Image description

মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার (DIA) প্রাথমিক গোপন প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে সম্প্রতি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর চালানো হামলায় দুটি গুরুত্বপূর্ণ সাইট পুরোপুরি ধ্বংস হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, এই হামলা ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম কয়েক মাসের জন্য পিছিয়ে দিতে পেরেছে মাত্র।

প্রতিবেদনটি বলছে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির কেন্দ্রীয় উপাদান যেমন সেন্ট্রিফিউজগুলো কয়েক মাসের মধ্যেই আবার সচল করা সম্ভব।

DIA তাদের এই মূল্যায়ন তৈরি করেছে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সামরিক কার্যক্রম তদারককারী ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ডের প্রাথমিক যুদ্ধক্ষেত্র বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করে।

আরও জানা গেছে, ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির উপযুক্ত উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের একটি বড় অংশ হামলার আগেই সরিয়ে ফেলা হয়েছিল। এই ইউরেনিয়াম গোপন কোনো অন্য স্থানে স্থানান্তর করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এর আগে শনিবার এক টেলিভিশন ভাষণে ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, নাতানজ, ফরদো এবং ইসফাহানে ইরানের পরমাণু সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রগুলো সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।

ট্রাম্প বলেছিলেন, “এই হামলা ছিল অসাধারণ সফল। ইরানের প্রধান পারমাণবিক স্থাপনাগুলো সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে। ইরান এখন শান্তির পথে আসতে বাধ্য।”

তবে DIA-এর প্রাথমিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ভিন্ন চিত্র। ফরদো স্থাপনাটি বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হওয়ায় ভবিষ্যতের মূল্যায়নে আরও কম ক্ষতির চিত্র দেখা যেতে পারে।

ফরদো ইরানের সবচেয়ে সুরক্ষিত পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর একটি। এটি জাগরোস পর্বতের নিচে নির্মিত হয়েছে। একে ঘিরে পাথুরে গঠন ৪৫ থেকে ৯০ মিটার গভীর বলে জানা যায়।

এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে মিডিয়া প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে ট্রাম্প ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি তাঁর সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম Truth Social-এ লেখেন, “ইরানের পারমাণবিক সাইটগুলো সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে!”

হোয়াইট হাউসও এই গোপন মূল্যায়নের ফাঁস হওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে। প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেন, “এই মূল্যায়ন ফাঁস করার মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং সাহসী মার্কিন বৈমানিকদের সুনাম ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা করা হয়েছে।”

রবিবার যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স স্বীকার করেন, তাঁরা জানেন না ইরানের উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম কোথায় রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, “আগামী কয়েক সপ্তাহে সেই জ্বালানির ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি সোমবার জানান, সংস্থাটি এখন আর ইরানের ৪০০ কেজি ৬০% সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের অবস্থান নিশ্চিত করতে পারছে না।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম The Guardian প্রকাশ করেছে, ট্রাম্পের দ্বিতীয় দফা প্রেসিডেন্ট হওয়ার শুরুর দিকে পেন্টাগনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছিল যে GBU-57 নামে পরিচিত ৩০,০০০ পাউন্ড ওজনের ‘বাংকার বাস্টার’ বোমা ফরদো ধ্বংস করতে যথেষ্ট নয়।

তাদের বলা হয়েছিল, ফরদোর মতো গভীর ভূগর্ভস্থ স্থাপনাগুলোর বিরুদ্ধে কার্যকর হামলা চালাতে হলে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র প্রয়োজন।

মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই হামলায় B2 বোমারু বিমান ফরদোতে ১২টি এবং নাতানজে ২টি GBU-57 বোমা ফেলে। এছাড়া ইসফাহানে ৩০টির মতো টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয় একটি মার্কিন সাবমেরিন থেকে।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পিট হেগসেথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্পের দাবির পুনরাবৃত্তি করে বলেন, “এই সাইটগুলো সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়েছে।” তবে জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফ-এর চেয়ারম্যান জেনারেল ড্যান কেইন কিছুটা সতর্ক মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, তিনটি সাইটেই “গুরুতর ক্ষতি হয়েছে”, তবে চূড়ান্ত মূল্যায়ন এখনো বাকি।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান