতগুলো সুন্দরভাবে বেঁচে থাকে। এটা দেখার পর আমরা স্থানীয় জাতের বৈশিষ্ট্য নিয়ে ভাবা শুরু করি। আমরা জানি গাছের বৈশিষ্ট্য কন্ট্রোল হয় একজোড়া জিন দিয়ে। স্থানীয় জাতের ভেতরে নির্দিষ্ট কিছু জিন আছে, যার ফলে জোয়ারের পানিতে গাছগুলো টিকে থাকছে। আমরা সারা বরিশাল থেকে ৩৬৪টি আমন ধানের জাত সংগ্রহ করছি। এরপর এগুলো গবেষণা কেন্দ্রের ভূমিতে জোয়ারের পানি আসা যাওয়ার সিস্টেমের মধ্যে ট্রায়াল দেওয়া হয়েছে। আমাদের প্রয়োজন লম্বা চারা। যেটি জোয়ারের পানিতে টিকে থাকবে এবং পলি জমবে না। সেইসাথে উচ্চ ফলনশীলও হবে। আমরা এ অবধি দুধমনা জাতের মধ্যে লম্বা গাছের বৈশিষ্ট্য পেয়েছি।
বিআরআরআইয়ের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আরও বলেন, স্থানীয় জাতের মধ্যে অনেকগুলো বৈশিষ্ট্য আছে। কিন্তু ফলন কম, আর উচ্চ ফলনশীল জাতে ফলন বেশি কিন্তু সে পানিতে টিকতে পারছে না। তাই এখন আমরা এ দুটোকে ক্রস করেছি। আমাদের টার্গেট উচ্চ ফলনশীলও হবে এবং জোয়ারের পানিতেও টিকে থাকবে। ব্রি-ধান ১০৯ জাতের সঙ্গে দুধমনার ক্রস করেছি। যাতে স্থানীয় জাতের ফলন দুই আড়াই টন হলে, আবিষ্কৃত নতুন জাতে ৫-৬ টন ফলন হয় আমন মৌসুমে। জোয়ারের পানিতেও ধানগাছ নষ্ট হবে না। ব্রি-ধান ১০৯ আগামী বছর আমন মৌসুমে কৃষকের মাঠে যাবে। তবে এই জাতটাকে আরও উন্নত করতে ৫-৬ বছর সময় লাগবে।