![Image description](https://content.bdtoday.net/files/img/202502/ebdf2dfa505890ddeb71627341ef4156.png)
অল্প কিন্তু ভালো নীতির পরিবর্তন করে ভোট দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার চলে গেলে বাংলাদেশ উপকৃত হবে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক এম এম আকাশ।
তিনি বলেন, ‘ফিউআর বাট বেটার’ এই নীতিতে অন্তর্বর্তী সরকার চলুক। অল্প কিছু যেগুলো সে পারবে এবং যেগুলো বিয়ন্ড ডাউট মানে পাইলট এক্সারসাইজ করে দেখা যাচ্ছে যেটার উদ্দেশ্য পূরণ করে। এবং কার্যকরভাবে করে। এরকম কয়েকটা পলিসি পরিবর্তন করে তাড়াতাড়ি নির্বাচন দিয়ে চলে গেলে বাংলাদেশের উপকার হবে। অন্যথায় তারা সমস্যায় পড়বে।
রাজস্ব আদায় ও মূল্যস্ফীতি ছাড়া আরও তিনটি চ্যালেঞ্জ আছে জানিয়ে আকাশ বলেন, যার মধ্যে রয়েছে ব্যাংকগুলোতে লিকুইডিটির ক্রাইসিস বা ফরেন এক্সচেঞ্জ ক্রাইসিস। এটা সমাধান না করে বাকিগুলো সমাধান করা যাবে না। চতুর্থ চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বিনিয়োগ হচ্ছে না। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আসছে না। পঞ্চম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে এই চারটার কারণে কর্মসংস্থান ও দরিদ্রতা। এই পাঁচটি চ্যালেঞ্জ সমন্বিত করে অর্থনীতির সমস্যা দূর করতে হবে।
জাগো নিউজের আয়োজনে বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর গুলশানের এমসিসিআই কনফারেন্স হলে ‘ভোক্তার কাঁধে বাড়তি করের বোঝা: উত্তরণে করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় একথা বলেন তিনি।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই অধ্যাপক বলেন, অনানুষ্ঠনিকভাবে একেক জায়গা মেরামত করে সমাধান করা যাবে না। এই সরকার খুবই বিপদে পড়বে। রাজনৈতিক অর্থনীতির অংশটা আমি বলছি, এই সরকার মুক্তবাজার অর্থনীতির। তারা আইএমএফ, বিশ্বব্যাংকের কথা শুনবে। আমার শিক্ষক বা অর্থনীতি বিভাগের ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ শিক্ষার দায়িত্বে রয়েছেন। প্র্যাকটিক্যাল পলিসিতে তার হস্তক্ষেপ কম। তিনি সোশ্যাল ডেমোক্রেসির পক্ষে। আরেকজন সালেহউদ্দিন আহমেদ, তিনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ব্যবসায়ীদের হাতে ছেড়ে দিয়ে চলে গেছেন।
আইএমএফের সঙ্গে সরকারের ভালো সমঝোতা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, আইএমএফের সঙ্গে নেগোসিয়েশন নির্ভর করে ড. ইউনূসের বায়াসের ওপর। তাকে যারা বসিয়েছে, যে ছাত্ররা ও অন্য যে ফোর্স তাদের পলিটিক্যাল বায়াসের ওপর। আমার মনে হয়েছে যে এখানে নেগোসিয়েশন ফেলিওর হয়েছে। এটা মাশরুর রিয়াজও বলেছেন। এর কারণেই এই ভ্যাটটা এসেছে।
তিনি বলেন, ইচ্ছা করে এই সরকার ভ্যাট বাড়িয়েছে তা কিন্তু নয়। না করে তার উপায় ছিল না। কিন্তু এটা করে তিনি যেটা করতে চাইছেন সেটা হবে না। তার রেভিনিউ কালেকশন হবে না। উনি ভাবছেন এটা দিয়ে বিপদ থেকে উদ্ধার হবেন। কিন্তু উনি আরও বিপদে পড়বেন। আমি প্রেডিক্ট করে যাচ্ছি।
এমএম আকাশ বলেন, এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রধান প্রশ্ন ছিল যে দ্রব্যমূল্যের দাম কীভাবে কমানো হবে। না কমালে আমি জনপ্রিয় হবো না। কিন্তু কিছুতেই তা কমানো যায় না। সালেহউদ্দিন সাহেব নিত্যপ্রয়োজনীয় আটটি পণ্যের ট্যারিফ কমিয়ে দিলেন। কিন্তু তাতেও দাম কমেনি। তার মানে সেই পলিসি কার্যকর হয়নি। কিন্তু এর ফলে একটা বোঝা তৈরি হলো। ওই পণ্যের যে শুল্ক, ভ্যাট পাওয়া যেত, তা পাওয়া গেলো না। তার মানে চারমাস পরে সরকার ফিসক্যাল ডেফিসিটের (রাজস্ব ঘাটতি) সম্মুখীন হলো।
‘একদিক দিয়ে তিনি বুঝতে পারলেন তিনি যে অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা ভঙ্গুর হয়ে গেছে, আরেক দিকে তিনি বুঝলেন যে দ্রব্যমূল্য কমছে না। এটা সমাধান করার আগে আসল আইএমএফের সঙ্গে চুক্তি। যে ফিসক্যাল ডেফিসিট থাকলে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার কথা ছিল সেটা দেবো না। চিন্তা করে দেখেন ওটা যদি না দেয় তাহলে আমদানিতে সমস্যা হবে।’
‘দুটো ভালো খবর আছে। একটা হলো রপ্তানি বাড়ছে। আরেকটা রেমিট্যান্স বাড়ছে। মানে বৈদেশিক মুদ্রা বেড়েছে। কিন্তু সেটা তো আমদানি মেটাতে সক্ষম নয়। বিনিয়োগ হচ্ছে না। সুতরাং, তাকে বাইরে থেকে নিতে হবে। এখন টেবিলে যে আলোচনা- আমরা তো আইএমএফ থেকে পাবো না, পাবো কি পাবো না আনসার্টেন। আমরা সব নিয়ম মানতে পারবো কি পারবো না জানি না। সেজন্য আমরা একটু এডিবির কাছ থেকে চেয়েছি, বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে চেয়েছি। পারলে ভারতের কাছে থেকেও চাইবো। এই জায়গায় সরকার আছে।’ যোগ করেন এই অর্থনীতিবিদ।
জরুরি পরিস্থিতিতে সরকার তাড়াহুড়া করে ভ্যাট ও শুল্ক বাড়িয়েছে জানিয়ে এম এম আকাশ বলেন, সরকার কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভ্যাটের হার ১৫ শতাংশের কম ছিল সেগুলো বাড়িয়ে ১৫ করেছে। যেন তারা সবকিছু এক সমান করতে চায়। ব্যবসায়ীরা বলছেন কমিয়েও তো এক সমান করা যায়। সব কিছু ৭ দশমিক ৫ শতাংশ করা যেত। ফলে কিছু পণ্যের দাম বাড়বে। দাম বাড়লে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের ওপর এর প্রভাব পড়বে। কারণ কিছু জিনিসের দাম বাড়লে তার দেখাদেখি অন্য পণ্যের দামও বাড়বে। ফলে মূল্যস্ফীতি বাড়বে।
তিনি বলেন, জানুয়ারি মাসে যখন ঘোষণা হয় তখন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ একটা বিবৃতি দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, গ্যাস আমাদের শিল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এর দাম সরকার ১৫০ শতাংশ বাড়াবে। গত দুই বছরে প্রায় ৩০০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এখন বাড়লে প্রায় ৪০০ শতাংশ বাড়বে গ্যাসের দাম। এই তিন বছরে যে অনুমান করে ব্যবসা করেছি সেটা পুরোপুরি পরিবর্তন হবে। খরচ বেড়ে গিয়ে আমরা প্রতিযোগিতা করতে পারবো না।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘সরকার ট্রাকসেল বন্ধ করে দিলো। বাজেটের ঘাটতি হবে, এজন্য সামাজিক সুরক্ষার বাজেট তারা দিতে পারবে না। তার মানে রিয়েল ইনকাম ফল। সবাই বলছে আপনি নির্বাচিত সরকার না। সুতরাং, আপনি চলে যান, নির্বাচিত সরকারকে (ক্ষমতা) দিয়ে যান। আপনার তো ত্যাগ করারও রাইট নেই, কারণ আপনি তো নির্বাচিত নন। কোনো মৌলিক নীতি নেওয়ার সঠিকতা আপনার নেই। কারণ আপনি অন্তর্বর্তী সরকার।
এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, সংস্কার তো রাজনৈতিক অর্থনীতি ছাড়া হবে না। আপনি সংস্কার করলেই কী! আপনি সংস্কারের ৮ রিপোর্ট তৈরি করলেন। কিন্তু নির্বাচনের পর যে সরকার এলো সে একটাও মানলো না। তখন কী হবে। রাজনৈতিক অর্থনীতি ঠিক না হলে অ্যাসেসমেন্ট অব ইমপ্যাক্ট হবে না।