Image description
 

হযরত ঈসা (আ) বা যিশু এখন থেকে ২০০০ বছর আগে তিনি আলস্যের খুব সুন্দর সংজ্ঞা দিয়েছেন। বাইবেলের হিতোপদেশে বলা হয়েছে যে, আরেকটু ঘুম, আরেকটু তন্দ্রা, বিছানায় আরেকটু গড়াগড়ি দারিদ্র্য ও অভাব দস্যুর মতো দেবে হানা তোমার অন্দরে।

অর্থাৎ আরেকটু ঘুম, আরেকটু তন্দ্রা, বিছানায় (বিশেষত শীতের সময়) ইস! আরেকটু গড়াগড়ি করলেই কী হবে? দারিদ্র্য এবং অভাব দস্যুর মতো তোমার ঘরে হানা দেবে।

তো মহামানবদের শিক্ষার মধ্যে কিন্তু মূলত কোনো তফাৎ নাই। তাদের শিক্ষার মূলবাণী এক। মহামতি বুদ্ধ ধম্মপদে বলেছেন যে, মূর্খরা আলস্যে নিপতিত হয় আর প্রাজ্ঞরা সচেতন প্রয়াসে সৎকর্মে সদা তৎপর থাকে।

ঋগবেদে বলা হয়েছে যে, অলস মস্তিষ্ক কুচিন্তার সহজ শিকার।

 

যখনই মস্তিষ্ককে অলস রাখবেন কাজ ছাড়া রাখবেন এটা কুচিন্তার সহজ শিকার হবে । আর আমরা বলি যে, অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। এবং অলস মানুষও কার কারখানা হয়ে যাবে? শয়তানের কারখানা হয়ে যাবে। মাথা যদি কারখানা হয় দেহ কি আর কারখানার বাইরে থাকতে পারে?

রসুলুল্লাহ (স) বলেছেন যে, আলস্য ও কর্মবিমুখতা যাকে পিছিয়ে দেয়, সে সৎকর্মে পিছিয়ে পড়ে, বংশপরিচয় তাকে কখনো এগিয়ে দেবে না।

দেখবেন যে, যাদের খান্দানি বংশ বা অভিজাত বংশ, এই বংশের উত্তরপুরুষরা সব আলস্যের কারণে তারা পিছিয়ে পড়ে। তারা কর্মতৎপর হতে পারে না।

তো আসলে অলস মানুষ সবসময় নিজেকে বন্দি করে রাখে, কোনো উদ্যোগ নেয় না। ফলে তার যে সামর্থ্য এই সামর্থ্য সীমিত হয়ে যায় এবং সে শয়তানের কারখানায় রূপান্তরিত হয়।

আলস্য: শারীরিক এবং মানসিক

শয়তানের কারখানার নেট প্রোডাকশন কী? নেতিবাচকতা। নেতিবাচকতা কী এটা আমরা আরেকটু পরে আলোচনা করব। তার আগে আলস্য বলতে আমরা কী বুঝি সেটা আমরা একটু পরিষ্কার করি।

আমরা সাধারণত মনে করি যে, কায়িক শ্রমবিমুখ অর্থাৎ দৈহিক শ্রমবিমুখ শারীরিক পরিশ্রম করতে চায় না এরা হচ্ছে অলস। কিন্তু এর চেয়েও বেশি অলস হচ্ছে মানসিক শ্রমবিমুখ যারা, এই ব্রেনটাকে যারা কাজে লাগাতে চায় না। ব্রেনটাকে অলস ছেড়ে রাখে।

বিখ্যাত গল্প জানেনই তো ‘পিপুঘুশু’ আরকি। এত অলস যে আগুন লাগছে, একজন বলছে পিপু মানে পিঠ পুড়ছে, আরেকজন বলছে ঘুশু মানে ঘুরে শো। অর্থাৎ এটাও বলতে চাচ্ছে না, বলছে, ঘুশু। এটা তো শারীরিক সে নিজের ক্ষতি করে।

আর মানসিক অলস যারা, যারা ব্রেনটাকে ভালো কাজে ব্যবহার করে না, যারা ব্রেনটাকে অলস ছেড়ে দেয় এই ব্রেনটা লিজ নিয়ে নেয় শয়তান। লিজ মানে হচ্ছে বর্গা। শয়তান এটা চাষাবাদ করে এবং অলস মস্তিষ্ক যে কারণে বলা হয় শয়তানের কারখানা।

শারীরিক অলস মানুষের চেয়েও মানসিক অলস যারা তারা নিজের এবং সমাজের জন্যে বেশি ক্ষতিকর। শারীরিক অলস সে নিজের ক্ষতি করে আর মানসিক অলস নিজের এবং সমাজের ক্ষতি করে।

শয়তানের কারখানার ফল: নেতিবাচকতা এবং নিরুৎসাহিত করা।

তো অলস মস্তিষ্ক থেকে শুরু হয় নেতিবাচকতা এবং সে সবসময় নিজে তো নিরুৎসাহিত থাকে পরিচিত সবাইকে সে নিরুৎসাহিত করে, আশাহত করে হতোদ্যম করে এবং সবকিছুর মধ্যে একটা কিন্তু, যদি, তবে, ঢুকিয়ে দেয়। অর্থাৎ কনফিউজড করে দেয় মানুষকে।

সবকিছুতেই তার সবসময় একটা সংশয় একটা আশঙ্কা একটা অমূলক ভয় থাকে। আচ্ছা রাস্তায় বেরোবে আচ্ছা কী না হয় কী হয়? থাক দরকার নাই আরকি। আজকে বেরোবে তো দেরি হয়ে গেছে আরকি। এখন গিয়ে কী পাব? গেলে কিন্তু পেতেন কাজ হয়ে যেত আরকি কিন্তু এখন গেলে কি পাবে? ব্যস আপনি পিছিয়ে পড়লেন।

এই নেতিবাচক মানুষ তার নিজের ভেতরে হতাশা থাকে। কারণ সে ব্রেনটাকে কাজে লাগায়নি, শয়তান এটা কারখানা বানিয়েছে। এবং যারা তার সংস্পর্শে আসে তাদের ওপরে এদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাব পড়ে। ফলে এদের প্রভাবে যারা আসে আপনি যদি যান আপনি উদ্যম হারিয়ে ফেলবেন লক্ষ্য হারিয়ে ফেলবেন উৎসাহ হারিয়ে ফেলবেন।

প্রাণোচ্ছল থাকতে শিক্ষার্থীদের করণীয় কী?

কাজের ক্ষেত্রে বা শিক্ষাঙ্গনে যারা ছাত্রছাত্রী শিক্ষার্থী রয়েছেন শিক্ষাঙ্গনে যারা নেতিবাচক কথা বলে, যারা বুলিং করে যারা গীবত করে যারা খালি খোঁচাখুঁচি করে কখনো আঙুল দিয়ে খোঁচা দেয় কখনো কথা দিয়ে খোঁচা দেয়। কখনো চোখ কী করে? ইশারা দিয়ে খোঁচা দেয় এবং যারা ফাঁকিবাজ তাদের সংস্পর্শ সৌজন্যমূলক সম্পর্ক রাখবেন, না হলে আবার ঝামেলা বেশি কিন্তু তাদের দ্বারা কখনো প্রভাবিত হবেন না তাদেরকে সবসময় এড়িয়ে চলবেন।

আমাদের জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম তার একটা কবিতার দুটো লাইন যেটা আমরা বলি, বিশ্বাস আর আশা যার নাই, যেও না তাহার কাছে, নড়াচড়া করে তবুও সে মরা, জ্যান্ত সে মরিয়াছে।

অর্থাৎ নেতিবাচক মানুষ আর মৃত মানুষের মধ্যে কোনো তফাৎ নাই। কারণ নেতিবাচক মানুষ কারো মধ্যে কখনো উৎসাহ উদ্দীপনা প্রাণ জীবন সঞ্চার করতে পারে না। নেতিবাচক মানুষ সবসময় নিজে তো আলস্যে ভোগে অন্যকেও অলস করে দেয়।

এখন নেতিবাচক মানুষ চিনবেন কীভাবে? আগে এটা শনাক্ত করতে হবে যে, নেতিবাচক মানুষ আসলে কে? মানুষ কিন্তু সব ভালো। এখন দরুন খারাপ লোকের পাল্লায় পড়লে সে খারাপ হবে আরকি।

১. বিনোদনের নামে অনেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্ত।

তো শয়তান কার মাথাটাকে তার ফ্যাক্টরি বানিয়ে ফেলেছে এটা প্রথমে শনাক্ত করবেন।

এক হচ্ছে, বিনোদনের নামে যারা সোশ্যাল মিডিয়া ইউটিউবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটায়। বুঝবেন যে, এরা বেশিরভাগ নেতিবাচক মানুষ। এরা আসলে অলস মানুষ যারা অলস সময় কাটাচ্ছে, তার ব্রেনটাকে বা সময়টাকে বা এনার্জিটাকে কোনো ভালো কাজে ব্যয় করছে না, ঘরদোর অগোছালো করে রাখে, আত্মীয়স্বজন আপনজনের খোঁজ নেয় না, বন্ধুবান্ধবের খোঁজ নেয় না।

২. যারা গসিপ করে বা শয়তানের বাণী প্রচার করে: অনেক অনুষ্ঠানে,

টকশো এবং প্রোগ্রামে অন্যকে পচানো হয় গসিপ করা হয়। খোঁচা দিয়ে কথা বলা হয়। এরা হচ্ছে নেতিবাচক মানুষ। এবং এই নেতিবাচক মানুষের কথা দিয়ে কখনো প্রভাবিত হবেন না।

নেতিবাচক মানুষ কিন্তু আবার খুব ছোট ছোট করে কথা বলে। অনেক সময় তারা ধীরে ধীরে কথা বলে। অনেক সময় মনে হয় যে, আরে! কথাতে তো অনেক যুক্তি আছে। কিন্তু যখনই রেজাল্ট নেতিবাচক, তখনই বুঝবেন এর ব্রেন থেকে এখন শয়তানের বাণী বেরোচ্ছে।

৩. যারা ডিসকারেজ করে

আপনি একটা কাজ করতে যাচ্ছেন যখনই কেউ আপনাকে হতোদ্যম করে দেবে, ডিসকারেজ করবে বুঝবেন এ শয়তানের চেলা। আপনার একটা কাজ শেষ করা দরকার, তাই ইনিয়ে বিনিয়ে জটিলতা তৈরি করার চেষ্টা করছে। নেতিবাচক হচ্ছে শয়তানের চেলা।

নেতিবাচক মানুষ থেকে দূরে থাকতে করণীয় কী?

১. রাগ না করে মনে মনে তওবা বলুন:

বিষয়টা হলো নেতিবাচক মনোভাব বা কথা শুনলে সেজন্যে রাগ করবেন না। অনেক সময় খুব কাছের লোকও এইরকম কথা বলবে। অনেক সময় মাসেল ম্যানও এরকম কথা বলবে, রাগ করবেন না। একটা হাসি দেবেন আর মনে মনে বলবেন তওবা তওবা বা বাতিল বাতিল আমি তার কথা গ্রহণ করলাম না।

একবার এরকম আলোচনায় এক ভদ্র মহিলা বললেন যে, ‘আমার হাজবেন্ড নেতিবাচক। তো আমি আমার হাজবেন্ড থেকে দূরে থাকব কীভাবে?

হাজবেন্ড থেকে দূরে থাকা মানে হচ্ছে তার থেকে দূরে থাকা না তার চিন্তাভাবনা থেকে দূরে থাকা। অর্থাৎ তার নেতিবাচক কথা আপনি গ্রহণ করবেন না। নেতিবাচক কথা বললে চুপচাপ মনে মনে তওবা তওবা বলতে থাকবেন। তাও আবার শুনিয়ে বলবেন না। তখন আপনার অবস্থা আবার খারাপ হবে খুব। মনে মনে বলবেন, তওবা তওবা। আবার ঠোঁট যেন নড়াচড়া না করে।

২. তার কথা বা আচরণে প্রভাবিত হবেন না

তো আসলে নেতিবাচক মানুষ থেকে দূরে থাকা মানে হচ্ছে তার কথা দিয়ে কখনো প্রভাবিত হবেন না। যে-কেউ নেতিবাচক কথা বলুক, আপনি সচেতন ভাবে এড়িয়ে চলুন।

আমরা সবসময় নেতিবাচক কথা যেই বলেছে আমরা একটা হাসি দিয়েছি এবং হাসি দিয়ে মনে মনে বলেছি তওবা তওবা বাতিল বাতিল তোমার কথার কোনো প্রভাব আমার ওপরে পড়বে না।

আপনি নেতিবাচক হলে করণীয় কী?

১. তওবা তওবা বা বাতিল বাতিল বলুন:

 কোয়ান্টাম মেথড কোর্সে  বলা হয় "নেতিবাচক ভাবনা এলে বা ভুলে নেতিবাচক কথা বলে ফেললে তওবা বা বাতিল বলুন।"

ধরুন বলে ফেললেন, আমার পোড়া কপাল। অনেকদিনের অভ্যাস তো, মুখ দিয়ে বেরিয়ে যেতে পারে। সাথে সাথে বলবেন যে, তওবা তওবা অথবা বাতিল বাতিল আমার সোনার কপাল বা আমার রাজ কপাল বা আমার রানী কপাল। অর্থাৎ ইতিবাচক বাক্য দিয়ে কথাটা শেষ করবেন।

২. মেডিটেশন করুন এবং প্রতিদিন ১০ বার অটোসাজেশন দিন: 

অনেক সময় নিজের ভেতরে নেতিবাচকতা আসবে এটা খুবই স্বাভাবিক। চারপাশে আমরা যারা মেডিটেশন করি আমাদেরও যে মাঝে মাঝে আসে না তা না, আসে। শয়তান তো সবসময় সুযোগের অনুসন্ধান করে।

যখনই অলস সময় হবে যখনই কাজকর্ম থাকবে না তখনই দেখবেন এই নেতিবাচক চিন্তা এসেছে। এজন্যে সবসময় ভালো কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখবেন এবং ভালো মানুষের সঙ্গে যাবেন। এবং মেডিটেশন নিয়মিত করবেন নেতিবাচকতা থেকে বাঁচার জন্যে এবং প্রতিদিন ১০ বার করে বলবেন, ‘ভালো ভাবব ভালো বলব ভালো করব ভালো থাকব।’

সারাবছর সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে একটা হাসি দেবেন। হাসি দিয়ে বলবেন, ভালো ভাবব ভালো বলব ভালো করব ভালো থাকব। এটা হচ্ছে নেতিবাচকতার সবচেয়ে বড় প্রতিষেধক।

৩. নেতিবাচক মানুষের জন্যে প্রার্থনা- দোয়া করুন: 

আর নিজের পরিচিত নেতিবাচক যারা আছে স্বামী হতে পারে স্ত্রী হতে পারে তার জন্যে দোয়া করবেন প্রার্থনা করবেন যে, প্রভু! তাকে একজন বিশ্বাসী বানিয়ে দাও, ইতিবাচক বানিয়ে দাও, সাহসী বানিয়ে দাও।

আপনার বলয়ে যত নেতিবাচক লোক আছে যাদের সাথে আপনার কাজ করতে হয় যাদের সাথে দেখা হয় যাদের সাথে কথা বলতে হয় সবার জন্যে সবসময় মেডিটেশনে তার জন্যে প্রার্থনা- দোয়া করবেন।

৪. নিয়মিত ভালো কাজ ও ভালো সংঘের সাথে থাকবেন। এবং যত ভালো কাজের সাথে সংযুক্ত থাকতে পারেন তত ভালো। এবং কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের সাথে সঙ্ঘের সাথে, সাদাকায়নে অংশগ্রহণ করে ভালো মানুষের সাথে সংযুক্ত থাকবেন। ইনশাআল্লাহ তাহলে আলস্য এবং নেতিবাচকতা আমাদের থেকে দূরে সরে যাবে। এবং আমরা জীবনযুদ্ধে জয়ী হবো।

আমরা বলি ইনশাআল্লাহ সব সম্ভব।

অতএব অলস এবং নেতিবাচক মানুষ থেকে দূরে থাকা মুক্ত থাকা তাদের কথার প্রভাব থেকে মুক্ত থাকার জন্যে খুব সহজ যে বিষয়, নিয়মিত মেডিটেশন করা এবং সকালবেলা ঘুম থেকে ওঠে প্রভুর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ১০ বার বলা ভালো ভাবব ভালো বলব, ভালো করব, ভালো থাকব।