বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা সাদ্দাম, ইনান, শয়ন–তাদের নিজের বাসায় ডেকে সংঘবদ্ধ থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভিসি অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল। তিনি ২০২৪ সালের ১৪ জুলাই শেখ হাসিনাকে ফোনে বলেছিলেন, ‘ওরা (ছাত্রলীগ নেতারা) আমার বাসায় ছিল সন্ধ্যা থেকে। আমি খবর পাচ্ছিলাম, ওদেরকে আমি ডেকে নিয়ে আসছি। ওরাও আসছে। ওদের সঙ্গে বসে ওদের হলে হলে যেন ছাত্রলীগকে সংঘবদ্ধ রাখে এবং ঢাকা উত্তর, দক্ষিণকে যেন খবর দেয়। এগুলো করতে করতেই হাজার হাজার ছেলেমেয়ে একত্র হয়ে গেছে।’
তার এই ফোনালাপের পরের দিন ১৫ জুলাই ক্যাম্পাসে বহিরাগত-অছাত্রদের এনে ছাত্রলীগ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ‘পরিকল্পিত’ হামলা চালায়। হামলায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অনেকে রক্তাক্ত হয়েছেন। আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রীরাও ছিলেন। এ ঘটনায় ড. মাকসুদ কামালের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে সাক্ষ্য দিতে গেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসুর) তিন নেতা। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সকাল ১১টায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে তারা সাক্ষ্য দিতে যান।
ভিপি সাদিক কায়েমের সঙ্গে রয়েছেন ডাকসুর সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদও। বেলা একটার দিকে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন এই তিনজন। ভিপি সাদিক কায়েম এ সময় কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, মাকসুদ কামালকে বিভিন্নভাবে সেল্টার ও সেফ এক্সিটের চেষ্টা করছে অন্তর্বর্তী সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের একটা অংশ। ইসরায়েরালি কায়দায় যেভাবে মাকসুদ কামাল গং আমাদের ভাই-বোনদের রক্তাক্ত করেছে তাদের বিচার স্বাধীন এই দেশে হবে।
ভিপি সাদিক কায়েম বলেন, মাকসুদ কামালের বিষয়ে আমাদের কাছে অনেকগুলো তথ্য এসেছে। তাকে বিভিন্নভাবে সেল্টার দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে অনেকেই চেষ্টা করছে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের যে সংগঠনগুলো আছে তাদের একটি পক্ষ সেফ এক্সিটের দেওয়ার চেষ্টা করছে।
‘‘কিন্তু আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। জুলাই আন্দোলনে মাকসুদ কামাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের ভাই-বোনদের রক্তাত করেছে। বহিরাগত নিয়ে এসে হামলা করেছে। মাকসুদ কামাল বিচার এই স্বাধীন দেশে হবে। শুধু তাই নয়, ওই সময় তার সঙ্গে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, প্রশাসনে যারা ছিল তাদের সবার বিচার এই স্বাধীন দেশে হবে।’’
তিনি বলেন, মাকসুদ কামালরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে রক্তের দাগ লাগিয়েছে। আমাদের ভাই-বোনদের রক্তাক্ত করেছে। আমরা যখন আহত অবস্থায় হাসপাতালে যাচ্ছিলাম হাসপাতালেও ইসরায়েলিরা যেভাবে ফিলিস্থিনিদের ওপর হামলা করে ঠিক একই কায়দায় এবং তার চেয়ে বর্বরভাবে আমাদের ভাই-বোনদের ওপর হামলা করেছে।
‘‘সুতরাং মাকসুদ কামাল ও মাকসুদ কামাল গং যারা ছিল ওইসময় তাদের বিচার এই স্বাধীন দেশে হবে। ওই সময়ের হামলার যে প্রমাণ ছিল সেগুলো আজ আমরা ট্রাইবুনালে জমা দিয়েছি।’’