বিদেশের মাটিতে দেশকে অস্থিতিশীল করার গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। জানা গেছে, কলকাতায় অনুষ্ঠিত একটি বৈঠকের পর বিষয়টি সামনে এসেছে। ইতোমধ্যেই ইন্টারনেট দুনিয়ায় বৈঠকের বিষয়বস্তু ভাইরাল হয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদন ঘুরপাক খাচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ১৫ জানুয়ারি কলকাতায় ওই বৈঠক হয়। বৈঠকে রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে অস্থির করে তুলতে আওয়ামী লীগের ১০ নেতাকর্মীকে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অপর একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিতে যে আন্দোলন দানা বেঁধে উঠেছিল, তার পেছনেও কাজ করে রাজনৈতিক অভিলাষ। আর এই অন্দোলনের ইন্ধনদাতা হিসেবে নয়জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। পাশাপাশি শনাক্ত করা হয়েছে মূল নেতৃত্ব দেওয়া ১৩ জনকে। এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন যুগান্তরের হাতে এসেছে। প্রতিবেদনটি ইতোমধ্যেই সরকারের উচ্চপর্যায়ে জমা দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান ও বাংলাদেশ পুলিশের ডিআইজি রেজাউল কমির মল্লিক যুগান্তরকে বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করতে দেশি-বিদেশি শক্তি অপতৎপরতা চালাচ্ছে বলে আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে। আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছি। সূত্র জানায়, ১৫ জানুয়ারি কলকাতায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে কেউ কেউ সশরীরে এবং কেউ ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন। তারা হলেন-আসাদুজ্জামান খান কামাল (সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী), অসীম কুমার উকিল, অধ্যাপিকা অপু উকিল, ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন (সাবেক এমপি), গোলাম রাব্বানী (ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক), সিদ্দিকী নাজমুল আলম (লন্ডন প্রবাসী ও ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক), ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আল নাহিয়ান জয়, সাবেক সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, হাজারীবাগ আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি তোরাব আলীর ছেলে লেদার লিটন, বাংলাদেশ-ভারত চেম্বারের সুব্রত সুমন, শেখ হাসিনার গাড়িচালকের ছেলে ছাত্রলীগ নেতা রুবেল, ‘আলো আসবে’ গ্রুপের অ্যাডমিন ও চিত্রনায়িকা সোহানা সাবা এবং সাবেক এমপি তহুরা আলীর কন্যা অভিনেত্রী ও গায়িকা মেহের আফরোজ শাওন।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কলকাতার বৈঠক থেকে জাহাঙ্গীর কবির নানক ও বাহাউদ্দিন নাছিমকে নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আন্দোলন ও ধ্বংসাত্মক কাজের সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ছাত্রলীগ নেতা রুবেলকে গণভবন কোয়ার্টার, আদাবর এলাকা, প্রশাসনের কর্মকর্তা, পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, লেদার লিটন সম্প্রতি নেপাল যান। সেখান থেকে কলকাতায় গিয়ে বৈঠক করেন। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, তাকে দেশে ফিরে হাজারীবাগ এবং ধানমন্ডিসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে নাশকতার দায়িত্ব দেওয়া হয়। সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর ও মোহাম্মদপুর যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক তারেকুজ্জামান এবং সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ভাগনে আসিফকে মোহাম্মদপুর ও এর আশপাশের এলাকার দায়িত্ব দেওয়া হয়। বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন হোসেন খান নিখিলকে দেওয়া হয় পুরান ঢাকা, চানখাঁরপুল এবং উত্তরাসহ সমগ্র ঢাকার দায়িত্ব। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সাবেক এমপি ওয়াকিল উদ্দিনের লোকজনকে বাড্ডা ও ভাটারা এলাকার দায়িত্ব দেওয়া হয়। স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি গাজী মেসবাউল হোসেন সাচ্চুকে দায়িত্ব দেওয়া হয় বনানী ও মিরপুর এলাকার। ‘আলো আসবে’ গ্রুপের অ্যাডমিন চিত্রনায়িকা সোহানা সাবা দায়িত্ব পান ভারতীয় কূটনীতিকসহ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যোগাযোগ রক্ষার। সার্বিক বিষয়ে সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া হয় মেহের আফরোজ শাওনকে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান ও বাংলাদেশ পুলিশের ডিআইজি রেজাউল কমির মল্লিক বলেন, ইতোমধ্যেই মেহের আফরোজ শাওনকে আটক করেছি। অন্যদেরও আইনের আওতায় আানার চেষ্টা চলছে। আশা করছি, অশুভ শক্তি সফল হতে পারবে না।
এদিকে তিতুমীর ঐক্যের ব্যানারে যে আন্দোলন, তার নেপথ্যে থাকা যেসব নেপথ্য ইন্ধনদাতাকে চিহ্নিত করা হয়েছে তারা হলেন-ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি শেখ সোহেল রানা টিপু, তিতুমীর কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রিপন মিয়া, সাধারণ সম্পাদক জুয়েল মোড়ল, তিতুমীর কলেজ সাংবাদিক সমিতির সদ্য সাবেক সভাপতি তৌসিফ, ছাত্রলীগের সহসম্পাদক রাকিব, তাহসান হাসান সোহান, তিতুমীর কলেজের সাবেক ছাত্র ওবায়েদ, সোহেল ও সরাফাত। অপরদিকে যাদের সামনে রেখে ইন্ধনদাতারা ‘ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা’ চালাচ্ছেন তারা হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মী ও মার্কেটিং বিভাগের ছাত্র রাশেদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য ও ছাত্রদল কর্মী রানা আহাম্মেদ, ছাত্রশিবির ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মী মোহাম্মদ রায়হান, ছাত্রশিবির কর্মী ও বাংলা বিভাগের ছাত্র বেলাল হোসেন, ছাত্রশিবির কর্মী ও গণিত বিভাগের ছাত্র আমিনুল, ছাত্রদল সমর্থক মামুন, মাহমুদ ও রফিক, শিবিরকর্মী নাইম, ছাত্রলীগের সহসম্পাদক শরিফ জাহিদ, শিবির সমর্থক আলী আহমেদ এবং রাজনৈতিক পরিচয়হীন নুর আলম ও ইউসুফ।
সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে টানা ছয় দিন ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। গত ২৬ জানুয়ারি রাতে অনশন করেন তিতুমীর কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী। পরদিন আরও কিছু শিক্ষার্থী একই দাবিতে ক্যাম্পাসের মূল ফটকের সামনে অনশন ও রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। সেদিন বেলা সাড়ে ১১টা থেকে রাত ৪টা পর্যন্ত কলেজের প্রধান ফটকের সামনের সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। শুক্র, শনি ও রোববার টানা সড়ক অবরোধ করেন তারা। সোমবার সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেন। ওইদিন রাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আশ্বাসে এক সপ্তাহের জন্য আন্দোলন স্থগিত করেন। আগামী রোববার পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করার কথা রয়েছে তাদের।