দীর্ঘ ১৭ বছর নির্বাসিত জীবন শেষে দেশে ফিরেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে তাকে বহনকারী বিমান ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। তার প্রত্যাবর্তনে নেতাকর্মীসহ দেশবাসীর মধ্যে উচ্ছ্বাস তৈরি হয়েছে। তিনি প্রমাণ করে দিয়েছেন, জনগণের ভালোবাসা আর আদর্শের জোরে চাইলেই সবকিছু জয় করা সম্ভব।
তারেক রহমানের মতো যুগে যুগে বহু বিশ্বনেতা প্রমাণ করেছেন, নির্বাসন মানেই বিলুপ্তি নয়। এই তালিকায় রয়েছে লেনিন, ম্যান্ডেলা, খোমেনি ও বেনজির ভুট্টোর মতো নেতার নাম। দীর্ঘদিনের নির্বাসনের পর দেশে ফিরে মানুষের মন জয় করে নিয়েছেন এই বিশ্ব নেতারা।
ইতিহাসে এমন ঘটনার অনেক নজির রয়েছে।
বেনজির ভুট্টো
জেনারেল জিয়াউল হকের সামরিক শাসনামলে রাজনৈতিক নিপীড়নের মুখে বেনজির ভুট্টো আশির দশকে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। যুক্তরাজ্যে অবস্থান করে তিনি পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতৃত্ব ও আন্দোলন অব্যাহত রাখেন। জিয়াউল হক সরকারের পতন ও সামরিক শাসনের অবসানের পর দেশে ফিরে নির্বাচনে অংশ নেন বেনজির। ১৯৮৮ সালে নির্বাচনে জয়ী হন তিনি। এরপর মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হন। ১৯৯৩ সালেও তিনি আবার ক্ষমতায় আসেন।
রুহুল্লাহ খোমেনি
বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর মুসলিম রাষ্ট্র ইরানে শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভির শাসনের বিরুদ্ধে অবস্থানের কারণে ১৯৬৪ সালে রুহুল্লাহ খোমেনিকে দেশ ছাড়া করা হয়। তিনি তুরস্ক, ইরাক ও পরে ফ্রান্সে নির্বাসিত জীবন কাটান। বিদেশে থেকেই বক্তৃতা, বার্তা ও ধর্মীয় নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আন্দোলন চালিয়ে যান।
১৯৭৯ সালে গণআন্দোলনের মুখে শাহ দেশত্যাগ করলে খোমেনি ইরানে ফিরে আসেন। দ্রুতই বিপ্লবের কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন এবং ইসলামি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন।
ভ্লাদিমির লেনিন
জার শাসনের বিরুদ্ধে বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের কারণে বারবার গ্রেপ্তার হন রাশিয়ার ভ্লাদিমির লেনিন। একপর্যায়ে সাইবেরিয়ায় তিনি নির্বাসিত হন। পরে দীর্ঘ সময় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করেন। নির্বাসনেই তিনি বলশেভিক মতাদর্শ গড়ে তোলেন।
১৯১৭ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের চাপে রাশিয়ায় রাজনৈতিক ভাঙন শুরু হলে জার্মানির সহায়তায় ‘সিল করা ট্রেনে’ করে লেনিন রাশিয়ায় ফিরে আসেন। সে বছরই অক্টোবরে বলশেভিক বিপ্লবের মাধ্যমে অস্থায়ী সরকারকে উৎখাত করেন এবং সোভিয়েত রাষ্ট্রের নেতৃত্বে আসেন।
নেলসন ম্যান্ডেলা
নেলসন ম্যান্ডেলা বিশ্বে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের এক উজ্জ্বল নাম। যে কারণে ১৯৬২ সালে গ্রেপ্তার হন তিনি। ১৯৬৪ সালে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। প্রায় ২৭ বছর তিনি কারাগারে কাটান। আন্তর্জাতিক চাপ ও অভ্যন্তরীণ আন্দোলনের মুখে বর্ণবাদী শাসন দুর্বল হলে ১৯৯০ সালে মুক্তি পান ম্যান্ডেলা।
তিনি শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে বর্ণবাদী ব্যবস্থার অবসান ঘটান এবং ১৯৯৪ সালের প্রথম বহুজাতিক নির্বাচনে জয়ী হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হন।
শীর্ষনিউজ