
মিডিয়া, সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন ও ভুল তথ্য প্রতিরোধে কাজ করা দেশের অন্যতম গবেষক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. সুমন রহমান। বর্তমানে তিনি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব)-এর সোশ্যাল সায়েন্সেস স্কুলের ডিন এবং মিডিয়া স্টাডিজ অ্যান্ড জার্নালিজম বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে কালচারাল স্টাডিজে পিএইচডি এবং যুক্তরাজ্যের লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাস্থ্য যোগাযোগে পোস্টডক্টরাল গবেষণা সম্পন্ন করেছেন তিনি। দুই দশকের বেশি সময় ধরে শিক্ষকতা, গবেষণা ও নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন ড. সুমন রহমান।
ইউল্যাব সেন্টার ফর ক্রিটিক্যাল অ্যান্ড কোয়ালিটেটিভ স্টাডিজ (CQS)-এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক এবং বাংলাদেশের প্রথম IFCN-প্রত্যয়িত ফ্যাক্ট-চেকিং প্ল্যাটফর্ম ফ্যাক্টওয়াচ-এর সম্পাদক তিনি। ২০২১ সাল থেকে মেটার থার্ড পার্টি ফ্যাক্ট-চেকার হিসেবেও কাজ করছেন ড. সুমন রহমান। এই শিক্ষাবিদ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের সাথে কথা বলছেন, দেশের সাংবাদিকতার বর্তমান প্রেক্ষাপট, স্বচ্ছতা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিশাত তাসনিম জেসিকা—
দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস: বেতন কম, চাকরির নিশ্চয়তা নেই—সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে কেনো বেছে নেবেন তরুণরা? বিশেষ করে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় উচ্চশিক্ষা নেওয়া গ্র্যাজুয়েটরা।
ড. সুমন রহমান: বেতন কম, চাকরির অবস্থা খারাপ—এটাই এখনকার বাস্তবতা। যখন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো শুরু হয়, তখন এটি ছিল খুব চাহিদাসম্পন্ন একটি বিষয়। তবে বেশ কিছু কারণে সাংবাদিকতা পেশাটি আজ অনেকটাই দূষিত হয়ে পড়েছে। সাংবাদিকতার সঙ্গে যেহেতু ক্ষমতার একটি মেলবন্ধন রয়েছে, তাই অনেকেই এই পেশাকে এখন অস্ত্র হিসেবেও ব্যবহার করছে। চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি পত্রিকা ও টেলিভিশন চ্যানেল গড়ে উঠেছে, ফলে ডিমান্ড কমে গেছে।
৯০ দশকে যেভাবে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে কাজ হতো, এখন আর সেইভাবে কাজ না হওয়ায় রাজস্ব তৈরি হচ্ছে না, বরং ক্ষতি বাড়ছে। ফলে মালিকপক্ষ সঠিক বেতন দিতে চাইছে না, পাশাপাশি চাকরির নিশ্চয়তাও থাকছে না। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় উচ্চশিক্ষা নেওয়া তরুণরা এই পেশা সম্পর্কে মূল থেকে জানছে এবং নানা ধরনের টুলস ও টেকনিক শিখছে। আমি মনে করি, তাদের জন্য এই পেশা কোনোভাবেই লাভজনক হয়ে উঠছে না।
‘‘সাংবাদিকদের জন্য ফ্যাক্টচেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সাংবাদিকেরা যদি সঠিকভাবে তথ্য যাচাই করতেন, তাহলে আলাদা করে মিডিয়ার জন্য ফ্যাক্টচেকারের প্রয়োজন হতো না। তাদের মধ্যে (সাংবাদিকদের) তথ্য যাচাই নিয়ে একটা বিভ্রান্তি আছে, তারা অনেক সময় ফ্যাক্টচেক কীভাবে করতে হয়, তা আয়ত্ত করতে পারেন না।
দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস: এই পেশায় চাকরির নিশ্চয়তা কিংবা একটি স্ট্যান্ডার্ড সেলারির জন্য আপনার কি পরামর্শ থাকবে? সাংবাদিকতা পেশার জন্য অন্য কোনো পরামর্শ থাকলেও দিবেন।
ড. সুমন রহমান: বর্তমানে এই পেশা কারও জন্যই লাভজনক নয়। কারণ, এই পেশা এখন আর ভরণপোষণের মতো অবস্থায় নেই। মিডিয়া হাউসগুলো ক্ষতির মধ্যে আছে, তারা মুনাফা পাচ্ছে না—তবুও তারা এই হাউসগুলো বন্ধ করছে না। এই ‘বন্ধ না করার’ পেছনে নিশ্চয়ই কোনো লাভজনক উদ্দেশ্য আছে।মিডিয়ার মালিকেরা ওয়েজবোর্ড মানেন না। ধরুন, ওয়েজবোর্ড অনুসারে একজন সাংবাদিকের বেতন হওয়া উচিত ৫০ হাজার টাকা, কিন্তু দেওয়া হচ্ছে মাত্র ২০ হাজার টাকা। অনিয়মের একটা ধারাবাহিকতা থেকেই যাচ্ছে। তাই চাকরির নিশ্চয়তা বা বেতন নিয়ে আলাদাভাবে কিছু বলার নেই।
তরুণদের উচিত এখন অন্য কিছু ভাবা। সাংবাদিক হিসেবে আগামী ১০ বছরে কী পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে, সেটা বুঝতে হবে। এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) আমাদের কোথায় নিয়ে যাবে, সেটাও বুঝতে হবে। আমি মনে করি, এখন সাংবাদিকতার যুগ ২.০ চলছে। এই যুগের সঙ্গে আমাদের অভ্যস্ত হতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়া সাংবাদিকতাকে নানাভাবে রূপান্তর করছে, আর তার একটি উদাহরণ হচ্ছে—পডকাস্ট।
ড. সুমন রহমান
দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস: গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় উচ্চশিক্ষা নেওয়া তরুণদের উদ্দেশ্যে কিছু পরামর্শ দেবেন। পাশাপাশি উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পর সাংবাদিকতা পেশায় না এসেও আর কি কি পথ খোলা আছে জানাবেন?
ড. সুমন রহমান: এখন যে সংস্কৃতিটা চলছে, সেটাকে বিদায় জানাতে পারলেই গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় গ্র্যাজুয়েট ছেলেমেয়েরা এই পেশায় কাজ করতে আগ্রহী হবে। আমি মনে করি, সাংবাদিকতা থাকবে এই পৃথিবীতে। এখনো পৃথিবীটা তথ্যের ওপর নির্ভরশীল—সেই সঙ্গে দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, ভুল তথ্যও রয়েছে। বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় দুটি সংকটের একটি হলো মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর তথ্য (মিস-ইনফরমেশন), আরেকটি ক্লাইমেট চেইঞ্জ।
সাংবাদিকতা নিয়ে যারা এখন পড়াশোনা করছেন, তাদের মনে রাখতে হবে—তারা এই দুটি সমস্যার মধ্যে একটি মোকাবিলার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করছেন। ভাবুন একবার, তারা কতটা গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজে যুক্ত হচ্ছেন। সাংবাদিকতা শুধু টেলিভিশন বা পত্রিকায় সীমাবদ্ধ নয়। এখন এর পরিসর অনেক বিস্তৃত। ইন্টারঅ্যাকটিভ মিডিয়া, অগমেন্টেড রিয়েলিটি, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স—সবকিছু মিলিয়ে এই তথ্যময় পৃথিবীকে বুঝতে হলে আমাদের আরও বেশি দক্ষ হতে হবে।
‘‘দেশের মিডিয়া সেক্টরে অনেক বেশি সংস্কার হওয়া উচিত। ওয়েজ বোর্ড মেনে সংবাদকর্মীদের বেতন নির্ধারণ করা উচিত। মালিকদের দায়বদ্ধতা জায়গা থেকে সরে গিয়ে স্বাধীনতার সাথে সংবাদ চর্চার সুযোগ খুবই প্রয়োজন। সাংবাদিকদের মূল্যবোধের জায়গা আরো শক্ত হওয়া দরকার।
আমরা যখন সাংবাদিকতা শুরু করেছি, তখনকার তুলনায় পেশাটা অনেকখানি বদলে গেছে। তাই আমার পরামর্শ হলো—নিজেকে গ্লোবাল প্রতিযোগিতার উপযুক্ত করে গড়ে তোলা। আজ বাংলাদেশে বসেই আপনি আল–জাজিরা, বিবিসি বা গার্ডিয়ানের জন্য কাজ করতে পারেন। এই বৈশ্বিক সুযোগকে আমাদের কাজে লাগাতে হবে।এখন একজন মানুষই নিজেই একটি মিডিয়া। আপনি চাইলে একজন ইনফ্লুয়েন্সার হতে পারেন, আবার চাইলে রাজনীতি নিয়ে একজন গভীর পর্যবেক্ষক বা সমালোচকও হতে পারেন। তাই ক্যারিয়ার গড়ার নানা পথ আছে—চাকরিই করতে হবে, এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
ড. সুমন রহমান
দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস: গত ১৫ বছরে দেশের সাংবাদিকতা মুক্ত পরিবেশ ছিল না বলে অনেকেই অভিযোগ করেন। বর্তমানে দেশে সাংবাদিকতা কেমন চলছে কিংবা চলা দরকার এবং আগামীর প্রত্যাশা কী থাকবে?
ড. সুমন রহমান: গত ১৫ বছর আমরা একটি নির্দিষ্ট সরকারের শাসনব্যবস্থার মধ্যে ছিলাম। স্বাভাবিকভাবেই, সরকারের প্রধান ভাবনা থাকে—মিডিয়া কী ধরনের কনটেন্ট তৈরি করছে। সোশ্যাল মিডিয়া ও মূলধারার মিডিয়া—দুটিই এখন এতটা প্রভাবশালী যে সরকার এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। আসলে, অগণতান্ত্রিক হোক বা গণতান্ত্রিক, প্রায় সব সরকারই মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়।
আমেরিকা বা ইউরোপে যেমন রাষ্ট্রপ্রধানদের নিয়ে সমালোচনা করা যায়, আমাদের দেশে সেটা এখনো সম্ভব নয়। তবে আমি আশাবাদী। একদিন আমাদের দেশেও সরকারকে সমালোচনার চোখে দেখার সুযোগ তৈরি হবে। ভারতের মিডিয়া চাইলে মোদি সরকারকে নিয়েও কথা বলতে পারে, ভুল-ঠিক নিয়ে বিশ্লেষণ করতে পারে। আমাদের দেশেও এমন পরিবেশ একদিন হবে, এই প্রত্যাশা রাখি। বর্তমানে সাংবাদিকতা যেভাবে চলছে, সেটাকে আমি সঠিক মনে করি না। সাংবাদিকতার একটি লক্ষ্য থাকা উচিত, আর সেটাই এখন হারিয়ে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা নিজেদের স্বার্থে মিডিয়া হাউজ তৈরি করছেন।
এই পরিস্থিতিকে আমি ‘ট্র্যাজেডি অব কমন্স’ বলি, সমাজবিজ্ঞানের পরিভাষায়। আমাদের জন্য পাঁচটি সংবাদপত্র ও পাঁচটি টেলিভিশনই যথেষ্ট ছিল। অথচ এখন দেশে প্রায় ২৫০টি সংবাদপত্র ও ১০০টি টেলিভিশন চ্যানেল রয়েছে। ডিমান্ড বা চাহিদা কমে গেছে। সারাদিনে একটি সংবাদপত্র বা একটি চ্যানেলই যথেষ্ট, কারণ সবাই এক কাজই করছে—কোনো ভিন্নতা নেই, প্রতিযোগিতা নেই। এই সাংবাদিকতা ভবিষ্যতে টিকবে না। অর্থনৈতিকভাবে টিকতে না পারলে মিডিয়া হাউজ ছেড়ে দেওয়া উচিত—সংস্কার কমিশনের ধারণাও এ রকম। সংবাদমাধ্যমকে হতে হবে স্বনির্ভর। মিডিয়াকর্মীদের আরও চিন্তাশীল হতে হবে। সবাই যা করছে, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে নয়—বিপরীতে গিয়ে ভিন্ন কিছু করতে হবে। সরকারি নিয়ন্ত্রণ ও আত্মনিয়ন্ত্রণ (সেল্ফ সেন্সরশিপ) থেকে বেরিয়ে আসতে পারলেই এই পেশা আবার নিজের জায়গা খুঁজে পাবে।
দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস: ফ্যাক্টওয়াচ নিয়ে কাজ করছেন, সেখান থেকে আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করবেন। একজন সাংবাদিকের ফ্যাক্টচেকের বিষয়ে কতটুকু ধারণা থাকা উচিত?
ড. সুমন রহমান: ২০১৭ সালে ইউল্যাবের কিছু শিক্ষার্থীকে নিয়ে ক্লাসরুমেই শুরু করেছিলাম ফ্যাক্টচেকের কাজ। তখন বিষয়টি আন্তর্জাতিক পরিসরে এতটা বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দেয়নি। তবে আমরা বুঝতে পারছিলাম—মিথ্যা তথ্য আসছে, এবং এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। সেই ভাবনা থেকেই শুরু। ২০১৮–১৯ সালে বিষয়টি এখনকার মতো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেনি। তখনও প্রজেক্ট আকারেই কাজ করতাম।
২০২০ সালে করোনাভাইরাস মহামারির সময় আমরা বুঝতে পারি—আসলে কী করে ফেলেছি আমরা! তখন থেকেই ঘরে বসেই সক্রিয়ভাবে কাজ শুরু করি। এরপর গ্লোবাল সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থাগুলোর সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ তৈরি হয়। তারা জানায়, তারা আমাদের সঙ্গে পার্টনার হতে চায়। এরপর ২০২১ সালে মেটার (Meta) সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে কাজ শুরু করি। মেটার সঙ্গে কাজ করার বড় সুবিধা হচ্ছে—আমরা যদি অনলাইনে কোনো একটি কনটেন্টকে ‘রেইড’ করে দিই, তাহলে মেটার আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সেই কনটেন্টটি সব জায়গা থেকে সরিয়ে দেবে। প্রতিমাসে আমরা গড়ে ১০ লাখেরও বেশি মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর তথ্য অনলাইনে শনাক্ত করে সরিয়ে দেই।
আমার অভিজ্ঞতা খুবই ভালো। গত পাঁচ বছর সততার সঙ্গে কাজ করছি। এর মধ্যে নানা ধরনের হুমকি, আনন্দ–বেদনা, স্বস্তি–অস্বস্তির ভেতর দিয়েও কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। কেউ কেউ প্রশংসা করেছেন, আবার অনেকে বড় ধরনের হুমকিও দিয়েছেন।
সাংবাদিকদের জন্য ফ্যাক্টচেক আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আসলে, সাংবাদিকেরা যদি সঠিকভাবে তথ্য যাচাই করতেন, তাহলে আলাদা করে আমাদের মতো ফ্যাক্টচেকারের প্রয়োজন হতো না। তাদের মধ্যে তথ্য যাচাই নিয়ে একটা বিভ্রান্তি আছে। তারা অনেক সময় ফ্যাক্টচেক কীভাবে করতে হয়, তা আয়ত্ত করতে পারেন না।ফ্যাক্টচেক দু’রকম। প্রথমত, একটি ঘটনা ঘটেছে, সেখানে গিয়ে দুই–একজন প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বললাম, এটা প্রাথমিক বা প্রাইমারি ফ্যাক্টচেক। আর আমরা যেটা করি সেটা হলো সেকেন্ডারি ফ্যাক্টচেক। যেমন, একটি সংবাদপত্রে কোনো খবর পড়লাম- এটা সত্যি কিনা তা যাচাই করব অনলাইন সূত্রের মাধ্যমে। সোশ্যাল মিডিয়ার এই যুগে এটা খুবই জরুরি, যাচাই না করে কোনো কিছুই বিশ্বাস করা উচিত নয়।
ড. সুমন রহমান
দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস: স্যোশাল মিডিয়ায় প্রতিনিয়তই গুজব ছাড়ানো হয়। আপনার মতে, এসব গুজব ইচ্ছাকৃতভাবে ছড়ানো হয়? ছড়ালে কেন সেটা করা হয়। এর থেকে সচেতন হওয়ার জরুরি কিনা?
ড. সুমন রহমান: গুজব অনেক সময় ইচ্ছাকৃতভাবেও ছড়ানো হয়, আবার অনেক সময় অজান্তেও ছড়িয়ে পড়ে। তবে ইচ্ছাকৃতভাবে ছড়ানোর পেছনে অবশ্যই কোনো না কোনো স্বার্থ জড়িত থাকে। এ কারণেই সচেতন হওয়া অত্যন্ত জরুরি। যাচাই না করে কোনো কিছুই বিশ্বাস করা যাবে না-এটা সকলের মনে রাখা উচিত। সাধারণ মানুষ হোক কিংবা রাষ্ট্র, সবাইকে গুজব ও মিথ্যা তথ্যের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। প্রতিটি তথ্য যাচাই করে দেখা, অর্থাৎ ফ্যাক্টচেক করা এখন সময়ের দাবি।
দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস: আমরা প্রায়ই শুনতে পাই, মিডিয়া সেক্টর কিংবা সাংবাদিকতা পেশা নারীদের জন্য সুইটেবল না—এই বিষয়ে আপনার কি মত?
ড. সুমন রহমান: এই পেশা নারীদের জন্যই সুইটেবল। সাহসী সাংবাদিকদের তালিকায় বেশিরভাগ মেয়েরাই আছে। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের বড় একটা অংশই তো মেয়ে। সরকার পতন আন্দোলনে, আমাদের মেয়েরা ছেলেদের প্রোটেকশন দিয়েছে।
মেয়েদের জন্য সাংবাদিকতা না, আমি এটা বিশ্বাস করি না। মেয়েরা তাদের কাজের প্রতি অনেক বেশি ফোকাস থাকে, আর সাংবাদিকতায় ফোকাসড থাকা গুরুত্বপূর্ণ। মেয়েদের সহজে ঘুষ দেয়া যায় না। মেয়েরা তাদের কাজকে সহজে ফাঁকি দেয় না। নানান কারণে মেয়েরা বেটার চয়েজ। শুধু এই পেশায় না, অন্যসব পেশায়ও মেয়েরা যথেষ্ট ভালো কাজ করছে।
দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস: দেশের বিভিন্ন সেক্টরে সংস্কার হচ্ছে। সেক্ষেত্রে সাংবাদিকতা পেশায় কী ধরনের সংস্কার হওয়া উচিত?
ড. সুমন রহমান: এই সেক্টরে অনেক বেশি সংস্কার হওয়া উচিত। ওয়েজ বোর্ড মেনে বেতন নির্ধারণ করা উচিত। মালিকদের দায়বদ্ধতা জায়গা থেকে সরে গিয়ে স্বাধীনতার সাথে সংবাদ চর্চার সুযোগ খুবই প্রয়োজন। সাংবাদিকদের মূল্যবোধের জায়গা আরো শক্ত হওয়া দরকার।