Image description

বিএনপি সমমনা দলগুলো সরকার পতন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ ১০ দাবি নিয়ে ১১ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করবে। একই দিনে পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও ঢাকাসহ সারা দেশের ইউনিয়ন পর্যায়ে ‘বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্য ও সহিংসতার প্রতিবাদে’ শান্তি সমাবেশ করবে। দলটির দাবি, বিএনপি-জামায়াত সারা দেশে পদযাত্রা কর্মসূচির নামে কোনো সহিংসতা করলে মাঠে থেকেই সমুচিত জবাব দেবে আওয়ামী লীগ।

দলীয় সূত্র বলছে, বিএনপির যেকোনো কর্মসূচির বিপরীতে সংশ্লিষ্ট এলাকায় ‘শান্তি সমাবেশ’ কর্মসূচি পালন করে আসছে আওয়ামী লীগ। এরই ধারাবাহিকতায় বিএনপি ১১ ফেব্রুয়ারি ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা কর্মসূচির নামে যাতে কোনো সহিংসতা করতে না পারে, তার জন্য ওই দিন সারা দেশে ‘শান্তি সমাবেশ’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি।

আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা বলেন, বিএনপি-জামায়াত ১১ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করবে। তাদের কোনো ধরনের সহিংসতা করতে দেওয়া যাবে না। জানমালের ক্ষতি করতে দেওয়া হবে না। সঙ্গত কারণে ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকাসহ সারা দেশের ইউনিয়ন পর্যায়ে শান্তি সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। এ কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাজধানীতে শান্তি সমাবেশ হবে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে। দুয়েকটি সমাবেশে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতা উপস্থিত থাকবেন। 

এ ছাড়া বাকি ৭৬টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৪০টিতে ইউনিয়ন পর্যায়ের সমাবেশে দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নেতাদের নিজ জেলায় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যেসব জেলায় কেন্দ্রীয় নেতারা যাবেন না সেখানে জেলার নেতাদের পাশাপাশি স্থানীয় সংসদ সদস্যদের অংশগ্রহণে ইউনিয়ন পর্যায়ে শান্তি সমাবেশ করতে বলা হয়েছে। তবে কোনো জেলা সদরে শান্তি সমাবেশ হবে না। ইউনিয়নে কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি জেলা ও উপজেলার নেতারা উপস্থিত থাকবেন। কেন্দ্রীয় নেতারা শুধু একটি ইউপি সমাবেশে যোগ দেবেন। জেলা ও উপজেলা নেতাদেরও আলাদা ইউনিয়নের দায়িত্ব দেওয়া হবে।

তারা বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বছরব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করছে আওয়ামী লীগ। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সরকারের উন্নয়ন প্রচার, নতুন সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন অভিযান, উঠান বৈঠক, পথসভা এবং দিবসভিত্তিক কর্মসূচি। এর অংশ হিসেবেও ১১ ফেব্রুয়ারি ইউনিয়ন পর্যায়ে শান্তি সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে তৃণমূলে কেন্দ্রীয় নেতাদের সংযোগ স্থাপন করাই মূল উদ্দেশ্য।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া সময়ের আলোকে বলেন, বিএনপি-জামায়াত যাতে ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা কর্মসূচির নামে সহিংসতা করতে না পারে, তার জন্য তৃণমূল পর্যায়ের আওয়ামী লীগের নেতারা সতর্ক অবস্থানে থাকবে। পাশাপাশি ইউনিয়ন পর্যায়ে শান্তি সমাবেশ করা হবে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সফিউল আলম চৌধুরী নাদেল সময়ের আলোকে বলেন, বিগত দিনগুলোতেও বিএনপি কর্মসূচি পালন করেছে। আমরাও করেছি। কোনো সহিংসতা হয়নি। তবে তারা যদি ১১ ফেব্রুয়ারি কর্মসূচির নামে যদি কোনো সহিংসতা করে আমরাও রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করব। তবে এ কর্মসূচির মাধ্যমে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূলকে সংগঠিত করা হবে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, বিএনপির সম্ভাব্য নৈরাজ্য মোকাবিলার পাশাপাশি আমরা শান্তি সমাবেশের মাধ্যমে তৃণমূলের মানুষের কাছে সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরব।

এদিকে সরকার পতনের দাবিতে একের পর এক কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপি-জামায়াত। এর মধ্যে গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনীতিতে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। সেদিন কর্মসূচি থেকে বিএনপি নৈরাজ্য করতে পারে আশঙ্কা করে রাজধানীর অলিগলিতে সতর্ক অবস্থান নেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এরপর থেকেই বিএনপির কর্মসূচির দিন পাল্টা ‘শান্তি সমাবেশ’ করছে ক্ষমতাসীনরা। এরই ধারাবাহিকতায় গত রোববার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। 

বৈঠক থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ১১ ফেব্রুয়ারি বিএনপি পদযাত্রা কর্মসূচির নামে যাতে কোনো সহিংস ঘটনা ঘটাতে না পারে, সে জন্য শুধু ঢাকা নয় সারা দেশে পাহারা দিতে হবে। সে কারণে দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে শান্তি সমাবেশ করতে হবে। এ উপলক্ষে দেশের ৪০ জেলায় স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ৫৩ জন কেন্দ্রীয় নেতা অবস্থান নেবেন। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের জেলা ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। শান্তি সমাবেশ উপলক্ষে লালমনিরহাটের দায়িত্ব পেয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সফুরা বেগম রুমি। 

রংপুর যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ এইচএন আশিকুর রহমান, রংপুর বিভাগের দায়িত্ব পেয়েছেন সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া। জয়পুরহাটে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। বগুড়ায় দলের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা। নওগাঁর দায়িত্ব পেয়েছেন সদস্য শাখাওয়াত হোসেন শফিক। রাজশাহীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বেগম আখতার জাহানকে। 

সিরাজগঞ্জে সদস্য প্রফেসর মেরিনা জাহান, পাবনায় সদস্য নুরুল ইসলাম ঠান্ডু, ঝিনাইদহে সদস্য পারভিন জামান কল্পনা, যশোরে সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, মাগুরায় সদস্য নির্মল কুমার চ্যাটার্জিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নড়াইলের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মাশরাফি বিন মর্তুজা, বাগেরহাটে সদস্য মো. আমিরুল ইসলাম মিলন, খুলনায় সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন এবং সদস্য গ্লোরিয়া সরকার ঝর্ণা দায়িত্ব পেয়েছেন। বরগুনায় সদস্য মো. সিদ্দিকুর রহমান, পটুয়াখালীতে সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন, বরিশালে সদস্য আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং সদস্য আনিসুর রহমানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

পিরোজপুর, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর ও নরসিংদীর দায়িত্ব পেয়েছেন যথাক্রমে গোলাম কবির রব্বানী চিনু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এবং শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক বেগম শামসুন্নাহার, সদস্য অ্যাডভোকেট তারানা হালিম, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সিমিন হোসেন রিমি ও সদস্য সানজিদা খানম।

রাজবাড়ীতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেনকে। ফরিদপুরে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমানকে। গোপালগঞ্জে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লেফটেন্যান্ট কর্নেল অবসরপ্রাপ্ত মুহাম্মদ ফারুক খান এবং উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সৈয়দ আবদুল আওয়াল শামীমকে। মাদারীপুরে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাহজাহান খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ ও কেন্দ্রীয় কমিটির দুই সদস্য আনোয়ার হোসেন এবং শাহাবুদ্দিন ফরাজীকে। শরীয়তপুরের দায়িত্ব পেয়েছেন সদস্য ইকবাল হোসেন অপুকে। জামালপুরে সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজমকে, শেরপুরে সদস্য মারুফা আক্তার পপিকে, নেত্রকোনায় সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল ও সদস্য উপাধ্যক্ষ রেমন্ড আরেংকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শান্তি সমাবেশে যোগ দিতে বলা হয়েছে আইন বিষয়ক সম্পাদক নজিবুল্লাহ হিরুকে। কুমিল্লা উত্তরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুস সবুর, চাঁদপুরে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. দীপু মনি এবং তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ এ দায়িত্ব পালন করবেন। লক্ষ্মীপুরে যাবেন কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী। 

চট্টগ্রাম উত্তরে যাবে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, দক্ষিণে যাবেন ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম। কক্সবাজারে ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল মোস্তফা, রাঙ্গামাটিতে সদস্য দীপঙ্কর তালুকদার এবং বান্দরবানে অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ওয়াসিকা আয়েশা খানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।