সোমবার। অমর একুশে বইমেলার ষষ্ঠ দিন। গেল কয়েক দিনের তুলনায় একটু বেশি দেখা যায় পাঠকদের আনাগোনা। ভরদুপুরেও ভিড়। তবে বেশিক্ষণ থাকেনি। মূলত বিকাল ৪টার পরেই পাঠকদের মূল আনাগোনা শুরু হয়। লেখক-পাঠকদের উপস্থিতিতে সরগম হয়ে ওঠে সোহরাওয়ার্দী প্রাঙ্গণ। তবে দিন গড়িয়ে ভিড় বাড়ছে, তবে বিক্রি ঠিক আগের মতোই। এসব কথাই বলছেন বিক্রেতা ও প্রকাশকরা।
গত বুধবার শুরু হয়েছে অমর একুশে বইমেলা, তবে মেলা শুরুর সপ্তাহ ছুঁইছুঁই হলেও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অংশে বেশ কিছু স্টল এখনও ঠিকমতো তৈরি করে উঠতে পারেনি। সন্ধ্যা গড়ালেও কোনো কোনো স্টলে জ্বলেনি আলো। আবার মেলাজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে গর্ত আর অসংখ্য খানাখন্দ। তাতে শিশু ও বয়স্কদের বেগ পেতে হচ্ছে। সন্ধ্যার পর বাড়ছে বিপদ।
এসব ছাপিয়ে স্বস্তির ঢেকুরও কম নয় বইমেলাতে। বন্ধুবান্ধব, পরিবার-পরিজন নিয়ে অফিস চলার দিনে যারা আসছেন তারা বলছেন করোনার কারণে টানা দুই বছর পর ভাষার মাসের শুরুতেই যে বইমেলা হচ্ছে তাতে আসতে পেরে বলছেন স্বস্তির কথা। রাজধানীর পান্থপথ থেকে পরিবারের সঙ্গে বইমেলায় আসা ফেরদৌসী খাতুন জানান, গত দুই বছরে করোনার ভয়ে বইমেলাতে আসতে পারিনি। প্রচণ্ড ভয় ছিল বাচ্চাদের নিয়ে এলে কোনো অসুবিধা হয় কি না। তখন শুনেছিলাম মাস্কেও করোনা যায়নি। এ বছর এই নিয়ে আমার দ্বিতীয় দিন বইমেলাতে আসা।
বলেন, পরশুদিন এসেছিলাম বন্ধুদের সঙ্গে। আজ বোন, বোনের জামাই, তার মেয়েসহ এসেছি। বিকালের পর ভিড় কেমন দেখছেন জিজ্ঞেস করাতেই বললেন, পাঠক হিসেবে আমি বলব আরও মানুষ দরকার। কারণ বইমেলাতে এলে কেউ ঠকে না। আমাদের প্রচুর বই কেনা দরকার। প্রকৃত পাঠক হওয়া দরকার।
বইমেলাকে ঘিরে শাহবাগ টিএসসিতে দুপুরের পর থেকেই শুরু হয় তীব্র যানজট। ভিড় ঠেলে কেউ কেউ হেঁটে হেঁটেই যাচ্ছেন মেলাতে। দিন গড়িয়ে দশনার্থীদের ভিড় বাড়লেও বাড়েনি ক্রেতা। যারা বইমেলাতে আসছেন তাদের কেউ মেলা কেমন চলছে দেখতে আসছেন আবার কেউ কেউ সামনের দিকে বই কিনবে বলে প্রথমদিকে দেখে যাচ্ছেন। আবার অনেকে কেবলই ছবি তোলার জন্যই আসছেন অমর একুশে বইমেলাতে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ৩৮৭-৮৮ নং স্টলের সামনে তিনজনকে বেশ সেজুগুজে ছবি তুলতে দেখা যায়। কাছে গিয়ে কয়টি বই কিনেছেন জানতে চাইলে তাদের একজন বলেন, আমরা দুই বন্ধু, সঙ্গে এক বান্ধবী মিলে ঘুরতে এসেছি। মেলায় বাঁশ দিয়ে সুন্দর স্টল হয়েছে শুনেছি। ওইটাতে একটা ব্লগ করব ভাবছিলাম। তাই এসেছি। বই কিনবেন না? বলেন, বই তেমন একটা পড়া হয় না। তবে পড়া ভালো।
হঠাৎ করে কাগজের মূল্য বেড়ে যাওয়াতে এবার মেলায় নতুন বইয়ের সংখ্যা কমেছে বলে মনে করেন লেখক তৌফিকুল ইসলাম চৌধুরী। তার ভাষ্যে, এবার মেলায় আসলে নতুন বই খুব কম এসেছে। এর পেছনে মূল কারণ হঠাৎ করে বইয়ের দাম বেড়ে যাওয়া। আমি চট্টগ্রামের মানুষ। বইমেলার কারণেই ঢাকাতে আসি প্রতিবছর।
আরও বলেন, ঢাকায় এসে এবার বসুন্ধরা এলাকায় আত্মীয়ের বাসায় উঠেছি। আমার ধ্যান-জ্ঞান সবকিছুতেই বই লেখা। চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার পরে অনেক সময় পাই। এখন পুরোদমে লেখালেখিতে সময় দিতে পারছি। মূলত লেখক হিসেবে পাঠকের কাছাকাছি আসার জন্যই প্রতিবছর বইমেলাতে আসা
মুক্তিযুদ্ধের দর্শন ও বঙ্গবন্ধু গ্রন্থের লেখক সাঈদ মাহাদী সেকেন্দার জানান, দিন যত গড়াচ্ছে ততই লেখক-পাঠকের উপস্থিতি বাড়ছে। তবে সামনের দিনগুলোতে ক্রেতা অনেক বাড়বে বলেও মনে করেন তিনি।
এদিকে বায়ান্ন থেকে একাত্তর প্রকাশনীর জাকির হোসেন (৩৯) সময়ের আলোকে বলেন, এবারের বইমেলায় এখন পর্যন্ত শিশুদের বই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে। তবে পাঠকরা অন্য বইয়ের খোঁজ করছে। দর্শনার্থীদের তুলনায় বই কেনাবেচা একটু কম হচ্ছে। আশা করছি সামনের দিনগুলোতে বেচাকেনা বাড়বে।
মুক্তধারা প্রকাশনীর কামরুজ্জামান বলেন, মেলায় আসা নতুন বইয়ের চেয়ে আগের বই একটু বেশি বিক্রি হচ্ছে। বিকাল থেকেই দর্শনার্থীদের স্টলে এসে ভিড় জমাচ্ছে এটি দেখে অনেক ভালো লাগছে। তবে আমাদের আশা অনুযায়ী তেমন বেচাবিক্রি হচ্ছে না।
অমর একুশে বইমেলার ৬ষ্ঠ দিনে নতুন বই এসেছে ১২১টি। এর মধ্যে গল্পের বই ১৬টি উপন্যাস ২৪টি, প্রবন্ধ ৫টি, কবিতার বই ৩২টি, গবেষণা ১টি, ছড়া ২টি, শিশুতোষ ৩টি, জীবনী ৮, রচনাবলি ২টি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ৩টি, নাটকের ১টি, ভ্রমণ বিষয়ক ২টি, ইতিহাস ৫টি, ধর্মীয় ৩টি এবয় ১টি অনুবাদ বিষয়কসহ অন্যান্য ১৩টি বই। মেলায় সবমিলে নতুন বইয়ের সংখ্যা ৪২৪টি।