![Image description](https://content.bdtoday.net/files/img/202502/03e5e17efa015ed66bacf90f4a7312f3.png)
নথিপত্র পাওয়া যাচ্ছে না শেষ হওয়া ‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি স্থাপনাসমূহ সংরক্ষণ ও পুনর্নির্মাণ’ প্রকল্পের। এছাড়া দায়িত্ব পালনে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের বিভিন্ন ধরনের গাফিলতিও রয়েছে। এ ধরনের একটি প্রকল্পের আওতায় বিদেশ সফর করেছেন ১৬ জন কর্মকর্তা। তাদের এ সফরের প্রয়োজনীয়তা ও যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন,পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)।
সম্প্রতি প্রকল্পটির প্রভাব নিয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এসব প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আইএমইডি’র সাবেক সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিষয়গুলো এখন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে তদন্ত করে দেখা উচিত।
আইএমইডি’র প্রতিরবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পের পিসিআর-এ (প্রকল্প সমাপ্ত প্রতিবেদন) বৈদেশিক শিক্ষা সফর হিসেবে ২০১৮ সালে ৭ জনের একটি টিম এবং ২০১৯ সালে ৯ জনের একটি টিম শিক্ষা সফরের নামে বিদেশ ভ্রমন করেছে। কিন্তু মূল ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) এ বিষয়ে কোন কিছু উল্লেখ ছিল না। তবে সংশোধিত ডিপিপির মূল ডিপিপি এবং সংশোধিত ডিপিপির মধ্যে প্রাক্কলিত ব্যয়ের তুলনার বিপরীতে বৈদেশিক প্রশিক্ষণের কথা বলা আছে। অপরদিকে বছরভিত্তিক আর্থিক ও বাস্তব পরিকল্পনায় একই কোডে প্রশিক্ষণ হিসেবে উল্লেখ করা আছে। তবে বিদেশ প্রশিক্ষণের কথা বলা হলেও পিসিআর এ বৈদেশিক শিক্ষা সফর হিসেবে দেখানো হয়েছে। ডিপিপিতে বৈদেশিক প্রশিক্ষণ বা শিক্ষা সফর বিষয়ে কোন ব্যয় বিবরণীসহ এ সফরের যৌক্তিকতা ও প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে কোন কিছুই উপস্থাপন করা হয়নি।
আইএমইডি বলছে, এ শিক্ষা সফরের ফলে কী আউটপুট অর্জিত হয়েছে এবং মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি স্থাপনা সংরক্ষণ ও নির্মাণের সঙ্গে এই বিদেশ সফরের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়নি।
জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি স্থাপনাগুলো সংরক্ষণ ও পুন:নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১৭ সালের জুলাই থেকে থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদকাল নির্ধারণ করাহয়েছিল। সেসময় মোট ৩৪২টি স্মৃতিস্থ পনা গুলোর সংরক্ষণ ও পুনঃনির্মাণের জন্য মোট ব্যয় ৪১ কোটি লাখ ২৬ লাখ ৫০ হাজার টাকায় প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। পরে প্রথম সংশোধন করে মোট ২৮০টি স্মৃতি স্থাপনাগুলোর সংরক্ষণ ও পুনঃনির্মাণের জন্য ব্যয় কমে ২৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকা নির্ধারণ করে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। সে হিসেবে টাইম ওভার রান হয়েছে ৫০ শতাংশ।
স্মৃতিস্থাপনা গুলোর সংরক্ষণ ও পুনঃনির্মাণের জন্য জায়গা ও স্থাপনা না থাকায়, দৈত্বতা, ব্যক্তিগত জমিতে স্থাপনা কাজে বাধা দেওয়া ইত্যাদি কারণে ৩৪২টি থেকে ৬০টি কমিয়ে ২৮২টি স্মৃতিস্থাপনাগুলোর সংরক্ষণ ও পুনঃনির্মাণের জন্য ডিপিপি সংশোধনের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রকল্পটির মেয়াদ ২০১৭ সালের জুলাই থেকে শুরু করার জন্য নির্ধারণ করা হলেও প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ করা হয় ৯৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ ৭ মাস পর। প্রকল্পের আওতায় ৮টি বিভাগের মোট ৫৪টি জেলায় ১৬৪ টি উপজেলায় মোট ২৮০টি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি স্থাপনা্ক্ষণ ও পুন:নির্মাণ করার জন্য নির্ধারিত ছিল।
প্রকল্পটির মেয়াদকাল ২০১৯ সালের জুনের মধ্যে প্রথম অর্থবছরে প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করতে দেরি হয়। প্রকল্পের আওতায় অনেক স্কীমের মেরামত বা পুন:নির্মাণযোগ্য জায়গা বা স্থপনা না থাকায় দৈত্বতা, ব্যক্তিগত জমিতে বা স্থাপনায় কাজে বাধা দেওয়া ইত্যাদি কারনে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব না হওয়ায় প্রকল্পটির মেয়াদ এক বছর অর্থ্যাৎ ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়।
প্রকল্প মূল্যায়নে বলা হয়েছে, প্রকল্পটির আওতায় সারা দেশের ২৭২টি স্মৃতিস্তম্ভের কাজ করা হয়েছে। এলজিইডি এর মাধ্যমে এই কাজ শেষ করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় কোন সংস্থা নেই। তাই এটির কাজ ও কার্যক্রম পরিচালনা বা মূল্যায়নের যথেষ্ট ঘাটতি ছিল। স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের পর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে কোন পরিদর্শন বা মূল্যায়ন করা হয়নি। স্মৃতি স্তম্ভগুলো প্রকল্প সমাপ্তির শেষে কোন কর্তৃপক্ষ রক্ষণাবেক্ষণ ও সংরক্ষণ করা হবে সে বিষযে অর্থাৎ প্রকল্পের বিষয়ে কোন দিক নির্দেশনা নেই। সে জন্য এ বিষয়ে তথ্য প্রয়োজন। নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভগুলোর বর্তমান অবস্থা কী- সে বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা আবশ্যক। সে জন্য উদ্যোগী মন্ত্রণালয় তথা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রকল্পের আওতায় নির্মিত অন্যান্য স্মৃতি স্তম্ভগুলোর বর্তমান অবস্থার বিবরণ সংগ্রহ করে আইএমইডিতে পাঠাতে হবে। এ অবস্থায় অন্যান্য সব স্মৃতি স্তম্ভগুলোর বর্তমান অবস্থা বিষয়ে একটি প্রতিবেদন উদ্যোগী মন্ত্রণালয় থেকে চাওয়া যেতে পারে এবং এ সংক্রান্ত বিষয়ে সম্পাদিত কার্যক্রমের সংশ্লিষ্ট নথিপত্র ও তথ্যাদি সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি স্থাপনাগুলো সংরক্ষণ ও পুন:নির্মাণ প্রকল্পটি উদ্যোগী মন্ত্রণালয় হিসেবে কাজ করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এছাড়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কাজ করেছে বাস্তবায়নকারী সংস্থা। পিসিআরের বর্ণিত তথ্য মতে, উদ্যোগি মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্পটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কোন মনিটরিং হিসেবে পরির্দশন করা হয়নি। অপরদিকে বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসেবে এলজিইডির পক্ষে থেকেও কোন মনিটরিং করা হয়নি।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, প্রকল্পের আওতায় মেরামত ও পুন:নির্মাণ শেষে স্থাপনাগুলো উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছে জমির মালিকানা ভিত্তিতে হস্তান্তর করা হবে বলে ডিপিপিতে উল্লেখ আছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী এবং উপজেলা প্রকৌশলী এই কাজগুলো বাস্তবায়নে সব ধরনের কারিগরী সহায়তা দেবে এবং ভবিষ্যতে প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে সংরক্ষণ কাজ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে উক্তপ্রকৌশলীগণ কারিগরী সহায়তা দেবে বলে ডিপিপিতে বলা হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে অনেক কিছুই অস্পষ্ট থাকায় স্থাপনাগুলোর যথাযথ সংরক্ষণ করা হয়নি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রকল্পের কোন রেকর্ড সংরক্ষণ করা হয়নি। উদ্যেগিী মন্ত্রণালয় হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রকল্প শেষ হওয়ার পর প্রকল্পের যাবতীয় তথ্য ও দলিলপত্রসমূহ সংরক্ষণ করার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কোন নথি বা সম্পূর্ণ তথ্যাদি সংরক্ষণে নেই। প্রকল্পের প্রকল্প পিপিআর-২০০৮ এর ক্রয় সংক্রান্ত রেকর্ড সংরক্ষণ বিষয়ে ধারা ৪৩(১) অনুযায়ী কমপক্ষে ০৫ (পাঁচ) বছর সংরক্ষণ করার বিষয়ে নির্দেশনা আছে।
সারাবাংলা/