
রাজধানীর ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুর এলাকায় এক রাতে দুটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। একটি ঘটনায় নিহত হয়েছেন একজন শিক্ষার্থী। আরেক ঘটনায় নিহত হয়েছেন এক ফটোগ্রাফার। শুক্রবার (১৬ মে) রাত ৮টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে এই ঘটনা দুটি ঘটে। দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে আহত হয়েছেন আরও এক শিক্ষার্থী।
ধানমন্ডির জিগাতলায় শুক্রবার রাত সোয়া ৮টার দিকে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারান মো. আলভী (২৭)। তিনি ড. মালিকা কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। একই ঘটনায় তার বন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম (২১) আহত হন। আহত আশরাফুলকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে একটি বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়।
আলভীর মামী মাহি বেগম জানান, রাতে আলভী ও আশরাফুল জিগাতলা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দাঁড়িয়ে চা পান করছিলেন। এ সময় হঠাৎ তিন থেকে চারজন দুর্বৃত্ত ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালায়। তারা কোনো প্রকার উস্কানি ছাড়াই এলোপাতাড়ি কোপাতে শুরু করে। আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আলভীকে মৃত ঘোষণা করেন।
প্রায় একই সময়ে মোহাম্মদপুরের দুর্গা মন্দিরের গলিতে হামলার শিকার হন পেশাদার ফটোগ্রাফার নুর ইসলাম (২৫)। তিনি বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার পূর্ব সুজনকাঠি গ্রামের আবুল ফকিরের ছেলে।
নিহত ব্যক্তির বড় ভাই ওসমান গনি জানান, নুর ইসলাম বিয়ের অনুষ্ঠানে ফটোগ্রাফির কাজ করতেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় এমনই একটি অনুষ্ঠানের জন্য তাকে কিছু অগ্রিম অর্থ দেওয়া হয়েছিল। নির্ধারিত ঠিকানায় পৌঁছানোর পর দুর্বৃত্তরা তার ক্যামেরা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে নুরের মাথা ও দুই হাতে উপর্যুপরি কোপায়। পরে তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার পর পাওয়া সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, মুখোশ পরা কয়েকজন যুবক দেশীয় অস্ত্র হাতে নুর ইসলামকে ধাওয়া করছে। জীবন বাঁচাতে দৌড়ালেও শেষরক্ষা হয়নি। দুর্বৃত্তরা তার কাছ থেকে মোবাইল ও ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়।
এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, রাতেই দুইজনকে হাসপাতালে আনা হয়। চিকিৎসক আলভীকে মৃত ঘোষণা করেন এবং আহত আশরাফুল চিকিৎসা শেষে বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর হন। এ ঘটনার কিছুক্ষণ পরই একজন ফটোগ্রাফারকে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় তখন চিকিৎসক তাকেও মৃত ঘোষণা করেন। এ বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট থানাকে অবহিত করা হয়েছে।
আলাদা দুই প্রেক্ষাপটে ঘটনাগুলো ঘটেছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম। তিনি দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ঘটনা দুটি একে অপরের সঙ্গে সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং আলাদা প্রেক্ষাপট থেকে ঘটেছে। প্রথম ঘটনাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে বসাকে কেন্দ্র করে দু’টি গ্রুপের মধ্যে কথাকাটাকাটি শুরু হয়। তর্কের এক পর্যায়ে অভিযুক্তরা নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করতে গিয়ে ওই শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাত করে। এই আঘাতেই ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু ঘটে বলে সিসিটিভি ফুটেজ ও তার বন্ধুদের দেওয়া তথ্য থেকে জানা গেছে।
অন্যদিকে, দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে। নিহত ব্যক্তি একজন পেশাদার ফটোগ্রাফার। একটি অনুষ্ঠানের জন্য তাকে অগ্রিম অর্থ দিয়ে ছবি তোলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। চুক্তি অনুযায়ী তিনি মোহাম্মদপুরের দুর্গা মন্দির এলাকার একটি গলিতে রাত আনুমানিক ৮টার দিকে উপস্থিত হলে, দুর্বৃত্তরা তার ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। ঠিক তখনই অজ্ঞাত পরিচয়ের দুর্বৃত্তরা তার ওপর অতর্কিতে হামলা চালায়। ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার মাথা এবং দুই হাতে উপর্যুপরি কোপানো হয় হলে তখন তার মৃত্যু হয়।
পুলিশ কর্মকর্তা মাসুদ আলম আরও বলেন, ‘আমরা উভয় ঘটনার তদন্ত করছি এবং প্রত্যেকটি ঘটনার পেছনের কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনাগুলোর মধ্যে কোনও ধরনের রাজনৈতিক এবং পূর্ব শত্রুতার জের আছে কিনা যাচাই-বাচাই করছি। তবে উভয় ঘটনায় আমরা দোষীদের চিহ্নিত করেছি। আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে তৎপর রয়েছে পুলিশ।’