
রামপুরায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অনুমোদিত খেলার মাঠে বহুতল বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে তমা কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড। এক বছর ধরে দখলে রাখা মাঠঠিতে রাখা হয়েছে ভবনের নির্মাণসামগ্রী। এ ছাড়া রামপুরার একমাত্র খেলার মাঠটি টিনের প্রাচীর দিয়ে ঘিরে দখলে রেখেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। এ কারণে স্থানীয় শিশু-কিশোরদের খেলাধুলা ও বিনোদনে বিঘ্ন ঘটছে। এর ফলে তাদের মানসিক বিকাশও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
হাতিরঝিল প্রকল্প এরিয়ার মধ্যে রাজউকের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার (ড্যাপ) জায়গায় কীভাবে তমা গ্রুপ বাণিজ্যিক বহুতল ভবন নির্মাণ করছেÑএ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে এলাকাবাসীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রাজউক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু তাৎক্ষণিক নির্মাণকাজ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাতিরঝিল প্রকল্পের ওই এলাকার মধ্যে খেলার মাঠ ব্যতীত অন্য জায়গাগুলোতে শুধু আবাসিক ভবন নির্মাণের জন্য ছাড়পত্র দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। তবে সেখানে খেলার মাঠ দখলে নিয়ে তমা গ্রুপের বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের বিষয়টি নিয়ে রাজউক সদর দপ্তর পুরো অন্ধকারে রয়েছে। কীভাবে তমা গ্রুপ কাজ করার সুযোগ পেল, সে ব্যাপারে রাজউক চেয়ারম্যান, পরিকল্পনাবিদ কেউই কিছু জানেন না।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃহৎ এই এলাকায় শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার কোনো মাঠ নেই। তাই জনসাধারণের অতিপ্রয়োজনীয়তা ও চাহিদার দিকে নজর দিয়ে সরকার ২০১৬ সালে প্রায় সাড়ে চার একর জমিতে রামপুরা টিভি ভবনের বিপরীতে রামপুরা একরামুন্নেছা বয়েজ হাই স্কুল ও গার্লস হাই স্কুল সংলগ্ন ঠিক পেছনের খালি জায়গাটিতে প্রস্তাবিত হাতিরঝিল বিশেষ ড্যাপে অন্তর্ভুক্ত করে খেলার মাঠ হিসেবে নির্ধারণ করে।
গত কয়েক মাস ধরে খেলার মাঠের নির্ধারিত জায়গায় কোম্পানিটি কোনো অদৃশ্য ক্ষমতাবলে বহুতল বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। তারা ইতোমধ্যেই জায়গাটিতে বহুদিনের বেড়ে ওঠা নারিকেল, আমসহ ৫০ থেকে ৬০টি বড় গাছ কেটে সাবাড় করেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, তমা গ্রুপ রাজউক প্রস্তাবিত খেলার মাঠে নিয়মনীতি না মেনে বাণিজ্যিক ভবন তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। এ ঘটনায় এলাকার পরিবেশ ও খেলার মাঠের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন তারা।
এলাকাবাসী জানায়, খেলার মাঠের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের ফলে এলাকার খেলার মাঠের পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে এবং শিশুরা খেলাধুলার সুযোগ হারিয়েছে। এ ছাড়া বহুতল ভবন নির্মাণের ফলে শব্দদূষণ-বায়ুদূষণসহ পরিবেশগত বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। এ কারণে স্থানীয়রা এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
তারা চান, রাজউকের খেলার মাঠের জায়গাটি বহুতল ভবন নির্মাণের হাত থেকে রক্ষা পাক এবং এলাকার মানুষের জন্য মাঠটি সংরক্ষিত থাকুক। এ জন্য রাজউক কর্তৃপক্ষ, পরিবেশ ও বন উপদেষ্টা, গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টার কাছে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে আবেদন করা হয়েছে। এ ছাড়া তারা শিশু একাডেমির ভবন চান ওই স্থানে।
এ ব্যাপারে রাজউক চেয়ারম্যান রিয়াজুল ইসলাম রিজু আমার দেশকে বলেন, ‘কীভাবে তমা গ্রুপ রাজউকের জায়গায় বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের সুযোগ পেল, সে বিষয়টি তদন্ত করা হবে। আমরা স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে কাজ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছি। তবে শিশু একাডেমির ভবন নির্মাণের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নিয়েছি। দেখি বিষয়টা।’
রাজউকের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে দেখা গেছে, ২০১৬ সালে হাতিরঝিল বিশেষ ড্যাপের আওতায় আরবান রেসিডেন্সিয়াল জোন, খেলার মাঠ ও উন্মুক্ত স্থান হিসেবে চিহ্নিত ছিল। কিন্তু এরপর আর মাঠের প্রকল্পটির ব্যাপারে সরকার উদ্যোগ নেয়নি। এ অবস্থায় মাঠের জায়গাটি গত ৯ বছর ধরে খালি অবস্থায় ছিল। এমনকি ২০১৯ সালে রাজউকের উপ-নগর পরিকল্পনাবিদ শাহনেওয়াজ হক স্বাক্ষরিত একটি আবাসিক ভবনের ছাড়পত্রের প্রস্তাবিত ভূমি ব্যবহারের বিধিমালার মধ্যে হাতিরঝিল বিশেষ ড্যাপে আরবান রেসিডেন্সিয়াল জোন, খেলার মাঠ, রাস্তাসহ বেশ কিছু জায়গাকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিশেষভাবে সে জায়গাগুলো ছেড়ে দিয়ে আবাসিক ভবনের নির্দেশনা দেন শাহনেওয়াজ হক।
এ বিষয়ে শাহনেওয়াজ হক বলেন, ‘রামপুরার ওই জায়গায় কোনোভাবেই বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের সুযোগ নেই। এমনকি কাউকে ছাড়পত্রও দেওয়া হয়নি। সেখানে কোনো কনস্ট্রাকশন গ্রুপ কীভাবে একটি খেলার মাঠের মধ্যে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের সুযোগ পেলÑসে ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই।’