
স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, আগামী নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে হচ্ছে না, এটি হচ্ছে নির্দলীয় একটি সরকারের অধীনে। তাই এই নির্বাচন প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। কিন্তু প্রশাসন দুর্বল থাকায়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কারণে যে ধরনের নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে তাতে নির্বাচন কতটা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে সে বিষয় নিয়ে নতুনভাবে চিন্তা করতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন, সংস্কার বা নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক বিভক্তি হতাশাজনক।
গতকাল সোমবার নয়া দিগন্তকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও স্থানীয় শাসন বিশেষজ্ঞ। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক এবং লোক প্রশাসন বিভাগের প্রাক্তন প্রধান । তিনি ১৯৭৬ ও ১৯৭৭ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজনীতি ও লোক প্রশাসনে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৮১ সালে সোয়ানসি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সামাজিক খাত পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায় দ্বিতীয় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ১৯৯১ সালে উন্নয়ন অধ্যয়নে পিএইচডি সম্পন্ন করেন। ১৯৮১ সালে তিনি বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমিতে ফ্যাকাল্টি হিসেবে যোগদান করেন; যেখানে তিনি ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। ১৯৯৪ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। তিনি ২০০৭ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত শিরির শাসনবিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি ২০০৯ সালে স্থানীয় সরকার কমিশনের সদস্য ছিলেন। ড. তোফায়েল আহমেদ ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত জাতিসঙ্ঘ উন্নয়ন কর্মসূচির স্থানীয় শাসন উপদেষ্টা ছিলেন। ২০১৪ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত তোফায়েল আহমেদ ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের পরিচালক ছিলেন। ২০১৫ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত তিনি মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের গভর্ন্যান্স ডিরেক্টর ছিলেন। তিনি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ছিলেন। ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত, তিনি ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন । শিক্ষায় অবদানের জন্য ২০১৮ সালে তিনি মার্কেন্টাইল ব্যাংক পুরস্কারে ভূষিত হন। তিনি বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনেও দায়িত্ব পালন করেন। ড. তোফায়েল নলেজ অ্যান্ড অ্যাকশন নেটওয়ার্ক ওয়ার্ল্ডওয়াইডের (নলেজ ট্রাস্ট) চেয়ারপারসন।
প্রশ্ন : নির্বাচনব্যবস্থা নিয়ে যে সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সে সম্পর্কে কতদূর অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছেন?
অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ : এক্ষেত্রে কমিশন যেসব সুপারিশ দিয়েছে তার কোনগুলো গ্রহণ করা হবে অথবা কোনগুলো বর্জন করা হবে তা চূড়ান্ত হয়নি। নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করা এবং জবাবদিহিতার মধ্যে নিয়ে আসতে বিস্তারিত সুপারিশ দেয়া হয়েছে। এখন এসব সুপারিশ থেকে কতটুকু সুপারিশ গ্রহণ করা হয় এবং তা বাস্তবায়নে কতটা অপেক্ষা করতে হবে সেটা পরিষ্কার নয়।
প্রশ্ন : ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারবে এটুকু নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশন নিশ্চয়ই কাজ করছে। এ ব্যাপারে আপনি কতটা আশাবাদী?
ড. তোফায়েল আহমেদ : নির্বাচন কমিশন রুটিন ওয়ার্ক করছে। সংস্কার কতটা হবে সে সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলে স্বাভাবিকভাবে নির্বাচন কমিশন আরো অধিক তৎপর হবে। আমরা কমিশনকে শক্তিশালী করা এবং জবাবদিহিতার মধ্যে আনার জন্যই বিস্তারিত সুপারিশ দিয়েছি।
প্রশ্ন : কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোতো সংস্কারের চেয়ে নির্বাচনকে প্রাধান্য দিচ্ছে। এমনকি সংস্কারের আগে নির্বাচন অথবা স্থানীয় নির্বাচনের আগে জাতীয় নির্বাচন চাচ্ছে। বিষয়টাকে আপনি কিভাবে দেখেন?
ড. তোফায়েল আহমেদ : স্থানীয় নির্বাচন আগে না সংসদ নির্বাচন আগে এটা এত বড় ইস্যু হয়ে গেল কেন পরিষ্কার বুঝা গেল না। আর রাজনৈতিক দলগুলো বিষয়টি নিয়ে যে বিভক্ত হয়ে পড়ল তা মোটেও উচিত হয়নি।
প্রশ্ন : কোনো কোনো রাজনৈতিক দল বলছে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ ফিরে আসবে এবং নতুন করে সঙ্ঘাত শুরু হবে। আবার কোনো কোনো রাজনৈতিক দল বলছে স্থানীয় নির্বাচন করে মাঠ পরীক্ষার পর জাতীয় নির্বাচন করা হোক। এতে নির্বাচনী ব্যবস্থার একটা প্রস্তুতি নেয়া সম্ভব হবে। আপনি কিভাবে দেখেন বিষয়টিকে?
ড. তোফায়েল আহমেদ : স্থানীয় পর্যায়ে সরকারের প্রশাসন আছে কিন্তু তা কতটা কার্যকর সেটি ভেবে দেখতে হবে। পুলিশকে জনগণ সহায়তা কতটা করে তার ওপর ভরসা করা কঠিন। স্থানীয় সরকারব্যবস্থা সেভাবে কার্যকর নেই। রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু ও অবাধ হবে তার চেয়ে নিজে জয়লাভ করার চেষ্টা করবে। আমার কাছে পুরো বিষয়টি অস্পষ্ট মনে হচ্ছে। স্থানীয় নির্বাচন আগে না জাতীয় নির্বাচন আগে এ ধরনের রাজনৈতিক বিভক্তি আমার কাছে অনাকাক্সিক্ষত মনে হচ্ছে। আমরা কোনদিকে যাচ্ছি, তা ভেবে আমার মধ্যে হতাশাও আসছে।