
রাজধানী ঢাকার সড়ক যেন চাঁদা আদায়ের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। শপিং মল থেকে শুরু করে মূল সড়ক সর্বত্রই চলছে পার্কিংয়ের নামে চাঁদা আদায়ের মহোৎসব। বেশিরভাগ সময়ই এই চাঁদা আদায় হচ্ছে সিটি করপোরেশনের নামে-সিটি করপোরেশনের রিসিট দিয়ে। যদিও এসব বিষয়ে কথা বলতে রাজি নয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।
সড়কে গাড়ি রাখা হয়েছে; এটাই যেন টাকা হাতানোর মোক্ষম সুযোগ। যাত্রাবাড়িতে দিনদুপুরে পিকআপ চালককে দেশীয় অস্ত্র ঠেকিয়ে রীতিমতো জিম্মি করে টাকা আদায় করার দৃশ্য ধরা পড়ে সময় সংবাদের ক্যামেরায়।

দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নথি বলছে, যাত্রাবাড়ি থানা থেকে শনির আখড়ার ক্যাবেক্স সিএনজি পাম্প পর্যন্ত ১৮০টি গাড়ি পার্ক করা যাবে। সিটি করপোরেশন এই এলাকায় বরাবরই ইজারা দিয়ে থাকে। কিন্তু মাঠের চিত্র ভিন্ন।
গত ৫ আগস্টের পর নতুন করে ইজারা পায়নি কেউ, যদিও টাকা তোলা হচ্ছে প্রতিদিনই। ১৮০টি গাড়ি রাখার জায়গা ছাপিয়ে শনির আখড়া পার হয়ে সব ধরনের যানবাহন পার্কিং করা হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেও।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নামে টাকা তুলছে পদ্ম ট্রেডিং কোম্পানি। তবে রশিদে কোথাও পদ্ম ট্রেডিং কোম্পানির ঠিকানা বা মোবাইল নম্বর নেই।

ভুক্তভোগীরা জানান, গাড়িতে পণ্য উঠানো বা নামানোর জন্য ১৫০ টাকা করে নেয়া হয়। ভোর থেকেই শুরু হয় চাঁদাবাজি। রিকশা-ভ্যানে করে পণ্য নিয়ে গেলেও টাকা দিতে হয়। এ নিয়ে প্রতিবাদ করলে করা হয় মারধর।

তবে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে প্রশাসন নির্বিকার অভিযোগ তুলে তারা আরও জানান, নামে-বেনামে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চাঁদাবাজরা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্বাস মিললেও সমাধানে কোনো উদ্যোগ নেই।
শুধু যাত্রাবাড়ি নয় পুরো রাজধানীর বিভিন্ন শপিং মল থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও মোড়গুলোতে চলছে এই চাঁদাবাজি। একই অবস্থা গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট এলাকাতেও। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তথ্য বলছে, ফুলবাড়িয়া মার্কেটের বেজমেন্টে তারা পার্কিংয়ের জন্য ইজারা দিয়ে থাকলেও সেই ইজারা বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। কিন্তু বেজমেন্ট ছাপিয়ে মার্কেটের সামনের সড়কতো বটেই পার্কিং এসেছে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পেছনের সড়কেও।
শুধু তাই নয় পার্কিংয়ের কারণে এই সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এ সবই হচ্ছে কর্তৃপক্ষের নাকের ডগায়। বাস চালকরা জানান, রাস্তায় গাড়ি রাখতে প্রতিদিন ৪০০ টাকা দিতে হয়। রয়েছে মাস চুক্তির সিস্টেমও।

অবশ্য এই চাঁদা তোলাকে বৈধতা দিতে চান ফুলবাড়িয়ার পরিবহন নেতারা। তারা বলেন, লাইনম্যান দরকার। না হলে রাস্তায় গাড়ি রাখলে জট তৈরি হতে পারে।
তবে এসব বিষয়ে অবশ্য ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি নন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক। অন্যদিকে লোকবল সংকটের দোহাই দিয়েছেন প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা কাইজার মোহাম্মদ ফারাবী বলেন, সিটি করপোরেশন থেকে ইজারা নিলে নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে টাকা তুলতে পারবে। এর বাইরে টাকা নিলেই সেটি চাঁদাবাজি হিসেবে বিবেচিত হবে। এসব বন্ধে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, সাধারণত দক্ষিণ সিটি করপোরেশন রাজধানীর ২৬টি স্পট পার্কিংয়ের জন্য ইজারা দেয়। তবে ৫ আগস্টের পর এখন পর্যন্ত মাত্র ১০টি স্পটে ইজারা কার্যক্রম চলছে। যদিও চাঁদা তোলা হচ্ছে অন্তত শতাধিক স্পট থেকে।ু