
চলছে অমর একুশে বইমেলা ২০২৫। প্রতিদিন মেলায় আসছে নতুন বই। এর মধ্যে প্রকাশ হয়েছে কবি ইমতিয়াজ মাহমুদের 'শেরগুচ্ছ', প্রকাশ করেছে দিব্যপ্রকাশ। নিজের লেখালেখি আর বইমেলা নিয়ে কথা বলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে।
অনেক দিন পর বইমেলায় আপনার নতুন বই এসেছে। 'শেরগুচ্ছ' নিয়ে কিছু বলুন।
ইমতিয়াজ মাহমুদ: বাংলা ভাষায় এই ফর্মে কাজ তুলনামূলক কম হওয়ায় শের বা কাপলেটের বিষয়ে আমার আগ্রহ তৈরি হয়। এর আগে ম্যাক্সিমের বইয়ের ক্ষেত্রেও একই চিন্তা কাজ করেছে। এমনিতে আমার মনে হয়, লেখা যত ছোট হয়, তার উৎরে যাওয়া তত কঠিন হয়ে ওঠে। এই জাতীয় ফর্মে লেখা ব্যর্থ হলে লেখাটা খুব সহজে হাস্যকর হয়ে যায়। আবার কাপলেটের ক্ষেত্রে দেখা যায়, একবার উৎরে গেলে সেটার স্মরণীয় হয়ে ওঠার সম্ভাবনা অন্য লেখার চেয়ে অনেক বেশি। এই হিসেবে বলা যায় কাপলেটের ক্ষেত্রে ঝুঁকি আর সম্ভাবনা প্রায় সমান সমান। তবে এত কিছু ভেবে তো আসলে আমি লিখতে বসিনি। বলা যায়, লিখতে ইচ্ছে হয়েছে, তাই লিখেছি। বিভিন্ন সময়ে দুইশর মতো কাপলেট লেখা হয়েছে। এর মধ্যে থেকে ৮০টা বইয়ে দেওয়া হয়েছে।
বই প্রকাশ হলে কবি লেখদের মেলায় গিয়ে অন্তত অটোগ্রাফ দিতে দেখা যায়। সেভাবে আপনাকে পাঠক পায় না।
বইমেলায় আমি সারা জীবনে হাতে গোণা কয়েকবার গিয়েছি। মেলায় শেষ গিয়েছি প্রায় এক যুগ আগে। এটা যে পরিকল্পনা করে না যাওয়া, তা না। বরং বলা যায়, না যেতে না যেতে অভ্যাস হয়ে গেছে। এখন আর যেতে ইচ্ছে করে না। কখনো যাওয়ার ইচ্ছে হলে হয়তো যাবো।
সভা-সেমিনারে আড্ডায়ও দেখা যায় না। কিন্তু ফেসবুকে সরব আপনি। আপনার বইয়ের ক্রেতা কারা?
ক্রেতা কারা তা আমি বলতে পারবো না। এটা হয়তো বিক্রেতারা বলতে পারবেন।
এই সময়ে থেকেও আপনি আলাদা। আপনার চোখে বাংলাদেশের মানুষ কেমন?
আমি বিদেশে খুব বেশি দিন থাকিনি। অন্য দেশের মানুষদেরও কাছ থেকে তেমন একটা দেখিনি। তাই অন্য দেশের মানুষের সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের তুলনা করা আমার জন্য আসলে কঠিনই। আমার কম জানাশোনার কারণে আমার কাছে বাংলাদেশের মানুষই পুরো পৃথিবীর মানুষ। যে মানুষেরা ভালো-মন্দে মেশানো। এ দেশের মানুষ এমনিতে সরল, কিন্তু লোভী। যারা দুনীর্তিতে পৃথিবীর সেরাদের কাতারে থাকলেও সৃজনশীলতায় পিছিয়ে। মোটের উপর ভীরু, কালেভাদ্রে সাহসী। ফলে এদেশের মানুষের পরাধীনতার ইতিহাসও দীর্ঘ। স্বার্থপর। একা একা ভালো থাকতে চায়। কিন্তু জানে না, একা ভালো থাকা যায় না। আত্মবিধ্বংসী।
সাহিত্য সমাজে আপনাকে নিয়ে কৌতূহল আছে। জনসমাগমে আপনাকে পাওয়া যায় না বললেই চলে। এ ক্ষেত্রে আপনার নিজস্ব কোনো দর্শন আছে?
সশরীরে উপস্থিতি কম আমার স্বভাবের কারণে। আমার মধ্যে সম্ভবত এক ধরনের ক্রাউড ফোবিয়া আছে। আর প্রকাশনা কম লিখতে না পারার কারণে। আমি যদি অনেক লিখতে পারতাম, তাহলে হয়তো প্রকাশনা বেশি থাকতো। কিন্তু তা তো পারি না।
কেউ কেউ বলেন আপনার জীবনে জীবনানন্দের প্রভাব রয়েছে। কি বলবেন?
জীবনানন্দ এমন একজন কবি যার লেখার প্রভাব তার পরবর্তীকালের বাংলার প্রায় সব কবির উপরই আছে। কারও ক্ষেত্রে কম, কারও ক্ষেত্রে বেশি। আমি কোন দলে, সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত না।
আপনাকে প্রভাবিত করে এমন কয়েকজনের কথা যদি বলতেন।
জীবনানন্দ, নিকানোর পাররা, মিরোস্লাভ হোলুব, সি. পি. কাভাফি, রুমি আর গালিবের কবিতা। মার্কেস, কাফকা, কামুর ফিকশন। তাদের বাইরেও অনেকে আছে, যাদের লেখা কোনো না কোনোভাবে আমার উপর প্রভাব ফেলেছে।
বাংলাদেশে তিনটি গণঅভ্যুত্থান ঘটেছে। লেখায় গণঅভ্যুত্থানের প্রভাব চোখে পড়ে?
নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থান নিয়ে খুব ভালো কোনো গল্প বা কবিতা আমার চোখে পড়েনি। উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান নিয়ে বেশ কিছু স্মরণীয় লেখা আছে। চব্বিশের ক্ষেত্রে এখনই মন্তব্য করার সময় হয়নি। সামনে হয়তো ভালো কিছু হতে পারে।