Image description
অগণিত শহীদের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে ইসলামী ছাত্রশিবির ৪৮তম বছর পূর্ণ করেছে। - জাহিদুল ইসলাম, সভাপতি, ইসলামী ছাত্রশিবির

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেছেন, ২০১৬ সাল পর্যন্ত ইসলামী ছাত্রশিবিরের ২৩৪ জন নেতা-কর্মীকে হত্যা করে শহীদ করা হয়েছে। এসব ঘটনায় বিচার তো দূরের কথা ২১৪টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কোনো মামলাই নেয়নি তখনকার পুলিশ প্রশাসন। এর মধ্যে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের হাতেই শহীদ হয়েছেন ৮৮ জন। এসব হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার হতে হবে। শিবিরের সহস্রাধিক নেতা-কর্মীকে আওয়ামী আমলে গুম করা হয়েছে। সাতজনের এখনো কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের লগি-বৈঠার নারকীয় হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন শিবির নেতা-কর্মীরা। এই  হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি হতে হবে। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি।

শিবির সভাপতি বলেন, অগণিত শহীদের  রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে, হাজার হাজার আহত ও পঙ্গুত্ববরণকারী তরুণের ত্যাগের মিনার অতিক্রম করে ইসলামী ছাত্রশিবির ৪৮তম বছর পূর্ণ করেছে। ইসলামী আন্দোলনের পথে চলতে গিয়ে অনেকে আহত হয়েছেন, পঙ্গুত্ববরণ করেছেন, মামলায় ভুক্তভোগী হয়ে জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, শহীদ হয়েছেন। কিন্তু ন্যায়ের পথে থেকে ইসলামী আন্দোলনের পথে অবিচল হয়ে সংগ্রাম করে গেছেন অবিরত। কেন্দ্রীয় সভাপতি বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেশের প্রতিটি সংকটে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে সংকটের সমাধান খুঁজেছে ছাত্রশিবির। সম্প্রতি জুলাই গণ অভ্যুত্থানও এর ব্যতিক্রম ছিল না।

ছাত্র-জনতাকে ঐক্যবদ্ধ করে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির এরই মধ্যে দেশবাসীর আস্থা ও ভালোবাসা অর্জন করেছে। তিনি বলেন, ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে একটি আদর্শ সমাজ গঠনের সংকল্প নিয়ে ১৯৭৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ থেকে যাত্রা শুরু করেছিল যে ছাত্র সংগঠন, সেই ইসলামী ছাত্রশিবির আজ ছাত্র-জনতার আস্থা ও নির্ভরতার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। অভিভাবকরা এখন তাদের সন্তানদের শিবিরের অন্তর্ভুক্ত করতে প্রতিনিয়তই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। শিবির সভাপতি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের নির্লিপ্ততার কারণে পতিত স্বৈরাচার আবার মাথাচাড়া দিতে শুরু করেছে। নির্বিচারে গণহত্যা চালানোর পর এখন প্রকাশ্যে কর্মসূচি পালন করার মতো ধৃষ্টতাও দেখাচ্ছে। এদের কঠোর হস্তে দমনের কোনো বিকল্প নেই। জুলাইয়ের অভ্যুত্থান-পরবর্তী ৬ মাস অতিক্রান্ত হলেও, সেই গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসরদের বিচার সম্পন্ন হয়নি। আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের পরিবর্তে জামিনে মুক্ত করা হচ্ছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীরা এখনো আমাদের ভাইদের হত্যার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন স্থানে হামলা করছে। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে এখনো স্বৈরাচারের দোসররা অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন জায়গায় ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসনের কাজ করছে। এসব আর মেনে নেওয়া হবে না।

তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে বাজার পরিস্থিতি এখনো বেসামাল; দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি মানুষকে নাজেহাল করে তুলছে। বাজার সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, দখলদারিত্ব আগের মতোই অব্যাহত রয়েছে। এগুলো আমাদের হতাশ করেছে। তরুণ প্রজন্মকে ধ্বংসকারী শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়ার যে প্রয়োজন ছিল, তা আমরা এখনো প্রত্যক্ষ করছি না। অবিলম্বে শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন ও আধুনিকীকরণে অন্তর্ভুক্তিমূলক স্বাধীন শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে। শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিতে হবে। জুলাই গণহত্যা, ২৮ অক্টোবর, পিলখানা ও শাপলা চত্বরসহ সব হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিচারকাজ দ্রুত শেষ করতে হবে। জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি এবং আহতের যথাযথ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে হবে। দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে এবং সব ধরনের সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ফ্যাসিবাদের দোসরদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে দেশে আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় সব রাজনৈতিক দল ও ছাত্রসংগঠনের সমন্বয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।