চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় কেরু অ্যান্ড কোম্পানির চিনিকলে তাণ্ডব চালিয়েছেন আওয়ামী লীগপন্থি কর্মচারীরা। তারা তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী ও আওয়ামী লীগ সমর্থক শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সম্ভাব্য সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী সৌমিক হাসান রুপমকে অন্য চিনিকলে বদলির প্রতিবাদে প্রতিষ্ঠানটিতে ভাঙচুর ও দুই কর্মকর্তাকে মারধর করেন। তারা বদলির আদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে আখ মাড়াইও বন্ধ করে দেন।
বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মিল এলাকায় বিক্ষোভ ও ভাঙচুর করেন সৌমিক অনুসারীরা। তারা কারখানার প্রধান দরজার সামনে বেশ কয়েকটি টায়ার জ্বালিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করেন এবং বিভিন্ন স্লোগান দেন। তাদের হাতে দুই কর্মকর্তা মারধরের শিকার হন বলে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) অভিযোগ করেন। তবে রাত পৌনে ১২টার দিকে আবারো উৎপাদন শুরু হয়।
পুলিশ ও মিলের কর্মকর্তারা জানান, সৌমিক রাজধানীর গেন্ডারিয়ায় ঢাকা বন্ডেড ওয়্যারহাউসের ইনচার্জ। তার কর্মস্থল চুয়াডাঙ্গার দর্শনার কেরু অ্যান্ড কোম্পানিতে। তাকে পঞ্চগড় সুগার মিলের জ্যেষ্ঠ করনিক পদে বদলি করে কর্তৃপক্ষ। এ খবর কেরুর চিনিকলে দুপুরের দিকে ছড়িয়ে পড়লে তার সমর্থক শ্রমিক-কর্মচারীরা বিক্ষোভ করতে করতে প্রথমে চলমান আখ মাড়াই কারখানা, বয়লার ও চিনি উৎপাদন কার্যক্রম আটকে দেন। পরে মিলের প্রধান দরজার সামনে টায়ারে জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন। এ সময় তাদের সামনে পড়ায় মিলের কর্মকর্তা জয়নুল আবেদিন ও নুরুল হাসানকে মারধর করেন। একপর্যায়ে বদলির আদেশ প্রত্যাহারের আলোচনার জন্য চিনিকলের এমডি রাব্বিক হাসানের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির গেস্ট হাউসে জরুরি বৈঠক করেন কেরুর শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ফিরোজ আহম্মেদ, তৈয়ব আলি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান, জয়নুল আবেদীনসহ অন্যরা। তবে কোনো সুরাহা হয়নি। এরপর তারা দু’দিনের মধ্যে বদলির আদেশ প্রত্যাহারের আলটিমেটাম দিয়ে কর্মসূচি স্থগিত করেন এবং আগামী রোববার থেকে ধর্মঘট পালনের হুঁশিয়ারি দেন।
জানা গেছে, সৌমিকের বাবা মাসুদুর রহমান মাসুদ চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক। ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলের নিয়োগগুলো তার মাধ্যমেই হওয়া। কেরু অ্যান্ড কোম্পানি এখনো আওয়ামী লীগের অন্যতম আখড়া। সৌমিকের বাবাই প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারীদের দিয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছেন। তার বিরুদ্ধে থানায় মামলাও রয়েছে। এ ছাড়া সৌমিক যুবলীগের সদস্য হিসেবে পরিচয় দিয়ে বেড়ান, বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও যেতেন। একই সঙ্গে তিনি স্থানীয় ছাত্রলীগের অন্যতম অর্থদাতা। তার নামেও মামলা রয়েছে।
মিলের জিএম সুমন কুমার সাহা বলেন, চলমান মাড়াই কার্যক্রম বন্ধ হলে প্রতিষ্ঠানের কোটি কোটি টাকার কাঁচামাল নষ্ট হয়ে যাবে। এতে রাষ্ট্রের বিপুল অঙ্কের লোকসান হতে পারে।
মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাব্বিক হাসান বলেন, ওই কর্মচারীর নামে শিল্প মন্ত্রণালয়ে বেশ কয়েকটি অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের চিফ অব পারসোনেল হামিদুল হক স্বাক্ষরিত পত্রে বৃহস্পতিবার বদলির আদেশ এলে শ্রমিকরা এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেন।
তিনি আরো বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী সৌমিকের বদলির আদেশ স্থগিতের অনুরোধ জানিয়ে করপোরেশনের চেয়ারম্যান ও শিল্প সচিব বরাবর একটি লিখিত আবেদন করা হয়েছে।
এদিকে আওয়ামী লীগপন্থি শ্রমিকদের তাণ্ডবের কারণে মাড়াই বন্ধ থাকায় শতাধিক চাষি পাওয়ার ট্রিলার নিয়ে ও কোম্পানির নিজস্ব পরিবহনে আনা আখ নিয়ে দুর্ভোগে পড়েন। তাদের আখ জমা দিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়।