Image description
 

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় উপসাগর আমাদের বঙ্গোপসাগর।তার উত্তরে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বদ্বীপ আমাদের বাংলাদেশ।প্রকৃতির বিচিত্র খেয়ালে ভাটির দেশ বাংলাদেশ।আমাদের উজানের প্রতিবেশীরা জাতিসংঘের নদী ও পানি কনভেনশনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ইচ্ছেমতো বাঁধ নির্মাণ করে এবং নদীর গতিপথ বদলে দিয়ে ভৌগলিকভাবে বাংলাদেশকে কোণঠাসা করতে চাচ্ছে।আবার আমাদের এই বঙ্গীয় বদ্বীপের আশ্চর্য ভৌগোলিক ক্ষতিপূরণ বাংলাদেশের জন্য সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদ হয়ে এসেছে।যেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব জনিত কারণে সারা বিশ্বের বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকা পানির নিচে নিমজ্জিত হওয়ার প্রহর গুনছে, সেখানে সৃষ্টিকর্তা আমাদের উপকূলের জন্য অন্য সমীকরণ এঁকে রেখেছেন।১৯৮৪ সাল থেকে ২০২৫ সালের স্যাটেলাইট ছবি বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের দক্ষিণ উপকূল বিশেষ করে নোয়াখালী ও তৎসংলগ্ন উপকূলের সাগরের বুকে জেগে উঠছে বিশাল বিশাল অঞ্চল।এদের মধ্যে নিঝুম দ্বীপের বর্ধিতাংশ স্বর্ণদ্বীপ এর বর্ধিতাংশ ভাসান চর সন্দ্বীপের বর্ধিতাংশসহ অনেক চর দ্বীপের কথা ইতোমধ্যে উঠে এসেছে। সার্বিকভাবে এসব পরিণতি প্রাপ্ত ভূমির পরিমাণ আনুমানিক আটশ বর্গ কিলোমিটারের অধিক, যার মোট আয়তন সিঙ্গাপুর এবং মালদ্বীপের আয়তনের সমান। এছাড়া আরও ১০০০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের সমান ডুবো চরও রয়েছে।এগুলো অদূর ভবিষ্যতে দেশের ভূখণ্ডের সাথে যুক্ত হবে বলে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন।

 

এ বিষয়ে রিমোট সেন্সিং ও জিআইএস স্পেশালিস্ট আহসানুল হক জানান,ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশের উপকূলে প্রতিবছর প্রায় ২০ বর্গ কিলোমিটার নতুন ভূমিও জেগে উঠছে। স্যাটেলাইট ইমেজ পর্যবেক্ষণ করলে আমরা দেখতে পাই এর পরিমাণ প্রায় ১০০০ বর্গ কিলোমিটারের কাছাকাছি এবং ভবিষ্যতে এটা আরও বাড়বে৷২০০৬ সালে জেগে ওঠা ভাসানচরে এখন ভাটার সময় সন্দ্বীপ থেকে পায়ে হেঁটে যাওয়া যাচ্ছে। নিঝুম দ্বীপ থেকে মুক্তারিয়ার ঘাটসহ কয়েকটি স্থানে ক্রস ড্যাম এবং প্রযুক্তিগত উদ্যোগ সম্পন্ন হলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ক্রমান্বয়ে এই সব এলাকার আয়তন বাড়বে এবং তা ১৫ হাজার বর্গকিলোমিটার ছুঁতে পারে। এ যেন বঙ্গোপসাগরের বুকে দেখা দিচ্ছে আরেকটি বাংলাদেশের হাতছানি।১০ হাজার বছর আগে যখন বেঙ্গল ডেল্টার গঠন শুরু হয়েছিল তখন সাগরের উচ্চতা বর্তমান সময়ের চেয়ে ৫০ থেকে ৬০ মিটার কম ছিল। গত ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার বছর ধরে নদীর সিলেকশন প্রক্রিয়ায় নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আমাদের এই বঙ্গীয় বদ্বীপ সৃষ্টি হয়েছে। আর এভাবেই চড়াই উতরাই পেরিয়ে পলি জমার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

 

বর্তমানে গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র এবং মেঘনা রিভার সিস্টেম এবং তাঁদের ট্রিবিউটরি নদীগুলো হিমালয় থেকে বঙ্গোপসাগরে এসে পড়েছে। আর এই যাত্রাপথে বাংলাদেশের বুক পেরিয়ে বছরে প্রায় ১.২ বিলিয়ন টন পলি এনে জমা করছে আমাদের উপকূলে।এগুলো বেশিরভাগই মেঘনা নদী হয়ে নোয়াখালীর উপকূলের কাছাকাছি ক্রমান্বয়ে জমা হচ্ছে এবং এর ফলে নদী এবং বঙ্গোপসাগরের তলদেশে উচ্চতা বৃদ্ধির মাধ্যমে নতুন দ্বীপ এবং চরের সৃষ্টি হচ্ছে।এই প্রক্রিয়ায় গত দুই দশকে ২৫ বর্গ কিলোমিটারের অধিক নতুন ডুবোচর সৃষ্টি হয়েছে।স্যাটেলাইট ছবি বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, এগুলোর মধ্যে গত ২৫ বছরে প্রায় আটশ বর্গ কিলোমিটার ভূমি স্থায়ী রূপ লাভ করেছে। উপকূলীয় এলাকায় গবেষণাভিত্তিক কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডিউলিং অ্যাকচুয়ালি ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড জিওপলিটিকাল ইনফরমেশন সার্ভিসের মতো সংস্থাগুলো৷ জানাচ্ছে, শীঘ্রই আরও বিপুল আয়তনের ভূখণ্ড বাংলাদেশের মানচিত্রে যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।