মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু’র মেয়াদ শেষ হয়েছে। নীরবে নিভৃতে চলে গেলেন তিনি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইট।
নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথের তিনদিন আগে গত ১৭ জানুয়ারি সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তার মেয়াদ শেষ হয়। দায়িত্বপালনের সময় ২০২১ সাল থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে শীর্ষ এই মার্কিন কূটনীতিক দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর রাজনীতি বিশেষ করে পাকিস্তানে বেশ আলোচিত নাম হয়ে উঠেছিলেন।
২০২২ সালের এপ্রিলে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পেছনে ডোনাল্ড লু’র নাম উঠে এসেছিল।
২০২১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে ডোনাল্ড লু পাকিস্তানের সঙ্গে মার্কিন সম্পর্ক তত্ত্বাবধানকারী ব্যুরোর নেতৃত্বে ছিলেন। এ ছাড়া তৎকালীন পিটিআই সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরানোর পেছনে মার্কিন এই সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে দায়ী করেছিলেন খোদ ইমরান খান।
২০২২ সালের এপ্রিলে বর্তমান ক্ষমতাসীন পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ও এর রাজনৈতিক মিত্রদের নেতৃত্বে অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হন ইমরান খান। তখন তিনি লু এর বিরুদ্ধে তাকে সরানোর অভিযোগ আনেন।
২০২২ সালের ২৭ মার্চ এ নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে ওঠে। ইমরান খান তখন একটি বিশাল জনসভায় দাবি করেন, তাকে সরানোর জন্য গোপন চিঠি পাঠানো হয়েছিল পিএমএল-এন এর কাছে। এর সঙ্গে জড়িত লু। ইমরান খান বলেন, লু তার সরকারকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করেছিলেন। ইমরান লু ও যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানের তখনকার রাষ্ট্রদূত আসাদ মজীদ খানের মধ্যে এক আলোচনাকে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করেন।
এই আলোচনা ‘সাইফারগেইট’ নামে পরিচিত। এটি ছিল একটি কূটনৈতিক তারবার্তা। এটি পাকিস্তানের রাজনীতিতে বিদেশি হস্তক্ষেপের অভিযোগে খানের বৃহত্তর বক্তব্যের কেন্দ্রীয় অংশ হয়ে ওঠে। খানের অভিযোগের পর, পিটিআই সমর্থকেরা যুক্তরাষ্ট্রে লুর পদত্যাগের দাবি জানাতে শুরু করেন এবং তাকে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে অপসারণের ষড়যন্ত্রের জন্য অভিযুক্ত করে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে পিটিআইর সমাবেশগুলোতে এ দাবি জোরাল হয়। এ বিষয়টি মার্কিন সরকারের ওপর রাজনৈতিক চাপ বাড়িয়ে তোলে।
যদিও যুক্তরাষ্ট্র সরকার অভিযোগগুলো দৃঢ়ভাবে নাকচ করেছে এবং সেগুলোকে ভিত্তিহীন বলে অভিহিত করেছে। ওই সময় লু নিজেও এ দাবি অস্বীকার করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এ দাবি সম্পূর্ণ ভূয়া।
তখন থেকেই মার্কিন প্রশাসন থেকে লু’র পতদ্যাগ দাবি করে আসছিলেন পিটিআিই নেতাকর্মীরা। তবে শেষমেস লু’র মেয়াদ শেষ হলেও তাকে বরখাস্ত করা হয়নি।
ডোনাল্ড লু এর আগে দক্ষিণ এশিয়ার নেপাল ও শ্রীলংকায় মার্কিন স্বার্থ রক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মার্কিন সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
তিনি ২০১০-২০১৩ সালের মধ্যে ভারতেও মার্কিন মিশনের ডেপুটি চিফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পরবর্তীতে তিনি পশ্চিম আফ্রিকায় ইবোলা সংকট মোকাবেলায় দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৫-১৯ সাল পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহেকে পুনরায় ক্ষমতায় আনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।